নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে কানিজ। আগামীকাল ওকে খুন করব আমি।
কানিজ আমার স্ত্রী। প্রেমের বিয়ে আমাদের। অবশ্য আমার জন্যে ওটা ছিল শুধুই লাভের হিসেব। কানিজের বাবা রেলওয়ের বড় অফিসার ছিলেন। বলাবাহুল্য, ঘুষের টাকায় বেশ জায়গা-জমি করেছেন। কানিজ ছিল ভদ্রলোকের একমাত্র মেয়ে। হাবা-গোবা মেয়ে। পটাতে সময় লেগেছিল মাত্র দু’সপ্তাহ। একমাসের মাথায়ই কানিজ আমাকে পালিয়ে বিয়ে করেছিল। প্রথমে গররাজি থাকলেও একমাত্র আদরের মা-মরা মেয়ে বলে কানিজের বাবা বিয়েটা মেনে নিয়েছিলেন। পরে তিনি আমাকে নিজের গরজেই একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরি পাইয়ে দিয়েছিলেন। চাকুরিটা আমি আজও করছি। কিন্তু বজ্জাত বুড়োটা আমাকে মোটেও ভালো চোখে দেখত না। সামনাসামনি হলেই মুখ উদাস করে কথা বলত। বুঝতে অসুবিধে হতো না, আমাকে অপছন্দ করে। তবে বেশিদিন বাঁচেনি। আমাদের বিয়ের ছ’মাস পরেই নরকে গেছেন ভদ্রলোক। হ্যাঁ, নরকেই গেছেন। আমার হিসেবে ঘুষখোররা নরকেই যাবে। কারণ সারা দেশের মানুষ নিশ্চয়ই কোন ঘুষখোরকে হাসিমুখে মাফ করে দেবে না?
অপরাধের কথাই যদি বলতে চাই, তাহলে কানিজকে খুন করাও খানিকটা অপরাধ। পুরোপুরি অপরাধ নয়। কানিজ খুবই সাধারণ একটি নারী। ওর বেঁচে থাকায় কারও কোনও লাভ বা ক্ষতি হবে না। বেঁচে থাকলে বরং দীর্ঘকাল একঘেঁয়ে জীবন কাটাতে হবে তাকে। কানিজ জানেই না কী করে বাঁচতে হয়। এমনিতে সে লক্ষ্মী গৃহিণী। সেদিক থেকে ওর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই আমার। কিন্তু বিছানায় কানিজ একদম কাঠ হয়ে থাকে। যেন একটা প্রাণহীন পুতুল। আর দাম্পত্য জীবনের ওই পার্টটা তার বেশ অপছন্দের। দায়সারাভাবেই সারতে চায় ব্যাপারটা। এটা আমি পছন্দ করি না। তাই বিরক্তিতে দীর্ঘদিন হয় ওকে ছুঁয়েও দেখি না। শরীর জেগে উঠলে কিছু চেনা মেয়ের কাছে ধর্ণা দিই। প্রফেশনাল মেয়ে না। আজকাল কলেজ-ভার্সিটির কিছু মেয়ে সো-কল্ড স্ট্যান্ডার্ড লাইফ লিড করতে গিয়ে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করে। ওদের কাছেই যাই। টাকাটা একটু বেশি নিলেও ভালোই পুষিয়ে দেয় ওরা।
যাই হোক শেষ পর্যন্ত কানিজকে মরতেই হবে। কানিজ মরলে দুটো লাভ আমার। ওর সব সম্পত্তির মালিক হব আমি। তবে ওটুকুতেই থেমে যাবার বান্দা আমি নই। আমাকে নমিনি করে মোটা টাকার লাইফ ইন্সুরেন্সও আছে ওর নামে। ও মরলে সেই টাকাটাও পাব। মূলত ইন্সুরেন্সের টাকাটা পাবার জন্যেই ওকে এমনভাবে খুন করতে হবে—যাতে মনে হয় ওটা দুর্ঘটনা। দীর্ঘদিন ভেবে একটা নিখুঁত প্ল্যান করেছি। আমার জীবনের প্রথম খুন হতে যাচ্ছে এটা। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এগিয়েছি। কানিজের মৃত্যুর পর কেউ যাতে ভুল করেও আমাকে সন্দেহ না করে এই বিষয়টা মাথায় রেখেছি বরাবরই। ভুলেও কিছু গড়বড় হয়ে যাবার আশংকা নেই। আগেই বলে রেখেছি কানিজকে, আগামীকাল আমরা বেড়াতে যাব। আমার শ্বশুরের কিনে দেয়া টয়োটা করোলাটা নিয়ে। কানিজ খুশিমনেই বেরুবে। সে বেড়াতে ভালোবাসে। আর হুট করে বেড়ানোর কথা শুনে কোনও সন্দেহ করেনি। কারণ আগামীকাল আমাদের বিবাহবার্ষিকী।
একদম সকাল করেই বেরুব। ও যা খেতে ভালোবাসে তা খাওয়াব, যেখানে বেড়াতে ভালোবাসে, সেখানে নিয়ে যাব। মৃত্যুর আগে মানুষের সব ইচ্ছে পূরণ করা উচিৎ। ওর শখ পূরণ করে ওকে নিয়ে যাব নির্ধারিত জায়গাটায়। ওটা অনেক কষ্টে খুঁজে পেয়েছি। প্রায় ষাট গজ লম্বা একটি ব্রিজ। বিশ ফুট নিচে টলটলে স্বচ্ছ লেকের পানি। প্ল্যানটা পানির মতো সরল। তীব্র গতিতে গাড়ি নিয়ে ব্রিজের ওপর উঠব। ব্রিজের মাঝামাঝি এসে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দেব ব্রিজের রেলিংয়ের দিকে। মুহূর্তেই গাড়িটা রেলিং ভেঙে লাফিয়ে পড়বে পানিতে। রেলিংটা আমি পরীক্ষা করেছি। একদম পলকা। গাড়ির নাকের হালকা গুঁতোতেই ভেঙে পড়বে। নিচে লেকটা একশ ফুটের মতো গভীর। গাড়ি থেকে কানিজ সহসা বেরুতে পারবে না। ওকে আগেই সিট বেল্ট বেঁধে নিতে বলব।
লেকের পানিতে কোনও গাড়ি পড়ে তলিয়ে যেতে প্রায় মিনিট দুই সময় নেবে। ততক্ষণে যদি অ্যাকসিডেন্টের ধাক্কায় কেউ জ্ঞান না হারায়ও তবু সিট বেল্ট খুলে বেরিয়ে আসতে আসতে আরও ত্রিশ সেকেন্ড পেরিয়ে যাবে। তারপর একশ’ ফুট গভীর থেকে যদি কেউ সাঁতরে উঠে আসতে চায় তাতে সময় লাগবে প্রায় দেড়- দুই মিনিট। মোট তিন মিনিটে সারফেসে উঠে আসা সম্ভব, যদি মাথা ঠাণ্ডা রাখা যায় আর যদি ততক্ষণ দম থাকে। এই হিসেবটা অবশ্য আমার নিজের জন্য করা। কানিজের জন্যে এই হিসেব কোনও কাজে আসবে না। সে সাঁতার জানে না। পানিতে তলিয়ে যাবার পর সে পাগলের মতো হয়ে যাবে। প্রথমেই বুক ভরে শ্বাস নিতে চাইবে। কিন্তু তাজা অক্সিজেনের বদলে হৃৎপিণ্ডে ঢুকবে পানি। এরপর ধীরে ধীরে হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প করা থামিয়ে দেবে আর গুরুত্বপূর্ণ অর্গানগুলোতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে অক্সিজেনের অভাবে ত্বক নীলচে হয়ে উঠবে। বিশেষ করে ওর প্রজাপতির মতো সুন্দর ঠোঁট। তারপর একসময় নিথর হয়ে যাবে শরীর।
এই প্ল্যানে আমার কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তবে এটাকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর জন্যে ওই ঝুঁকিটা নিতেই হবে। এজন্যে আমি প্রস্তুতও। আমার মেদহীন শরীর। নিয়মিত ব্যায়াম করি। সিগারেট খাই না। তাই আমার ফুঁসফুঁস যথেষ্ট ভালো। প্রায় পাঁচ মিনিট পর্যন্ত দমবন্ধ করে রাখার অভ্যেস করেছি বাথটাবে মাথা ডুবিয়ে। ভালো সাঁতারও জানি আমি। অ্যাকসিডেন্টের পর গাড়ি থেকে বেরিয়ে সারফেসে উঠে আসাটা আমার জন্যে সহজ কাজ। সারফেসে উঠে আসার পর কিছু অভিনয় করতে হবে। ততক্ষণে নিশ্চয়ই মানুষের ভিড় জমে যাবে অ্যাকসিডেন্ট দেখে। সবার সামনে পাগলের মতো বেশ কিছু ডুব দেব স্ত্রীকে তুলে আনার চেষ্টা দেখাতে। যখন নিশ্চিত হব কানিজ মারা গেছে, তখন তুলে আনব ওর মৃতদেহ। তারপর বুকফাটা আর্তনাদ করে কাঁদব।
মনে মনে আগাগোড়া প্ল্যানটা ভেবে নিয়ে কানিজের দিকে তাকালাম। ঘুমোচ্ছেই সে। ঠোঁটের কোণে হাসি। নিশ্চয়ই কোনও সুখ স্বপ্ন দেখছে। দেখুক। মৃত্যুর আগে কিছু সুখ স্বপ্ন দেখে নিক। অন্যপাশে ফিরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।
দুই |
সকালে ঘুম ভেঙে দেখি কানিজ তৈরি হয়ে বসে আছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে হেসে বলল, ‘হ্যাপি ম্যারেজ ডে!’
পাল্টা হেসে জবাব দিলাম, ‘হ্যাপি ম্যারেজ ডে!’
‘ঘুম থেকে উঠতেই দশটা বাজিয়ে দিয়েছো। বেরুবে কখন?’
‘আধঘণ্টা সময় দাও। রেডি হয়ে নিচ্ছি। ’
বাথরুমে গিয়ে একেবারে শাওয়ার নিয়ে বেরুলাম। শাওয়ারের ফাঁকে আমার প্ল্যানটা শেষবারের মতো আগাগোড়া ভেবে নিয়েছি। বোঝার চেষ্টা করেছি অজান্তে কোথাও কোনও খুঁত থেকে গেছে কিনা। নেই। একদম পাকা প্ল্যান। বেরিয়ে প্রথমে গেলাম পিৎজা হাটে। সেখানে ব্রেকফাস্ট করে গেলাম একটা শপিং সেন্টারে কানিজকে কিছু কিনে দেবার জন্যে। কিছু কিনল না সে। কেবল কিছু জিনিস পছন্দ করে জানাল, পরে কিনে নিয়ে যাবে ওসব। শপিংসেন্টার থেকে বেরিয়ে ফাঁকা রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ঘুরলাম গাড়ি নিয়ে। আজ শুক্রবার বলে অন্যান্য দিনের মতো রাস্তাগুলো ব্যস্ত নয়। বারোটা বাজার পর সেই ব্রিজটার দিকে গাড়ি ঘোরালাম। কানিজ জিজ্ঞেস করল, ‘ওদিকে কী?’
হেসে বললাম, ‘ওদিকে দারুণ একটা রেস্টুরেন্ট আছে। ওখানে লাঞ্চ করব। তারপর সিনেমা দেখতে যাব। ’
‘তারপর?’
‘সেই জায়গাটায় যাব, যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। ’
‘সো নাইস অব ইউ! কিন্তু দুলাল, আমার আজকাল প্রায়ই একটা কথা মনে হয়। ’
সচকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী!’
‘মনে হয়, তুমি আমাকে নিয়ে সুখি না। ’
‘এমন মনে হবার কারণ?’
‘জানি না। তুমি কখনও খারাপ ব্যবহার করো না আমার সাথে। যা চাই সেটা দেবার চেষ্টা করো। অন্য কোনও নারীর প্রতিও আসক্ত নও তুমি। তবু কেন এমন মনে হয় আমার?’
‘বাসায় সারাদিন একা থাকো তাই হয়ত এমন মনে হয়। ’
‘সত্যি করে বলো, তোমার কি এমন মনে হয় যে, আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তুমি আরও বেশি সুখি হতে?’
মৃদু গলায় বললাম, ‘আই অ্যাম হ্যাপি উইথ ইউ অ্যান্ড অলওয়েজ উইল বি। ’
বলতে বলতেই দেখলাম দূরে বিন্দুর মতো ব্রিজটা দেখা যাচ্ছে। হঠাৎই হার্টবিট বেড়ে গেল। নিজেকে বোঝালাম শান্ত হও। সব ভেবে নিয়েছো তুমি। কিছুই গুবলেট হয়ে যাবার ভয় নেই। কানিজের দিকে তাকালাম, নিশ্চিন্তে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজেছে। গাড়ির মসৃণ গতি উপভোগ করছে। ফুরফুরে হাওয়ায় উড়ছে চুলগুলো। টকটকে লাল লং-কামিজ আর সাদা সালোয়ারে দারুণ লাগছে ওকে। ক্ষণিকের জন্য একটু দ্বিধা এলো মনে। কানিজের মৃত্যুর পর ওকে আবার মিস করতে শুরু করব না তো? কোনও খারাপ লাগা বা গ্লানি কি আমাকে প্রতিনিয়ত দংশন করবে? পরক্ষণে গাড়ির চাকা ব্রিজ ছুঁতেই মন শক্ত করে ফেললাম। আমি কঠিন হৃদয় হিসেবী পুরুষ। আমার ওসব কিছুই হবে না।
অন্যকিছু ভাবার ফুসরত নেই আর। গাড়ি ব্রিজের মাঝামাঝি আসতেই স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে দিলাম ডানে। ব্রিজের রেলিংয়ে সংঘর্ষ ঘটার সাথে সাথেই প্রচণ্ড ঝাঁকির সাথে ডান হাতে তীব্র ব্যথা টের পেলাম আর শুনলাম কানিজের আতংকিত চিৎকার। সামলে নিতে না নিতেই ঝুপ করে এসে পড়লাম গাড়ি সমেত লেকের পানিতে। আরও একটা তীব্র ঝাঁকি। ডান হাতে যেন আগুন ধরে গেল। পানিতে পড়েই গাড়িটা লেকের তলায় এসে ঠেকল দ্রুত। নিজেকে মুক্ত করে বেরিয়ে আসতে চেয়ে দেখলাম আঁটকে গেছি।
ব্রিজের রেলিং যতটা ভঙ্গুর মনে করেছিলাম ততটা ভঙ্গুর ছিল না। রেলিং ভেঙে গাড়িটা ছিঁটকে বেরিয়ে আসার মুহূর্তে ডানের ভাঙা রেলিংয়ের প্রচণ্ড চাপে দরজা ভেতরের দিকে বেঁকে গিয়ে আমার ডান হাত আঁটকে গেছে। কোনওভাবেই মুক্ত করতে পারলাম না। বরং তীব্র ব্যথায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখলাম। বামহাতে সিটবেল্ট খুলে পাগলের মতো টানাটানি করে দেখলাম কিছু মুহূর্ত। লাভের লাভ কিছুই হলো না। বরং অতি প্রয়োজনীয় কিছু অক্সিজেনের অপচয় হলো কেবল। বুঝতে পারলাম কারও সাহায্য ছাড়া হাতটা মুক্ত করা অসম্ভব। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই কানিজের দিকে তাকানোর ফুসরত পাইনি। এখন অসহায়ের মতো ওর দিকে তাকালাম এবং চমকে উঠলাম। কানিজ নিজের দিকের দরজা খুলে বেরিয়ে জলপরীর মতো সাঁতরে ঘুরে আসছে আমার দরজার দিকে!
দরজার কাছে এসে বাঁকানো দরজাটা নিজের ক্ষুদ্র শক্তি দিয়ে খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করল। দরজা খোলা যাবে না বুঝতে পেরে আমাকে ইশারা করল অন্যদিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসতে। ইশারায় বোঝালাম আমার ডানহাত আঁটকে গেছে নড়তে পারছি না। দেখেই বুঝতে পারছিলাম, কানিজ আর বেশিক্ষণ দমবন্ধ করে রাখতে পারবে না। বড়জোর একমিনিট। এতক্ষণে অবশ্য দুইমিনিট পেরিয়ে গেছে। কানিজ বৃথাই আমাকে নিয়ে টানাটানি করল কিছু মুহূর্ত। বামহাতে ওকে সরিয়ে দিয়ে ইশারায় বোঝালাম, আমি মুক্ত হতে পারব না। উপরে গিয়ে বরং সাহায্য নিয়ে আসার চেষ্টা করো জলদি। কানিজ নিতান্ত অনিচ্ছায় উপরের দিকে উঠল দ্রুত। আড়ষ্ট ভঙ্গি দেখে বুঝলাম আমাকে ছেড়ে যেতে মন চাইছে না ওর।
আমার পুরো প্ল্যানটাই মস্ত ভুল ছিল। আমি জানতাম কানিজ সাঁতার জানে না। একবার কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে ওকে টেনে-হিঁচড়েও পানিতে নামাতে পারিনি। ওর অনীহা দেখে ধরেই নিয়েছিলাম সাঁতার না জানায় পানিকে ভয় পায়। কিন্তু এখন বুঝলাম চমৎকার সাঁতরায় ও। অবশ্যই কানিজকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্তটাও ভীষণ ভুল ছিল। মেয়েটা আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে। ওর চোখে আতংক দেখেছি আমি। তবে আতংকটা নিজের মৃত্যু ভয়ে নয়। আমাকে হারানোর ভয়ে। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম কানিজ তেরছা ভঙ্গিতে এখনও উঠে চলেছে উপরের দিকে। যেন এক লাল জলপরী সাঁতরে যাচ্ছে জল কেটে। আমি জানি কানিজ সারফেসে উঠেই মানুষ যোগাড় করার চেষ্টা করবে আমাকে বাঁচাতে। সে জানে না, আমি খুন করতে চেয়েছি ওকে। কে জানে, হয়ত জানলেও আমাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করত সে। কারণ, যে ভালোবাসে সে কোনও হিসেব কষে না। শুধুই ভালোবাসে। সব বিপদ-ক্ষতি উপেক্ষা করেই ভালোবাসে।
কানিজ যদি সাহায্য নিয়ে ফিরেও আসে তবু আমাকে বাঁচাতে পারবে না। আমি আর সর্বোচ্চ একমিনিট টিকব। এমনিতেও টের পাচ্ছি আমার হার্টবিট প্রতিবারে কমছে। অক্সিজেনের অভাবে যেন আগুন ধরে গেছে হৃৎপিণ্ডে। শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি ধীরে ধীরে। ভয়ানক আতংক চেপে ধরছে আমাকে। শরীরের ত্বক নীলচে হতে শুরু করেছে।
আর কয়েকটা মুহূর্ত মাত্র। তারপরই সব শেষ! চোখ বন্ধ করে পেশি শিথিল করে দিলাম। এখন কিছুই করার নেই। নিজের তৈরি মৃত্যুফাঁদে নিজেই আঁটকে গেছি। সব অস্থিরতা, আতংক ঝেড়ে ফেলে আমি শান্ত মনে অপেক্ষা করতে লাগলাম নীরব, শীতল মৃত্যুর জন্যে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৫