১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩০তম কিস্তি
___________________________________
‘কয়েক মাসের মধ্যেই দশম সংস্করণ আসবে। কিছু অগ্রীম কপি বিতরণ করা হয়েছে। আমার কাছেও একটি আছে। আমার ধারণা, তুমি এটি দেখতে চাইবে?’
‘ভীষণভাবে’—অতি আগ্রহের সঙ্গে বলল উইনস্টন।
‘নতুন কিছু অগ্রগতি আছে তবে ভীষণ রকম স্বদেশীপনা তুমি এতে পাবে। ক্রিয়া পদগুলো কমিয়ে ফেলা হয়েছে—আমার ধারণা এটার একটা আবেদন তোমার কাছে থাকবে। দেখি, কেউ একজনকে দিয়ে তোমাকে একটা ডিকশনারি পাঠিয়ে দিতে পারি কি না। তবে নিঃসন্দেহে আমি ভুলে যাব। হতে পারে, সুবিধা মতো সময়ে তুমিই একদিন আমার ফ্ল্যাটে এসে ওটি নিয়ে যেতে পার। দাঁড়াও। তোমাকে ঠিকানাটা দিয়ে দিচ্ছি। ’
ওরা দুজনই টেলিস্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। অন্যমনষ্কতায় ও’ব্রায়েন তার দুই পকেটের ওপর হাত বুলিয়ে অস্তিত্ব বুঝে নিয়ে এবার বের করে আনলেন চামড়ার মলাটের একটা নোটবুক আর সোনালি রঙের একটা ইঙ্ক-পেন্সিল। ঠিক টেলিস্ক্রিনের নিচে এমন একটা স্থানে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন যেখান থেকে এই নোটবুকে যা লেখা হবে তা টেলিস্ক্রিনে চোখ রাখলেই অন্যরাও দেখতে পাবে। একটি পাতায় তিনি ঠিকানাটি লিখলেন আর তা ছিঁড়ে উইনস্টনের হাতে দিলেন।
‘সন্ধ্যায় আমি সাধারণত ঘরেই থাকি’—বললেন তিনি। ‘আর না থাকলে আমার কাজের লোকটি তোমাকে ডিকশনারিটি দিয়ে দেবে। ’
তিনি চলে গেলেন, এক টুকরো কাগজ হাতে ধরে উইনস্টন তখনও দাঁড়িয়ে। এই কাগজের টুকরো লুকিয়ে রাখার কোনও দরকার নেই। বরং খুব সতর্কতার সঙ্গে ওতে যা লেখা আছে তা স্মৃতিতে ধরে নিল, আর ঘণ্টা কয়েক পরে ওটি আরও অনেক কাগজের সঙ্গে স্মৃতি গহ্বরে চালান করে দিল।
মোটে মিনিট কয়ই হবে তারা দুজন কথা বলল। তবে এই ঘটনার একটাই অর্থ দাঁড়ায়; উইনস্টনকে জানিয়ে দেওয়া হলো ও’ব্রায়েনের ঠিকানা। এর দরকার ছিল, কারণ সরাসরি খোঁজ না করলে কারও পক্ষেই জানা সম্ভব নয়, কে কোথায় থাকে। ঠিকানায় কোথা থেকে কোথায় যাবে তার কোনও উল্লেখ নেই। আসলে ও’ব্রায়েন তাকে বলে গেলেন, ‘তুমি যদি কখনও আমার সঙ্গে দেখা করতে চাও তাহলে এই হলো আমার ঠিকানা। ’ হতে পারে ডিকশনারির ভেতরেও কোথাও লুকিয়ে দেওয়া হবে কোনও বার্তা। কিন্তু সে যাই হোক, একটি বিষয় পুরোই নিশ্চিত। যে ষড়যন্ত্র সে স্বপ্নেই শুধু দেখেছে তা বাস্তবে আকার নিচ্ছে। আর সে প্রায় তার কিনারায় পৌঁছে গেছে।
সে জানে, শিগগিরই নয়ত পরে ও’ব্রায়েনের ডাকে সাড়া দেবেই। হতে পারে আগামীকালই, অথবা হতে পারে অনেকদিন পর—কোনওটাই তার কাছে নিশ্চিত নয়। যা কিছু ঘটে চলেছে তা আসলে অনেক বছর আগে শুরু হওয়া একটি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রথম পদক্ষেপটি ছিল গোপন এক অনৈচ্ছিক ভাবনায়, আর দ্বিতীয়টি আকার পায় ডায়রি লিখতে শুরু করার মধ্য দিয়ে। এতে তার ভাবনা রূপ নিল শব্দে আর এখন শব্দগুলো রূপ নিচ্ছে কাজে। আর শেষ পদক্ষেপটি এমন কিছু হবে যা ঘটবে ঠিক ভালোবাসা মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই। এটা সে মেনেই নিয়েছে। শুরুতেই নিহিত রয়েছে এর শেষ। তবে ভীতিকর দিক হচ্ছে; অথবা আরও নির্দিষ্ট করে বলা চলে, এ হচ্ছে মরার আগেই মৃত্যুর স্বাদগ্রহণ। এমনকি যখন ও’ব্রায়েনের সঙ্গে তার কথা চলছিল, তখন শব্দের অর্থগুলো তলিয়ে যাচ্ছিল, আর এক হীমশীতল কম্পন জাপটে ধরেছিল তার শরীর। তার মনে হচ্ছিল স্যাঁতস্যাঁতে কবরের মধ্যে পা ফেলেছে, আর এ যেন সেই কবর যা তার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩২তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।