ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৫তম কিস্তি
___________________________________

‘ধরো আরও ছ’টি মাস আমরা এভাবে একসাথে থাকলাম—হতে পারে এক বছর—কেউ জানবে না। কিন্তু অন্তে বিচ্ছেদ আমাদের অনিবার্য। তুমি কি বুঝতে পারো তখন আমরা কতটা একা হয়ে যাব। যখন ওরা আমাদের ধরে ফেলবে, তখন আর কিছুই থাকবে না, কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তখন আমরা একজনের জন্য অন্যজন কোনও কাজেই আসব না। আমি যদি স্বীকারোক্তি দেই, ওরা তোমাকে গুলি করবে, আর আমি যদি স্বীকারোক্তিতে অস্বীকার করি, তাতেও ওরা তোমাকে গুলিই করবে। আমি কিচ্ছুটি করতেও পারব না, বলতেও পারব না, কিংবা আমাকে বলা থেকে বিরতও রাখতে পারব না, তোমার অনিবার্য মৃত্যুকে আমি বড়জোর মিনিট পাঁচেক পিছিয়ে দিতে পারব মাত্র। আমাদের দুজনের কেউই জানতেও পারব না, অন্যজন বেঁচে আছি, নাকি মৃত। আমাদের সত্যিকার অর্থেই আর কোনও শক্তি অবশিষ্ট থাকবে না। একটি বিষয়ই শুধু এখানে গুরুত্ব পাবে তা হচ্ছে আমরা একজন অন্যজনের সঙ্গে প্রতারণা করছি কি না, অবশ্য তাতেও অতি সামান্য ভিন্নতাও নিশ্চিত হবে না।



‘তুমি যদি স্বীকারোক্তির কথা বলো’—বললো জুলিয়া, ‘আমরা সন্দেহাতীতভাবেই সেটা করব। সবাই সর্বদা স্বীকার করে নেয়। তুমিও তার বাইরে যেতে পারবে না। ওরা তোমাকে নির্যাতন করেই তা করাবে। ’

‘আমি ঠিক স্বীকারোক্তি বলতে চাইনি। স্বীকারোক্তি মানে প্রতারণা বা বিশ্বাসঘাতকতা নয়। তুমি কী বললে বা করলে তাতে কিছু যায় আসে না। এখানে অনুভূতিটিই মুখ্য। ওরা যদি আমার প্রতি তোমার ভালোবাসার অনুভূতিকে বন্ধ করে দিতে পারে—সেটাই হবে প্রকৃত প্রতারণা।

বিষয়টি জুলিয়াকেও ভাবিয়ে তুলল। ‘ওরা তা করতে পারবে না’—অবশেষে বলল সে। ‘এই একটি কাজ ওরা করতে পারে না। ওরা তোমাকে দিয়ে যা কিছু ইচ্ছা বলিয়ে নিতে পারবে, কিন্তু তা তোমাকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। ওরা তোমার ভেতরটাতে ঢুকতে পারবে না। ’

‘না’—কিছুটা আশা জাগানিয়া কণ্ঠে বলল সে, ‘না; এটা বেশ সত্য বলেছো। ওরা তোমার ভেতরটাতে ঢুকতে পারবে না। তুমি যদি অনুভব করো মানুষ হয়ে থাকাটাই ভালো, এমনকি যখন তা কোনও ফল বয়ে আনে না তখনও, তাতে ওদের হারিয়েই দেওয়া হয়।

টেলিস্ক্রিনের সদা-সজাগ কান পেতে রাখার কথা ভাবনায় এলো তার। ওরা আপনার ওপর দিন-রাত চরগিরি করতে পারে, কিন্তু আপনার মাথাটি যদি ঠিক থাকে ওদের ফাঁকি দিতে পারবেন। ওদের সকল চাতুর্য দিয়েও অন্য একটি মানুষ কী ভাবছে তা জানার রহস্য রপ্ত করতে পারেনি। হতে পারে আপনি যখন ওদের কব্জায় চলে যাবেন তখন এগুলো অপেক্ষাকৃত কম সত্য হয়ে উঠবে। ভালোবাসা মন্ত্রণালয়ের ভেতরে কী ঘটে তা কেউ জানতে পারে না। তবে অনুমান নিশ্চয়ই করা যায়: নির্যাতন, মাদক, কিছু বিশেষ যন্ত্রপাতির ব্যবহার যা আপনার স্নায়বিক প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করবে, অনিদ্রা, একাকীত্ব আর উপর্যুপরি জিজ্ঞাসাবাদে ধীরে ধীরে আপনি কাবু হয়ে যাবেন।

তখন সত্য আর কোনও পথেই লুকিয়ে রাখা যাবে না। তারা তদন্তের মধ্য দিয়ে তা বের করে আনবে, ওরা নির্যাতনে নির্যাতনে আপনাকে কুঁকড়ে দেবে। কিন্তু আপনার উদ্দেশ্য যদি স্রেফ বেঁচে থাকা না হয়ে হয় মানুষ হয়ে থাকা, তখন এসব কিছুই কোনও ভিন্নতা এনে দেবে না। ওরা আপনার অনুভূতিকে বদলে দিতে পারবে না; সে জন্য আপনিও সেগুলো নিজে বদলে ফেলতে পারবেন না, চাইলেও না। ওরা সর্বোচ্চ আপনি যা কিছু করেছেন বা বলে ফেলেছেন তাই উন্মোচন করতে পারবে, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে যা কিছু ঘটে, যা কিছু আপনার নিজের কাছে রহস্যময়, তা অব্যক্তই থেকে যাবে।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৭তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।