ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৩তম কিস্তি
___________________________________

‘উইনস্টন, উইনস্টন!’—পেছনে ডাক জুড়ে দিলেন মা। ‘ফিরে এসো, বোনের চকোলেট ফেরত দাও। ’ সে থামল, কিন্তু ফিরল না। তার মায়ের উদ্বিগ্ন চোখ দুটো তার চোখে স্থির হয়ে থাকল কিছুক্ষণ। আজও সে জানতে পারেনি, কী ছিল সেই ঘটনা যা ঘটতে ধরেছিল, যা নিয়ে ছিল মায়ের এত উদ্বেগ।



বোনটি, তার হাত থেকে কিছু একটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে বুঝতে পারলেও দুর্বল করুণ চাহনি ছাড়া আর কোনও অভিব্যক্তিই দেখাল না। তার মা দুই হাতে কন্যাকে আরও একটু আগলে নিয়ে মুখটি বক্ষমাঝে চেপে ধরলেন। মায়ের ভাবভঙ্গিতে মনে হলো বোনটি বুঝি তার মরেই যাচ্ছে। কিন্তু তোয়াক্কা না করে সে ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে পালাল, হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে আছে সেই চকোলেট।

এরপর মাকে আর দেখেনি সে। চকোলেট সাবাড় করে তার মধ্যে এক ধরনের লজ্জাবোধ হতে লাগল। কয়েক ঘণ্টা এই রাস্তা, সেই গলি ধরে হাঁটল, এক পর্যায়ে ক্ষুধাই তাকে আবার ঘরে টেনে নিল। যখন ফিরে আসে ততক্ষণে মা নিরুদ্দেশ। হঠাৎ গায়েব হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা তখন অহরহই ঘটছে। কামরার সব কিছুই ঠিকঠাক, কেবল নেই তার মা আর বোনটি। ওরা কোনও কাপড় নিয়ে যায়নি, মায়ের ওভারকোটটিও ঘরে পড়ে আছে।

আজ পর্যন্ত সে কোনও পথেই নিশ্চিত হতে পারেনি, তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এটা খুবই সম্ভব, তাকে জবরদস্তি শ্রম শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বোনটির কী হতে পারে? হতে পারে তাকেও উইনস্টনের মতোই বাস্তুহীন শিশুদের কলোনিগুলোর (ওরা বলে পুনরুদ্ধার কেন্দ্র) একটিতে পাঠানো হয়েছিল। এখানকার শিশুরা গৃহযুদ্ধের শিকার শিশু হিসেবেই বড় হয়। অথবা বোনটিকেও শ্রম ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে তার মায়ের সাথে। অথবা অন্য কোথাও ফেলে দেওয়া হয়েছে স্রেফ মরে যাওয়ার জন্য।

স্বপ্নের দৃশ্য মনের মধ্যে এখনও উজ্জ্বল। বিশেষ করে ভাঁজ করা হাতের আড়ালে জীবনকে আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টায় রত থাকার সেই অভিব্যক্তি যেন পূর্ণ অর্থবহ হয়েই মনের মাঝে ধরে আছে। তার মনে এলো মাস দুয়েক আগের আরও একটি স্বপ্নের কথা। সাদা-চাদর পাতা নোংরা বিছানার সিথানে তার মা ঠিক যেভাবে বসে শিশুটিরে কোলের মধ্যে আঁকড়ে ধরে রাখতেন, সেভাবেই যেন তিনি বসেছিলেন ডুবন্ত সেই জাহাজের পাটাতনে, তার চেয়ে অনেক গভীরে, আর প্রতি মিনিটেই আরও গভীর থেকে গভীরে ডুবে যাচ্ছিলেন, আর তখনও ক্রমেই অন্ধকার ছেয়ে যাওয়া পানির তলদেশ থেকে উর্ধ্বপানে তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

মায়ের হারিয়ে যাওয়ার গল্পটি জুলিয়াকে শোনাল সে। চোখ না খুলেই জুলিয়া আরও কুঁকড়ে আরও একটু আরাম খুঁজে নিল। ‘আমার ধারণা সেসময়ে পাষণ্ড এক ছোট্ট শুকর বৈ কিছু ছিলে না তুমি’—অস্ফুট স্বরে বলল সে। ‘সবগুলো শিশুই একেকটা শুয়োর। ’

‘হ্যাঁ তা ঠিক। কিন্তু ঘটনার মূল দিকটা হচ্ছে—’

জুলিয়ার ঘন নিঃশ্বাস বলে দিচ্ছে আবারও গভীর ঘুমে ডুবেছে সে। মায়ের কথা আরও বলতে পারলে ভালো লাগত। যতটুকু, যেটুকু স্মরণ হয় তাতে তিনি অসাধারণ কোনও নারী ছিলেন বলে মনে হয় না, বুদ্ধিমতী কেউ ছিলেন এমনটাও কম মনে হয়। তারপরেও বলা যায়, তার মধ্যে এক ধরনের মহত্ব, এক ধরনের খাঁটিত্ব ছিল। যে জীবনমান তিনি মেনে চলতেন তা ছিল স্রেফ তার ব্যক্তিগত, তার নিজের মতো। তার অনুভূতিগুলো ছিল নিজের, বাইরে থেকে কোনওভাবেই তা বদলানো যেত না। অপ্রয়োজনীয় কোনও ঘটনাও তার কাছে অর্থহীন মনে হতো না। তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো, তাকে ভালোই বাসো, যখন তাকে দেওয়ার আর কিছুই থাকবে না তখনও তুমি তাকে ভালোবাসা দাও।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৫তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।