রশিদের সাদাকালো জীবনটা হঠাৎ করে খানিকটা রঙিন হয়ে উঠেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শরীর ঘেঁষে তার এক রত্তি চায়ের দোকান।
দিনভর মহাসড়কের নীরবতা ভেঙে অসংখ্য বাস-ট্রাক তীব্র গতিতে বেরিয়ে যায়। মাঝে-মধ্যে দু’একটা থামে। যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে চা-পানি খায়। এটা রশিদের বাড়তি আয়। ইটভাটার শ্রমিকরাই তার ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। মহাসড়কের পাশে এই ইটভাটা তিনটিকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা ছাড়াও এখানে নিয়মিত যাতায়াত করে ক্রেতা, ঠিকাদার, গাড়ি চালকসহ আরও অনেকে। সব মিলিয়ে রশিদের দোকানে লোকসমাগম নেহাত কম নয়। দিনভর কেউ না কেউ আসছে। এতে রশিদের দিব্যি চলে যায়। দোকানের ঠিক পেছনে ইটভাটা পেরিয়ে মাইল দেড়েক হাঁটলেই মঙ্গলকান্দি গ্রাম। রশিদের চৌদ্দ পুরুষের ঠিকানা। রোজ সকালে গ্রামের এই মেঠো পথ পায়ে হেঁটে দোকানে আসে সে এবং দিনশেষে আবার ফিরে যায়।
ব্যস্ত মহাসড়কের পাশে নিঃসঙ্গ চায়ের দোকানে বসে গাড়ি এবং মানুষের আসা-যাওয়া দেখে রশিদ। রশিদের বেশ অবাক লাগে। এত এত মানুষ রোজ কোথায় যায়? কেন যায়? অথচ তার যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। মহাসড়কের পাশে এই এক রত্তি চায়ের দোকান এবং পেছনে মঙ্গলকান্দি গ্রাম—এই হলো রশিদের পৃথিবী। দুপুরের দিকে সময় কিছুটা ভারী হয়ে ওঠে। এ সময় রাস্তায় গাড়ির যাতায়াত সকাল কিংবা বিকেলের চেয়ে কিছুটা কম থাকে। ইটভাটার শ্রমিকরাও ব্যস্ত থাকে দুপুরের খাবার এবং বিশ্রাম নিয়ে। চারদিকে নেমে আসে তীব্র নির্জনতা। অবশ্য দোকানে হালকা বিনোদনের ব্যবস্থা রেখেছে রশিদ। একটা চায়না পকেট রেডিও আছে তার। চৌদ্দগ্রাম বাজারে দোকানের মালামাল কিনতে গিয়ে একদিন রেডিওটা চোখে পড়েছিল। দাম কম দেখে কিনে নেয়। দুপুরের দিকে যখন একলা লাগে বাংলাদেশ বেতারে বাংলা সিনেমার গান শোনে সে। সময়টা খারাপ কাটে না।
চোখের সামনে মহাসড়ক, চারপাশের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, রাস্তার দু’পাশের গাছগাছালি—সবকিছু দুপুরের তপ্ত রোদে কেমন ঝিমিয়ে পড়ে। এই নির্জনতা রশিদের চেয়ে এমন প্রবলভাবে আর কেউ টের পায় না। চোখের সামনে দিয়ে হুশ করে একের পর এক গাড়ি বেরিয়ে যায়। গান শুনতে শুনতে রশিদ নানান রকম গাড়ির ছোটাছুটি দেখে।
দুপুরের তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে এ সময় বাড়ি থেকে রশিদের দুপুরের খাবার নিয়ে আসে তার একমাত্র ছেলে মোহন। মোহনের উপস্থিতিতেও রশিদের একাকীত্ব খানিকটা কাটে। খাবার শেষ হলেই প্লেট-বাটি গুটিয়ে ফের বাড়ির পথে পা বাড়ায় মোহন। দুপুরের তেজ একটু কমতেই ইটভাটা থেকে দু’একজন শ্রমিক করে আসতে থাকে। একটু একটু করে যেন প্রাণ ফিরে পায় রশিদের চায়ের দোকান।
রোজ যেমন দুপুরের পর বেশ খানিকটা সময় একলা হয়ে যায় রশিদ—আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। কিছুটা ঝিমুনি আসতেই বেশ যত্ন করে নিজের জন্য এক কাপ চা বানাল। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দৃষ্টি প্রসারিত করল দিগন্তের কাছাকাছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত মহাসড়ক। দিনরাত গাড়ি চলছে তো চলছেই। এতটুকু অবসর নেই। হঠাৎ কালো রঙের একটা জীপ এসে থামল রশিদের চায়ের দোকানের ঠিক মুখোমুখি। রাস্তার বিপরীত পাশে। দোকানে বসে দেখছিল রশিদ। গাড়ি থেকে নেমে এলো চার সদস্যের একটি দল। সাহেবদের মতো পোশাক সবার। রশিদ মোটামুটি নিশ্চিত তার চায়ের দোকান দেখেই গাড়ি থামিয়েছে লোকগুলো। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। আগন্তুক দল রশিদের চায়ের দোকানে না এসে রাস্তার ওপারেই দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর বড় একটা ফিতা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কিছু একটা যেন মাপামাপি করল।
রেডিওর ভলিউম কমিয়ে রশিদ বেশ কৌতূহল নিয়ে চার আগন্তুককে দেখছিল। মাপামাপি শেষ হলে রাস্তা পেরিয়ে আগন্তুক দল হাজির হলো রশিদের চায়ের দোকানে। লম্বা বেঞ্চে বসতে বসতে চায়ের অর্ডার দিল একজন। অসময়ে খদ্দের পেয়ে রশিদ মনে মনে খুশিই হলো। মিনিট দশেক কাটিয়ে লোকগুলো ফের ঢাকার দিক করে ছুটতে লাগল। রশিদ ঠিক বুঝতে পারল না লোকগুলো কেন এসেছে। রেডিওর ভলিউম বাড়িয়ে আবারও গানে ডুব গেল সে।
দুদিন পর সেই দলটি আবার এলো। জীপের পাশাপাশি এ যাত্রায় একটি মালবাহী লরিও হাজির হলো। রশিদ এবারও বুঝতে পারল না ঠিক কী হতে যাচ্ছে। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত হলো কিছু একটা হতে যাচ্ছে। হঠাৎ করে যেন তার এক রত্তি চায়ের দোকানটিকে কেন্দ্র করে চারপাশ বেশ সরগরম হয়ে উঠল। এবার সেই চারজনের সঙ্গে বেশ কয়েকজন শ্রমিকও এলো। লরির পেছন থেকে ধীরে ধীরে নামিয়ে আনা হলো ঢাউশ আকৃতির একটি বিলবোর্ড। সেই সঙ্গে এক গাদা লোহা লক্কড়। দিনভর চলল নানা রকম কর্মযজ্ঞ। মঙ্গলকান্দির মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিনের মতো পিতার দুপুরের খাবার দিতে এসে রশিদপুত্র মোহনও অবাক হয়ে তামাশা দেখে। এ যেন এক দেখার মতো দৃশ্য। রশিদের দোকানের ঠিক মুখোমুখি রাস্তার ওপারে বিকেল নাগাদ দুই পায়ে দাঁড়িয়ে গেল একটি বিলবোর্ড। তার ঠিক মুখোমুখি। রাস্তার এপার-আর ওপার।
বিলবোর্ডে প্রথমবারের মতো চোখ পড়তেই শরীরে খানিকটা শিহরণ অনুভব করল রশিদ। হঠাৎ করে আকাশ থেকে যেন একটা পরী নেমে এসেছে। হিন্দি সিনেমার নায়িকা দিপীকা পাড়ুকোন তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুখে মিষ্টি হাসি, ঠোঁটের দু’পাশে টোল। রশিদ মূর্খ মানুষ। বিলবোর্ডে কী লেখা আছে পড়তে পারে না সে। দিপীকা পাড়ুকোনও তার অচেনা। চিনতে না পারলেও তার উপস্থিতি রশিদের জীবনে একটা বিশেষ ঘটনা।
বিলবোর্ডটি পুরোপুরি দাঁড়িয়ে গেলে রাস্তা পেরিয়ে আগন্তুক দল হাজির হলো রশিদের চায়ের দোকানে। বাড়তি খদ্দের পেয়ে রশিদ যতখানি আনন্দিত হলো তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দিত হলো দীপিকা পাড়ুকোনকে পেয়ে। আগন্তুক দল বিদায় নিতেই রশিদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বিলবোর্ডের দিকে। নির্জন মহাসড়কের পাশে নিজের একরত্তি চায়ের দোকানে বসে প্রায়ই একধরনের একাকীত্বের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। বিলবোর্ডটি যেন রশিদের একাকীত্ব নিমিষে দূর করে দেয়।
ইটভাটার শ্রমিকরা এরমধ্যে আসতে শুরু করেছে একে একে। তারাও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বিলবোর্ডের দিকে। অথবা দীপিকা পাড়ুকোনের দিকে। হাসিমুখে যে মেয়েটি তাকিয়ে আছে রশিদের চায়ের দোকানের দিকে। নাকি রশিদের দিকে? চা বানাতে বানাতে মুচকি হাসে রশিদ। সবার দৃষ্টিতে মুগ্ধতা।
‘রশিদ ভাই, তোমার কপাল তো দেখি খুইল্লা গেছে!’ বিলবোর্ডে দৃষ্টি রেখে সরু বেঞ্চে বসতে বসতে বলল অহিদুর। মাস ছয়েক হলো ইটভাটায় কাজ নিয়েছে। রোজ নিয়ম করে দু’কাপ চা খায়। অহিদুরের কথা শুনে মুচকি হাসে রশিদ। দুজনের দৃষ্টিই বিলবোর্ডে স্থির। স্থির দীপিকার দৃষ্টিও।
সূর্যের আলো ক্রমশ নরম হয়ে আসছে। ইটভাটা থেকে শ্রমিকদের আগমনও বাড়তে থাকে রশিদের দোকানে। সবার চোখেই বিস্ময়। বিলবোর্ডে ঝুলতে থাকে দৃষ্টি। রশিদের মতো ইট ভাটার শ্রমিকদেরও আনন্দের একটা বড় উৎস হয়ে উঠল বিলবোর্ডটি। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ওরা বিলবোর্ড দেখে। দীপিকা পাড়ুকোনকে চিনতে না পারলেও বিলবোর্ডে তার পাশেই লাক্স সাবানের মনোরম প্যাকেট দেখে ওরা বুঝতে পারে সাবানের বিজ্ঞাপন চলছে। সন্ধ্যার কিছু আগে রশিদের দোকানে হাজির হলো জয়নাল। ইটভাটায় কাজ করলেও পড়তে জানে সে। বিলবোর্ডে চোখ পড়তেই জয়নাল প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে, ‘রশিদ ভাই, এতো দেখি এলাহি কারবার!’ একটুখানি দম নিল জয়নাল, তারপর বিড়বিড় করে পড়তে লাগল, ‘লাক্স-এর আয়োজনে দিপীকা আসছে ঢাকায়। মিস্ডকল দিন আর দেখা করুন দীপিকার সাথে!’ রশিদ কিছুই বুঝতে পারে না। কে এই দীপিকা? তার সঙ্গে দেখা করলেইবা কী হবে?
রশিদের এত কিছু জেনে কাজ নাই। বিলবোর্ডটা তার দোকানের ঠিক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে তাতেই সে খুশি। ইট ভাটার শ্রমিক এবং রশিদের আটপৌরে জীবনে বিলবোর্ডটি যেন একটুখানি বিনোদন হয়ে ধরা দিল। একটা বিলবোর্ডকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করে রশিদের জীবনটা বদলে গেল। হাইওয়ের নির্জনতা এখন আর ওকে স্পর্শ করতে পারে না। নির্জন দুপুরগুলোতে ওকে সময় দেয় স্বয়ং দীপিকা পাড়ুকোন।
দুপুরের দিকে বেশ খানিকটা সময় সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়ে রশিদ। এ সময় মোহমুগ্ধ দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকে বিলবোর্ডের দিকে। রশিদ এবং দীপিকা পাড়ুকোন ছাড়া কোথাও কেউ নেই। একান্তে দু’জন। রশিদ হাসে। আনমনে বলে উঠে, ‘এক কাপ চা কইরা দিই?’ বলেই এদিক-ওদিক তাকায়। নাহ, কেউ নেই। রশিদ আবার হাসে। মনে মনে বউয়ের সঙ্গে বিলবোর্ডের নায়িকাকে মেলায়। দুজনের মাঝখানে যেন সাত-সমুদ্রের দূরত্ব। বউয়ের কথা মনে করতে চায় না সে। তাতে ঘোর কেটে যায়। সত্যের সামনে দাঁড়াতে হয়। রশিদ সেই সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না।
একটু সুখে থাকার জন্য, একটু আনন্দে থাকার জন্য মানুষ কত অন্যায় পর্যন্ত করে। রশিদ না হয় নির্দোষ বিভ্রমের একটা আলাদা জগত তৈরি করছে। বিলবোর্ডটি স্থাপনের পর থেকে রশিদের নিরানন্দ দিনগুলো রঙিন হয়ে উঠেছে। যখন একা একা বসে থাকে তার আর একলা লাগে না। এই যে রোজ ইটভাটার শ্রমিকরা তার দোকানে চা খেতে আসে, মাঝে মাঝে গাড়ি থামিয়ে চা খেয়ে যায় দূর গন্তব্যের যাত্রীরা—বিলবোর্ডের নায়িকাকেও যদি এমন করে নিজ হাতে বানিয়ে এক কাপ চা খাওয়াতে পারত তবে তৃপ্তি পেত রশিদ। ইচ্ছাটা প্রায়ই হয়। একদিন দুপুরে একটা অদ্ভুত কাজ করে বসে সে। দোকানে কোনও খদ্দের নেই। খুব যত্ন করে এক কাপ চা বানাল রশিদ। তারপর রাস্তা পেরিয়ে বিলবোর্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ কাপ থেকে গরম চা ছুড়ে মারে বিলবোর্ডে। দীপিকা পাড়ুকোনের ঠিক মুখের ওপর। গরম চা বিলবোর্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায়। রশিদ হাসে। প্রথমে মুচকি হাসে। তারপর বেশ শব্দ করে। ছেলে মোহন প্রতিদিনের মতো দুপুরের ভাত নিয়ে এসে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার বাবার দিকে। হঠাৎ ঘাড় ফেরাতেই ছেলেকে দেখে লজ্জা পেয়ে যায় রশিদ।
দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল। যখন একা থাকে রশিদ, দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে কথা বলে বিড়বিড় করে। দীপিকার হয়ে নিজের মতো করে জবাব তৈরি করে নেয়। রশিদ যে কিছুটা মানসিক রোগীর মতো আচরণ করছে সেটা অবশ্য বুঝতে পারে সে নিজেও। তারপরও করে। একলা সময়গুলো বেশ কাটে।
বিকেলের দিকে অবশ্য বিলবোর্ডের দিকে তাকানোর খুব একটা ফুরসত মেলে না। এ সময় ইটভাটার শ্রমিকরা আসে একের পর এক। মগ্ন হয়ে রশিদ চা বানায়। আজকের বিকেলটিও একই রকম। রশিদ যখন চায়ের কাপ নিয়ে ব্যস্ত ঠিক সেসময় একটি গাড়ি এসে থামল তার দোকানের উল্টোদিকে। বিলবোর্ডের ঠিক নিচে। গাড়ি থেকে নেমে এলো কয়েকজন। বিলবোর্ডের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা বলল। মিনিট দশেক বাদে যেদিক থেকে এসেছে সেদিকেই আবার ফিরে গেল গাড়িটি। পরদিন তারা আবার এলো। এবার আরও একটি বাড়তি গাড়ি যোগ দিল তাদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে দশ থেকে বারোজনের একটি দল নামল গাড়ি থেকে। ধীরে ধীরে বিলবোর্ডটি নামাতে শুরু করল ওরা। রাস্তার ওপারে নিজের চায়ের দোকানে বসে সব দেখছিল রশিদ। বিলবোর্ডটি নামাতে দেখে আর স্থির থাকতে পারল না সে। দৌড়ে রাস্তা পেরিয়ে আগন্তুক দলটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল রশিদ, ‘ভাই, এইটা নামান ক্যান?’ রশিদকে আপাদমস্তক একবার দেখল আগন্তুক দল। অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। ততক্ষণে বিলবোর্ডটি প্রায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে রশিদ আবারও মুখ খুলল, ‘ভাই, কই নেন এটা? বিলবোর্ডটা রাইখা যান। ’
একজন এবার ধমকে উঠে বলল, ‘কী সব পাগলের মতো কথা বলেন। এটার কাজ শেষ তাই নিয়ে যাচ্ছি। আপনার সমস্যা কী বলুন তো?’
রশিদ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। সে ঠিক বোঝাতে পারে না তার সমস্যার কথা। নির্জন এই হাইওয়ের পাশে নিঃসঙ্গ চায়ের দোকানে তার যে একাকীত্ব, তা অনেকখানি ঘুচে দিয়েছিল এই বিলবোর্ড। অথবা ভিনদেশী নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন। রশিদ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। বিলবোর্ড নিয়ে চলে যায় আগন্তুক দল। হঠাৎ করে যেন একটা প্রবল ঝড় এসে রশিদের পৃথিবীটা শূন্য করে দিয়ে গেছে।
দোকানে বসে রাস্তার ওপারে তাকালেই এখন কেবল শূন্যতা। ঘোর কেটে অদ্ভুত এক বাস্তবতার মুখে দাঁড়াল রশিদ। সেই বাস্তবতা একাকীত্বের, সেই বাস্তবতা যন্ত্রণার। যে যন্ত্রণার ভাষা নেই অথচ অস্তিত্ব আছে প্রবলভাবে। অনেক অনেক দিন পর অবেলায় দোকানের ঝাঁপ ফেলল রশিদ। ক্লান্ত পায়ে পা বাড়াল মঙ্গলকান্দির চিরচেনা পথে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৫