১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ২৬তম কিস্তি
___________________________________
কখনও এও হয়েছে, তারা পার্টির বিরুদ্ধে সক্রিয় বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়ার কথা ভেবেছে, কিন্তু এর পয়লা পদক্ষেপটিই কী হবে সে নিয়ে কোনও ধারণা নেই। এমনকি ব্রাদারহুডের যদি আদৌ কোনও অস্তিত্ব থাকে, তার জন্যও কোন পথে এগুতে হবে সে এক কঠিন চিন্তা। এরই মধ্যে ও’ব্রায়েনের সঙ্গে তার যে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, কিংবা রয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায় সে কথাটিও জুলিয়াকে জানিয়েছে উইনস্টন। এছাড়াও কোথাও ও’ব্রায়েনের উপস্থিতিই যে বলে দেয় সে আসলে পার্টির লোক নয়, বরং শত্রু—আর সে তার সহযোগিতা চায়, এমন ভাবনার কথাগুলোও বলেছে।
কৌতূহলের দিক হচ্ছে, এসব কোনও কিছুই তার কাছে ভয়াবহ কোনও কাজ বলে মনে হয়নি। মানুষকে সেও চেহারা দিয়ে বিচার করে, আর সে কারণেই স্রেফ চোখের একটি চাহনির ওপর ভিত্তি করে উইনস্টন যেভাবে ও’ব্রায়েনকে বিশ্বাসযোগ্য বলে ধরে নিয়েছে তা তার কাছে স্বাভাবিকই ঠেকেছে। উপরন্তু সে মনে করে, সকলেই কিংবা প্রায় সকলেই গোপনে পার্টিকে ঘৃণা করে আর যখনই নিরাপদ বোধ করে পার্টির নিয়ম ভাঙে।
তবে সংগঠিত সুবিস্তৃত কোনও বিরোধী শক্তি আছে কিংবা থাকতে পারে এমনটা সে মানতে নারাজ। গোল্ডস্টেইন ও তার গোপন সেনা দল, তার মতে, নিছকই পার্টির সৃষ্ট কিছু ফালতু প্রচারণা। পার্টি নিজের প্রয়োজনে, উদ্দেশ্য হাসিলে এগুলো সৃষ্টি করে আর তোমাকে তা বিশ্বাস করিয়ে ছাড়ে। অসংখ্যবার পার্টির মিছিলে, তাৎক্ষণিক বিক্ষোভে সে তারস্বরে চিৎকার করে সেইসব মানুষের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে যাদের নামটিও কখনও শোনেনি, আর তাদের তথাকথিত অপরাধেও তার নেই সামান্য বিশ্বাস।
গণবিচারগুলোতে ইয়ুথ লিগের চ্যালারা যখন সকাল থেকে রাত অবধি আদালত ঘিরে অবস্থান নেয় আর থেমে থেকে চিৎকার করে ‘ষড়যন্ত্রীর ফাঁসি চাই!’ তখন সেও একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। দুই মিনিটের ঘৃণা কর্মসূচিতে অন্যদের সঙ্গে সেও গোল্ডস্টেইনের অপমানে চিৎকার করে ঠিকই কিন্তু গোল্ডস্টেইন কে আর কোন নীতিরই সে প্রতিনিধিত্ব করছে—সে বিষয়ে তার ধারণা অতীব ক্ষীণ। বিপ্লবের পরেই তার বেড়ে ওঠা আর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যে আদর্শিক সংগ্রাম চলেছে তা মনে রাখার মতো বয়স তার ছিল না।
একটি স্বাধীন রাজনৈতিক অন্দোলনের মতো ঘটনা তার কল্পনারও অতীত; আর যেভাবেই হোক এটাই তার বদ্ধমূল ধারণা যে পার্টি অজেয়। পার্টি থাকবে, আর সদাই একইরকম থাকবে। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের একটিই পথ তা হচ্ছে গোপন অবজ্ঞা, আর অমান্য করে যাওয়া, অথবা সর্বোচ্চ যা হতে পারে তা হচ্ছে বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতা ঘটিয়ে চলা, যেমন কাউকে হত্যা করা অথবা কিছু একটা উড়িয়ে বা ধ্বংস দেওয়া।
পার্টির প্রচারণার কোনওটিতে তার অবিশ্বাস উইনস্টনের চেয়ে অনেক তীব্র আবার কোনওটি গ্রহণ করে নিতে উইনস্টনের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে। একদিন ইউরেশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে কথা হচ্ছিল, সেদিন তাকে চমকে দিয়ে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় জুলিয়া বলে ফেলল, তার বিশ্বাস যুদ্ধটা হচ্ছেই না। প্রতিদিন লন্ডনে যেসব রকেট বোমা পড়ছে, ওগুলো যথেষ্ঠই সম্ভব যে ওশেনিয়ার সরকার নিজেই ফেলছে। আর তা স্রেফ মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে রাখার জন্যই করছে।
এমন একটি ভাবনা উইনস্টনের মধ্যে কখনওই আসে নি। এছাড়াও তাকে অনেকটা ইর্ষান্বিত করে দিয়ে জুলিয়া বলল, দুই মিনিটের ঘৃণা কর্মসূচিগুলোতে তার কাছে যা সবচেয়ে কঠিন মনে হয় তা হচ্ছে, এই চিৎকার আর হাসাহাসিতে অংশ না নিয়ে না পারাটা। তবে পার্টির এইসব শিক্ষার বিরুদ্ধে সে তখনই প্রশ্ন তোলে যখন তা তার ব্যক্তিজীবনের ওপর এসে পড়ে।
দ্বিতীয় খণ্ডের ২৮তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।