চয়ন সাহিত্য ক্লাবের ত্রয়োদশ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে অনুষ্ঠিতব্য ‘স্বর্ণপদক ও সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে শনিবার বাংলানিউজ কার্যালয়ে আসেন ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লিলি হক। এ সময় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও চয়ন সাহিত্য ক্লাবের কার্যক্রম এবং এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলতে এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি।
সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি লিলি হক কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখছেন অনেকদিন ধরে—ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ২৪টি মৌলিক বই। এছাড়াও তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় সাড়ে নয়শ’।
নিজের লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের নাম জানতে চাইলে তিনি—অরণ্য আমার অরণ্য, মধ্যরাতের খোলা চিঠি, আকাশ আমি ভালো নেই, তোমরা সবাই কেমন আছো, আধো ফোটা গোলাপ আমার এবং প্রফেসর কবির চৌধুরী অনূদিত ‘সিলেক্টেড পোয়েমস বাই লিলি হক’ প্রভৃতি বইয়ের কথা উল্লেখ করেন। এসময় তিনি জানান, শুধু নিজে লিখেই নয়, দেশে নতুন লেখক তৈরিতেও তিনি সমানভাবে অবদান রেখে যাচ্ছেন।
লিলি হক বলেন, ‘চয়ন সাহিত্য ক্লাব একটি নিয়মিত সাহিত্য আসর পরিচালনা করে আসছে। খ্রিস্টীয় প্রতি মাসের ২০ তারিখে এ আসর বসে। এখানে সদ্য লেখালেখি শুরু করা অনেকেই আসেন, তাদের মধ্যে যারা সম্ভাবনাময়—চয়ন প্রকাশন থেকে তাদের বই প্রকাশ করে থাকি আমরা। এছাড়াও চয়ন সাহিত্য ক্লাব—‘চয়ন’ এবং ‘দশ দিগন্ত’ নামের দুটি সাহিত্য পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে। পত্রিকা দুটিতে লেখালেখি করেও অনেক লেখক তাদের হাত পাকানোর সুযোগ পাচ্ছে। ’
লেখালেখি কবে থেকে শুরু? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেদিন থেকে স্লেট আর চক নিয়ে প্রথম কিছু লিখতে শুরু করি, সেদিন থেকেই। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার মধ্যে একটা ব্যাপার ছিল—সবকিছুকে ছন্দবদ্ধ করে ফেলা। বলতে গেলে সেই শৈশব কৈশোরের দিনগুলো থেকেই আমার লেখালেখি শুরু। ’
আর এ ব্যাপারে আমাকে সবচেয়ে বেশি যিনি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, তিনি আমার বাবা, ভাষা সৈনিক শাহ মোহাম্মদ ওসমান আলী। ’—যোগ করেন তিনি।
কোথায় কেটেছে আপনার শৈশব-কৈশোর?
‘বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হতো আমাদের। তবে, মূলত—নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ ও সিলেটেই আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে। ’
জানতে চাই, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তো আপনি। তের বছর হয়ে গেল, এরমধ্যে নতুন কেউ দায়িত্ব নিল না কেন? মৃদু হেসে বললেন,
‘আমি তো চাই-ই কেউ দায়িত্ব নিক। কিন্তু কেউ-ই রাজি হয় না। সবাই বলে, এই এতসব কাজ, এতকিছু সামলানো—এসব নাকি আমাকে ছাড়া হবে না! আর আমিও ক্লান্ত হই না তো। সাংগঠনিক যত দৌড়াদৌড়ি, কাজ—করতে আমার ভালো লাগে। এসব নিয়েই আছি। ’
লিলি হক জানান, তাঁর সংগঠন থেকে প্রকাশিত বই ও পত্রিকা বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশে নিয়মিত সরবরাহ করা হয়। বললেন, ‘এই তো সেদিন নেপাল থেকে ফোন এলো। দশ দিগন্ত, চয়ন—পত্রিকা দুটোর সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলো গিয়ে পৌঁছেছে। ’
আরও কথা হতে পারত তাঁর সঙ্গে। কিন্তু আসন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তিনি বেশ ব্যস্ত। সবশেষে আবারও আগামী ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে, কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠেয় আয়োজনে উপস্থিত হবার অনুরোধ জানিয়ে, হয়ত আর কোথাও দাওয়াত পৌঁছে দিতে বেরিয়ে পড়েন ষাট ছুঁই ছুঁই বয়সী কবি ও সংগঠক—লিলি হক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৫