১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৬তম কিস্তি
___________________________________
অধ্যায় আট |
তারা কাজটা করল! অবশেষে কাজটা তারা করেই ফেলল!
যে কক্ষে তারা দাঁড়িয়ে সেটি লম্বাটে গড়নের, হালকা একটা আলো জ্বলছে। টেলিস্ক্রিনের ভলিউম এতটাই কমানো যে বিড়বিড় শব্দ হচ্ছে। মেঝের ঘন নীল রঙের গালিচায় পা ফেললে মখমলের বিছানার মতো মোলায়েম মনে হবে। কক্ষের অপর প্রান্তে একটি সবুজ ঢাকনাওয়ালা আলোর নিচে পাতা টেবিলে বসে আছেন ও’ব্রায়েন। বাড়ির চাকরটি জুলিয়া আর উইনস্টনকে পথ দেখিয়ে যখন এই ঘরে নিয়ে এলো তখন সামান্য চোখ তুলেও দেখলেন না তিনি।
উইনস্টনের হৃদযন্ত্র এতটাই লাফাচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল কথাই বলতে পারবে না। তারা কাজটা করল! অবশেষে কাজটা তারা করেই ফেলল! কেবল এ কথাই তার মন জুড়ে বিচরণ করছে। এখানে পৌঁছানোই এক গর্হিত কাজ, আর দুজন একসঙ্গে আসা নিতান্তই নির্বুদ্ধিতা, যদিও দুজন দুই ভিন্নপথেই এখানে এসেছে আর ও’ব্রায়েনের দরজার গোড়াতেই তাদের দেখা। এমন একটি স্থানে ঢুকে পড়ার জন্য দরকার শক্ত স্নায়ুশক্তি। ইনার পার্টির কেউ কারও আবাসস্থলের কথা জানতে পারবে এমনটা বিরল ঘটনা, আর কারও ঘরে ঢুকে পড়া তো নিতান্তই অসম্ভব। বড় বড় ফ্ল্যাটবাড়ির ব্লকগুলো মিলিয়ে এই পুরো পরিবেশ সবকিছুর প্রাচুর্য আর প্রকাণ্ডতাই তুলে ধরে। নাকে লাগছে সুখাদ্যের সুঘ্রাণ, সেরা তামাকের গন্ধ। নীরব আর অবিশ্বাস্য দ্রুতগতির লিফটগুলো উপর নিচ করে যাচ্ছে, সাদা পোশাকে চাকরেরা ব্যস্ত-ত্রস্ত হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে—এই সবকিছুই যেন ভীতিকর ঠেকছে। যদিও এখানে আসার একটা যুতসই অজুহাত তার হাতে আছে, তারপরেও প্রতিটি পা ফেলার সময়ই একটা ভয় কাজ করছিল, ভবনের কোনও কোণা বা ঘুপচি থেকে এই বুঝি কালো উর্দিধারী প্রহরী সামনে লাফিয়ে পড়ছে আর কাগজপত্র চাইছে, নয়ত তাকে বেরিয়ে যাওয়ার হুকুম দিচ্ছে। ও’ব্রায়েনের চাকরটি, অবশ্য, তাদের দুজনকেই কোনও বিপত্তি ছাড়াই এখানে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। সাদা জ্যাকেটে বেটে-খাটো কালো চুলের লোকটির হীরক আকৃতির অভিব্যক্তিবিহিন মুখ, হতে পারে চীনাদের মতো। যেই পথে সে ওদের এগিয়ে নিয়ে এলো সেটিও ছিল গালিচামোড়ানো। ক্রিম-রঙা কাগজে ঢাকা দেয়াল আর ধবধবে সাদা, পরিচ্ছন্ন পর্দা ঝুলছে। ওগুলোও ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো। উইনস্টনের চোখে বা মনে একটি দেয়ালও ভেসে উঠল না যা মানব শরীরের ঘঁষায়-গন্ধে নোংরা নয়।
হাতের আঙুলে একটি কাগজের টুকরো ধরে রাখা ও’ব্রায়েনের। ধারণা করা যায় ওটাই মনযোগ দিয়ে পড়ছেন তিনি। তার প্রকাণ্ড মুখমণ্ডল একটু ঝোঁকা ফলে তার নাকের পার্শ্বআকৃতিটি চোখে পড়ল, সবমিলিয়ে তাকে ভয়ঙ্কর আর বুদ্ধিমান দুইই মনে হচ্ছিল। বিশ সেকেন্ডের মতো হবে তিনি কোনও ধরনের নড়াচড়া না করেই বসে থাকলেন। এরপর স্পিকরাইটটি নিজের দিকে টেনে নিলেন এবং মন্ত্রণালয়ের শংকর ভাষায় বেশ কাটাকাটা উচ্চারণে একটি বার্তা পড়লেন:
‘আইটেমস ওয়ান কমা ফাইভ কমা সেভেন অ্যাপ্রুভড ফুলওয়াইজ স্টপ সাজেশন কনটেইনড আইটেম সিক্স ডাবলপ্লাস রিডিকুলাস ভারজিং ক্রাইমথিংক ক্যান্সেল স্টপ আনপ্রসিড কনস্ট্রাকশনওয়াইজ অ্যান্টেগেটিং প্লাসফুল এস্টিমেটস মেশিনারি ওভারহেডস স্টপ এন্ড মেসেজ। ’
এবার চেয়ার ছেড়ে উঠলেন আর নিঃশব্দ গালিচায় পা ফেলে ফেলে ওদের দিকে এগুলেন। নিউস্পিকের শব্দগুলোর সাথে সাথে তার ওপর থেকে দাপ্তরিক ভাবটাও কিছুটা ঝড়ে গেল, তবে তার অভিব্যক্তি অন্যান্য সময়ের চেয়ে কিছুটা কর্কশ মনে হলো, যেন কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় অসন্তুষ্ট। একটা সাধারণ অস্বস্তিও ভর করল উইনস্টনের ভীতির ওপর।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৮তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।