দূরবীণ ও দূরত্ব
___________________________________
দূরবীণকে সবসময় আমার বিলাসী যন্ত্র মনে হয়।
দূরত্বে দাঁড়িয়ে যারা দেখে পাখির কোলাহল, কিংবা
চাঁদের গায়ে প্রেমের ক্ষত—আমার মনে হয় তারা
দাগ স্পর্শ করতে জানে না।
তারচেয়ে অণুবীক্ষণ যন্ত্রকেই আমার মনে হয় কাছের ইস্পাত।
যে মেঘ মাঝে মাঝে ঝরিয়ে দেয় লৌহবিন্দু—
আমার কাছে তার কদর বেশি।
কিংবা মনে করতে পারি—কম্পন শেষে লাভার নিচে
হাত উঁচু করে মৃত্যুবরণ করেছে যে নেপালী কিশোরী,
সেও একদিন পৃথিবীকে লিখেছিল ভালোবাসার চিঠি।
যারা দূরবীণ দিয়ে মানুষের দারিদ্র দেখে, তারা—
অনেক কিছু থেকেই, থাকে লক্ষ্যচ্যুত।
ভাবি, বাইনোকুলারের পুরু লেন্স সরাতে সরাতে
উদ্ধারকারীরা নেপাল ট্রাজেডির দেহগুলো
সনাক্ত করতে পারবে তো!
কাঁপছে ঢেউ, কাঁপছে হিমালয়কন্যা
___________________________________
নিশ্চয়ই জল, মানুষের হাতে সমর্পণ করে না তার
সমগ্র শক্তি। নিশ্চয় কম্পনের ভোরে, তোমার হাতে
হাত রেখে আমি অনুভব করেছিলাম যে স্পর্শ—
তা ভূমিকম্প ছিল না।
তবুও কেঁপে উঠল পৃথিবী। ধসের নিচে পড়ে প্রাণ
দিল হাইতির কিছু মানুষ।
আজ নেপাল—হিমালয় কন্যার গোলাপ আঁকা মুখ
ঢেকে গেল ধ্বংসস্তূপের নিচে। ঢেকে গেল আমার প্রেম,
আমার হাতের দশটি আঙুল, বুকের পাঁজর।
আহা প্রকৃতি! তুমি আমাকে এভাবে মিইয়ে দিলে মাটিতে!
তুমি আমাকে এভাবে শক্তি দেখালে প্রিয় নদী!
প্রিয় বঙ্গোপসাগর—তুমি কাঁপিয়ে দিলে কোটি মানুষের বুক!
মনে পড়ে—আমি কাঁপার জন্যই এই বদ্বীপে
জন্মেছিলাম একদিন।
কালো চোখ দু’টো—
অক্ষরের হাত দু’টো—
শ্রবণের কান দু’টো—
কাঁপিয়ে বজ্রকণ্ঠে একদিন বলেছিলাম—
তোমার জয় হোক প্রিয় মানবতাবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৫