১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ২৯তম কিস্তি
___________________________________
অধ্যায় ৬ |
অবশেষে ঘটনাটি ঘটল। প্রত্যাশিত বার্তাটি পৌঁছুল। গোটা জীবন ধরেই, বলা যায়, এমন কিছুর অপেক্ষা ছিল তার।
মন্ত্রণালয়ের লম্বা কোরিডোর ধরে হেঁটে যাচ্ছে। সেবার জুলিয়া যেখানে হোঁচট খেয়েছিল ঠিক তার কাছাকাছি যখন পৌঁছায় তখনই মনে হলো তার চেয়ে গায়ে-গতরে বড়সড়ো হবে এমন কেউ একজন ঠিক পিছনে। গলা খাকরির শব্দ কানে এলো। মনে হলো যিনি শব্দ করছেন তিনি কথা বলতে চান। উইনস্টন থামল আর ঘুরে তাকাল। ইনি ও’ব্রায়েন।
অবশেষে তারা মুখোমুখি, আর তার চেতনা ততক্ষণে বুঝি পুরোই উবে যাচ্ছে। হৃদযন্ত্রের ধুকপুকানি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মুখে কথা সরছে না। ও’ব্রায়েন অবশ্য যে ভঙ্গি আর গতিতে হাঁটছিলেন সেটাই বজায় রেখে এগিয়ে এলেন। উইনস্টনের বাহুতে তার একটি বন্ধুত্বের হাত এক লহমার জন্য পড়ল আবার সরে গেল। এবার দুজন পাশাপাশি হাঁটছে। তিনিই কথা বলতে শুরু করলেন যাতে মিশে আছে পুরোনো সেই অদ্ভুত সৌজন্যতা, ঠিক যা তাকে পার্টির অন্য সদস্যদের চেয়ে আলাদা করে রাখে।
‘তোমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুঁজছিলাম’—বললেন তিনি। সেদিন ‘দ্য টাইমসে’ তোমার নিউস্পিক নিয়ে আর্টিকেলগুলোর একটি পড়লাম। তখন থেকেই মনে হচ্ছিল তোমার সঙ্গে কথা বলব। আমার ধারণা, নিউস্পিকের বিষয়ে তুমি কিছুটা পাণ্ডিত্যের আগ্রহ নিয়েছো।
উইনস্টন ততক্ষণে কিছুটা নিজেতে ফিরেছে। ‘পাণ্ডিত্যের কিছু নয়’—বলল সে। ‘আমি একজন নবীশ মাত্র। আর ওটি আমার বিষয়ও নয়। ভাষার সত্যিকারের কাঠামো নিয়ে আমার কখনওই কিছু করা হয়নি। ’
‘কিন্তু তুমি অত্যন্ত সুচারুভাবেই বিষয়টি লিখেছো’—বললেন ও’ব্রায়েন। ‘আর সেটা কেবল আমার একার মত না। সম্প্রতি এ নিয়ে তোমার এক বন্ধুর সঙ্গেও আমার কথা হয়, আর সে তো নিঃসন্দেহে একজন বিশেষজ্ঞ। তবে নামটা এখন ঠিক ভুলে গেছি। ’
আবারও ব্যথা ধরিয়ে লাফাতে লাগল উইনস্টনের হৃদযন্ত্র। তার মনে হলো রেফারেন্সের এই নামটি সাইম ছাড়া অন্য কারও হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সাইম তো কেবল মৃতই নয়, পুরোই বিলীন, এই নামে কখনওই কেউ ছিল না। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও কিছুর চিহ্নটিও এখন মৃত্যুসম ভয়াবহ। ও’ব্রায়েনের এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে একটি সিগন্যাল বা কোড। থটক্রাইমের একটি ছোট্ট কাজের কথা তুলে ধরে তিনি মূলত দুইজনের মধ্যে যোগসাজশ টেনে দিলেন। ধীরে ধীরে তারা কোরিডোরের শেষ দিকটাতে চলে এসেছে। এবার ও’ব্রায়েন থামলেন। কৌতূহলী, চমৎকার বন্ধুত্বের চাহনি দিয়ে, স্বভাবজাত ভঙ্গিমায় চোখের চশমা জোড়া ঠিক করে নাকের ডগায় বসালেন। এবার বললেন:
‘আসলে আমি বলতে চাই, নিবন্ধে তুমি দুটি শব্দের ব্যবহার করেছো যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে তা খুব সম্প্রতিই। তুমি কি নিউস্পিক অভিধানের দশম সংস্করণটি পড়ো নি?’
‘না’—বলল উইনস্টন। ‘আমি জানতাম না ওটি এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। রেকর্ডস ডিপার্টমেন্টে আমরা এখনও নবম সংস্করণ ব্যবহার করছি। ’
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩১তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩০) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।