মৃতের জবানবন্দী
___________________________________
তোমার না-থাকা জুড়ে লেখা হলো গুটিকয় উপাখ্যান
যেভাবে জীবন প্রদক্ষিণ করে মৃত্যু, মৃত্যুকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে জীবন
তৃষিত অবিশ্বাসে অর্থবোধক হয়ে ওঠে কবিত্ব
এতটা নিঃশব্দে আর কে পেরেছিল?
তুমি?
আমি?
স্বয়ং বুদ্ধ?
একখানি বিষাদের মুখ ছিল স্বাপ্নিক করতলে
প্রার্থনার মতো ঝিঁঝিঁ পোকার অর্কেস্ট্রায় কেঁপে উঠেছিল সমগ্র বনভূমি
কে জানত কুয়াশার রাতে ফিরে আসবে বৃষ্টিদিন
তোমাকে মনে পড়ে যাবে আবার?
ভুল-বোধ, ভুল-স্বপ্নে জেগে উঠবে প্রিয় নদী এই মাংসের বুকে?
আমি হয়ত প্রেমিক ছিলাম না
নিঃশ্বাসে জেগে থাকে তুমুল বিষফল, গোলাপের লাশ!
আমি হয়ত প্রেমিক নই
পুরাতন জন্মের ঋণ আজও বকুলের ত্রাস!
আমি তাকে... নিঃসঙ্গতা বলি।
কৃষ্ণপক্ষের রাতে হৃদয় ছিঁড়ে উৎসর্গ করি মুগ্ধ জীবন।
তোমার মৃত্যুর পর কিছুই আগের মতো থাকবে না আমার
আমি ফিরে এলে জন্মান্ধ চোখে আবার প্রেমে পড়ব পরস্পর
আমার মৃত্যুতে কীইবা এসে গেছে নদীর
আমার মৃত্যুতে মরে গেছে সুন্দর, ভালোবাসা পৃথিবীর!
নদী ও নারী
___________________________________
জলের শরীরে কিছু রোদের চিহ্ন থাকে
অনিলারও ছিল!
স্বচ্ছ জলজ চোখে দীঘল আকাশ দ্যাখে
ঘোলাজলে রেখে গেছে বিষাদের ধ্বনি
সে চোখের তীর ধরে যে নাবিক হেঁটে গেছে
আমি সেই গাঙচিল, যমুনার পাড়ঘেঁষা শ্যামল তর্জনী!
সকলেই নদী ভালোবাসে না
কেউ কেউ আগলে রাখলে পিঙ্গল বালিয়াড়ি
এখানে মুগ্ধ আকাশ, শান্ত কোমল হয়ে তিরতির জল
এখানে পাখির পালক, গহীন হৃদয় নিয়ে বটবৃক্ষের বাড়ি।
এখানে সহস্র পথিক—
প্রেম নিয়ে ফিরে গেছে মানুষের দ্বারে।
এখানে অবাক রোদ, এখানে ঘৃণা ও প্রেম
আমাদের দ্যাখা হোক যমুনার পাড়ে!
কতটা বর্ষা ধরে হৃদয়ের আয়ু
যমুনার বুকে আর কতটা প্লাবন
হৃদয়ের জনপদে যা দিয়েছো পলিমাটি
কতবেশি হলে হবে চোখের শ্রাবণ!
তোমাকে দেখাবে পথ সবুজ পাতা
তৃষিত নক্ষত্রের আমৃত্যু সাধ
তোমাকে দেখাবে পথ দূরত্বের গান
বটের ফলের শব, তৃষিত নদী
তোমাকে দেখাবে পথ রাতের জোনাকি
সুহৃদের টানে ফেরা পাখির সিম্ফনি।
এইখানে অনিলা, বিশ্বাস গেঁথে আছে চোখের শিশিরে;
এখানে ভীষণ ভাঙন
আমার সমর্পণে কেঁপে উঠেছিলে।
এখানে সবুজ আঘাত
এখানে পাখির জীবন
আমাদের দ্যাখা হোক যমুনার পাড়ে!
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৫