ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২৮) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২৮) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ২৭তম কিস্তি
___________________________________

কখনও কখনও সে সরকারি মিথগুলো মেনে নিতেও রাজি থাকে, কারণ সত্য আর মিথ্যার মধ্যে যে ফারাক তার কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ মনেই হয় না। উদাহরণস্বরূপ, স্কুল থেকেই সে জেনে এসেছে, পার্টি উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেছে, আর তাতেই তার বিশ্বাস। (উইনস্টন স্মরণ করতে পারে, পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে তার নিজের স্কুলের দিনগুলোতে পার্টি দাবি করেছিল, তারা হেলিকপ্টার আবিষ্কার করেছে। তার কয়েক ডজন বছর পেরিয়ে, যখন জুলিয়া স্কুলে যায় তখন পার্টির দাবি উড়োজাহাজ আবিষ্কারের; হতে পারে আরেক প্রজন্ম পার করে কী জানি বাষ্প-ইঞ্জিন আবিষ্কারের কৃতিত্বও পার্টিই নিয়ে নেয় কি না। )  আবার জুলিয়াকে যখন সে জানায় তার জন্মেরও আগে, বিপ্লবের অনেক অনেক পূর্বে উড়োজাহাজ আবিষ্কৃত হয়েছে, তখন সেই সত্য তার কাছে কোনও আগ্রহই তৈরি করে না। এটা ঠিক, কে উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেছে তাতে কী-ই যায় আসে? তবে সত্যিই একটা ঝাঁকুনি লাগে যখন জুলিয়ার কিছু মন্তব্য থেকে বুঝতে পারে, মাত্র চার বছর আগে ওশেনিয়া যে পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল আর ইউরেশিয়ার সঙ্গে ছিল শান্তির সম্পর্ক—সেকথাও সে বেমালুম ভুলে বসে আছে।



এটা সত্য, গোটা যুদ্ধটাকেই সে প্রতারণা বৈ কিছু মনে করে না, এখন মনে হচ্ছে শত্রুপক্ষ যে পাল্টে গেছে সেটার খোঁজও সে রাখে না। ‘আমি ভেবেছিলাম আমরা বরাবরই ইউরেশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছি’—গুরুত্বহীনভাবেই বলল সে। এতে কিছুটা আতঙ্ক বোধ করল উইনস্টন। উড়োজাহাজ আবিষ্কারের ঘটনা তার জন্মের অনেক বছর আগের, কিন্তু যুদ্ধের বিষয়টি তো ঘটে গেছে মোটেই চার বছর আগে। তখন সে পুরোই বড় হয়ে উঠেছে। উইনস্টন এ নিয়ে তার সঙ্গে প্রায় পনের মিনিট ধরে যুক্তিতর্ক দিল। আর অবশেষে সে সফল হলো তার স্মৃতিতে জোর করে হলেও কিছু ঘটনা টেনে আনতে। আর সে হালকা করে হলেও মেনে নিল একটা ইউরেশিয়া নয়, শত্রুপক্ষ ছিল পূর্ব এশিয়া। তবে তারপরেও এই বিষয় থোরাই গুরুত্ব পেল তার কাছে। ‘কে পাত্তা দেয়?’—অধৈর্যের উচ্চারণ জুলিয়ার। ‘সব সময়ই একের পর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, আর মানুষ জানে এসব খবরই মিথ্যা। ’

রেকর্ড ডিপার্টমেন্টে তার নির্লজ্জ প্রতারণামূলক কাজগুলো নিয়েও জুলিয়ার সঙ্গে মাঝে মধ্যে কথা হয়। এ বিষয়গুলোও তাকে আতঙ্কিত করে না। মিথ্যাগুলোর এমন সত্যায়নের যে বেসাতি চলছে তা নিয়ে তার ভাবান্তর নেই। সে তাকে জোন্স, অ্যারোনসন, আর রাদারফোর্ডের গল্পও শোনালো, তার হাতে পড়ে যাওয়া সেই এক খণ্ড কাগজের কথাও বলল। এসব কিছুতেই তার মধ্যে কোনও অভিব্যক্তি তৈরি হলো না। এমনকি প্রথম শুনে সে বিষয়টির গুরুত্বই অনুধাবন করতে পারে নি।

‘ওরা কি তোমার বন্ধু ছিল?’—বলল জুলিয়া।
‘না আমি ওদের চিনতাম না। ওরা ছিল ইনার পার্টির সদস্য। পাশাপাশি, ওরা আমার চেয়ে বয়সেও অনেক বড় ছিল। ওরা পুরনো দিনের মানুষ, বিপ্লবেরও আগের। ওদের কদাচই সামনাসামনি দেখেছি আমি। ’
‘তাইলে ওদের নিয়ে উদ্বেগের কী আছে? অহরহ মানুষ হত্যা চলছে, বলো চলছে না?’

সে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করল। ‘এটি একটি ভিন্ন বিষয়। এটি স্রেফ কেউ একজনকে হত্যা করা হলো, এমন বিষয় নয়। তুমি বুঝতে পারো, গতকাল থেকে শুরু হয়েছে যে অতীত, তা মূলত বিলুপ্ত? যদি সে অতীত কোথাও টিকে থাকে, তা স্রেফ কিছু খাঁটি বস্তুতে, তার সঙ্গে কোনও বক্তব্য জুড়ে থাকছে না, ঠিক ওই কাচের তৈরি গোলাকার বস্তুটির মতো। এরই মধ্যে বিপ্লব এবং বিপ্লবের আগেকার কথার প্রায় সবটাই আমাদের অজানা হয়ে গেছে। প্রতিটি নথিই হয় ধ্বংস করা হয়েছে নয়ত মিথ্যায়নে সিদ্ধ, প্রতিটি বই নতুন করে রচিত হয়েছে, প্রতিটি ছবি নতুন করে আঁকা হয়েছে, প্রতিটি মূর্তি, প্রতিটি সড়ক, প্রতিটি ভবন নতুন নাম পেয়েছে, প্রতিটি তারিখ বদলে দেওয়া হয়েছে। আর সে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে দিনের পর দিন, মিনিটের পর মিনিট। ইতিহাস থেমে গেছে। একটি অসীম বর্তমান ছাড়া কোনও কিছুই আর টিকে নেই, আর সেই বর্তমানটাই এমন যেখানে পার্টিই সদা সঠিক।

দ্বিতীয় খণ্ডের ২৯তম কিস্তির লিংক

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।