ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শিকার | বিষণ্ন সুমন

গল্প / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
শিকার | বিষণ্ন সুমন

ঘুম থেকে জেগেই আসমার প্রথম যে অনুভুতিটা জাগল, তা ক্ষুধার। অপুষ্টিতে ভোগা রোগা শরীর।

এমনিতে চৌকি থেকে নামতে তার যথেষ্ট বেগ পোহাতে হয়। তবুও কী এক শক্তি বলে সে বেশ দ্রুতই বিছানা থেকে নেমে গেল। ত্বরিৎ এগিয়ে গেল ঘরের এক কোণে বসানো মাটির চুলাটার দিকে। ওটার ওপর চড়িয়ে রাখা ঢেবা-ঢোবা পাতিলটা দৃষ্টি আকর্ষণ করল ওর। হাতের এক ঠেলায় পাতিলের ওপর থেকে এক পাশ ভাঙ্গা ঢাকনিটা সরিয়ে দিল। পাতিলের তলায় পড়ে থাকা গুটি কতক ভাত দেখে চকচক করে উঠল ওর চোখ। এক লহমায় পাতিলটা কোলের ওপর টেনে নিয়ে দড়াম করে মেঝেয় বসে পড়ল। পাশেই রাখা বালতি থেকে এক খাবলা পানি ফেলল ওটার ভেতর। কাঠের একটা তাকের উপর রাখা বয়াম থেকে একটু লবণ নিয়ে ভাতের উপর ছড়িয়ে দিল। খুঁজে পেতে বের করল আধো শুকনো দুটো মরিচ। ভাতের সঙ্গে আচ্ছামত মেখে গপাগপ পেটে চালান করে দিল। কয়েক লোকমা গিলেই টের পেল হাত ঠেকছে পাতিলের তলানিতে। মনটা বিমর্ষ হয়ে গেল নিমেষেই। সহসা মোড়ের দোকানটার কথা মনে পড়ে গেল। সাথে সাথেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল তার। টিনের মগ দিয়ে আর এক খাবলা পানি পেটে ঢেলেই সে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

বসে বসে অলস সময় পার করছে মাজিদ মিয়া। মাঝে মাঝে অনুসন্ধিৎসু চোখ মেলে পথের পানে তাকাচ্ছে। সচরাচর পাড়া গাঁয়ের দোকানগুলোর মতো এতটা জৌলুসহীন নয় তার দোকানটা। গাঁয়ের লোকজনের নিত্য চাহিদা মেটাবার সব উপকরণই এখানে আছে। তবে গাঁয়ের বাসিন্দারা তেমন স্বচ্ছল নয় বলে, তার দোকানে লোকজনের খুব একটা ভিড় চোখে পড়ে না। গঞ্জের মূল সড়ক থেকে যে এঁদো গলিটা এসে গাঁয়ে ঢুকেছে তার ধারেই মাজিদ মিয়ার টং দোকান। চাল, ডাল, তেল, নুন থেকে ধরে শহুরে নাস্তার টেবিলের পাউরুটি পর্যন্ত সবই তার দোকানে মেলে। নানারকম চকলেট, গাঁয়ের ছেলেমেয়েদের ভাষায় যার নাম লজেন্স কিম্বা লেবেন্টুস—তাও তার দোকানে হর হামেশাই পাওয়া যায়। সেই কারণেই গাঁয়ের ছোট ছেলেমেয়েরা ফুরসৎ পেলেই এখানে এসে হল্লা করে। মাজিদ মিয়া জানে, সারাদিনে একবার হলেও এলাকার পোলাপানদের তার দোকানে আসতেই হবে। কিন্তু, আজ কদিন যাবত সে কেবল একটা নির্দিষ্ট মেয়ের জন্যই অপেক্ষা করে।

এ গাঁয়েরই দিনমজুর রহীম শেখের মেয়ে আসমা। বাপটা ভোরে ঘুম থেকে উঠেই গঞ্জে চলে যায় কাজের সন্ধানে। মেয়েটা সারাদিন একা বাড়ি থাকে। দিনভর গতর খেটে রহীম শেখ যা কামায়, তাই দিয়ে ফেরার পথে কিছু চাল-ডাল নিয়ে আসে। রাতে ক্লান্ত শরীরে চোখ-মুখ পুড়িয়ে রান্না করে তাই দিয়ে কোনওমতে বাপ-মেয়ের উদরপুর্তি হয়। ফলে মেয়েটার বাড়ন্ত শরীরের যা চাহিদা, তা কখনওই মেটে না। বয়স ইতোমধ্যে কৈশোরে চলে এলেও রোগা শরীরে জন্য মেয়েটাকে যথেষ্ট ছোটই লাগে। এদিকে মেয়েটা আবার বোবা। তাই গেল বছর যখন তার মা যক্ষ্মায় মারা গেল, তখন বাপটা অনেক চেষ্টা করেও এলাকার কোনও অবস্থাপন্ন ঘরে মেয়েটাকে কাজে দিতে পারেনি। যে মেয়ে ইশারা ছাড়া আর কোনও ভাষা বোঝে না, তাকে দিয়ে কাজ করানো সহজ কথা না। তাই বাধ্য হয়েই এই আধপেটা খাবারেই তাকে বেড়ে উঠতে হচ্ছে।

দোকানে কোনও খদ্দের না থাকায় একটু ঝিমুনি মতন চলে এসেছিল। সহসা একটা হালকা পদশব্দে সজাগ হয়ে উঠল মাজিদ মিয়া। আসমাকে দোকানের আড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল।

কিরে আইছস? এত দেরি করলি ক্যায়া?

জবাবে একটা হাই দিয়ে ‘অ-আ’ করে বিজাতীয় শব্দ করল বোবা মেয়েটা।

মাজিদ মিয়া বুঝল, ও ঘুম থেকে উঠেছে মাত্র। খাইছস? হাত মুখের কাছে নিয়ে খাওয়ার ভঙ্গি করে জানতে চাইল। আসমা চোখ নামিয়ে নিয়েছে দেখে যা বোঝার বুঝে নিল।

ল, এইডা খায়া ল। একটা বাটার বন বাড়িয়ে দিল।

থাবা দিয়ে রুটিটা নিয়ে নিল আসমা। গোগ্রাসে খেয়ে ফেলল। কাচের গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিল দোকানী। এক ঢোকে পানিটা গিলে নিল মেয়েটা। বুকের ওপর পড়ে থাকা ছেঁড়াফাটা ওড়নাটা মুখে টেনে নিয়ে ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা বাটার মুছে ফেলল। তারপর দোকানীর দিকে তাকিয়ে একটা ফিকে হাসি দিল। ডান হাতটা উঁচিয়ে ঘাড়টা আস্তে করে কাত করল। এর মানে হলো সে চলে যেতে চাইছে, বুঝল মাজিদ মিয়া।

আচ্ছা যা। দুপুরে ভুখ লাগলে আবার আইস। তোরে মাছের ঝোল দিয়া ভাত খাইতে দিমুনে।

উত্তরে আবারও হাসল মেয়েটা। তার চোখে-মুখে জড়িয়ে আছে কৃতজ্ঞতা। চকিত খেয়াল করল মাজিদ মিয়া, মেয়েটার বগলের কাছটায় জামাটা ছেঁড়া। দৃশ্যটা হাভাতের মতো তাকিয়ে দেখল সে। সহসা তারও ভীষণ তেষ্টা পেল। চলে যাওয়া আসমার দিকে তাকিয়ে আস্ত একটা ঢোক গিলে ফেলল সে।

ঘরে ফিরেই অগোছালো বিছানা গোছাতে লেগে গেল আসমা। বিছানা বলতে একটা ময়লা কাঁথা, তার সাথে তেল চিটচিটে দুইটা নোংরা বালিশ। অনেক সময় নিয়ে বেশ দায়িত্ববান মেয়ের মতোই সুন্দর করে কাঁথা ভাজ করল। তারপর ভাঁজ করা কাঁথাটা চৌকির শিয়রের দিকে বালিশের ওপর সাজিয়ে রাখল। বিছানা থেকে নেমে উঁকি দিল চৌকির তলে। নিচ থেকে ঝাড়ু টেনে নিয়ে ঘর ঝাঁট দিতে লেগে গেল। ঝাঁট দেওয়া হলে নোংরা পাতিল নিয়ে বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে। পাশের ময়লা পানির মাজা পুকুর থেকে ধুয়ে নিয়ে এসে সুন্দর করে তাকে সাজিয়ে রাখল। এটুকুন কাজ করতেই দুপুর গড়িয়ে গেল। নিজেকে তার খুব ক্লান্ত লাগছে। কী মনে করে আস্তে করে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। মনে পড়ে গেল যখন মা ছিল, তাকে কোনও কাজই করতে হতো না। অথচ আজ ভাগ্যের ফেরে এই বয়সে তাকে আস্ত একটা সংসার সামলাতে হচ্ছে। আর তা করতে যেয়ে সংসারের প্রতিটা কাজেই মায়ের অভাবটা সে ভালো করে টের পাচ্ছে। মা না থাকায় বাবাও ইদানীং রাত করে বাড়ি ফেরে। তারপরেও সে বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকাটাকে উপভোগ করে। কারণ তিনি ফিরে আসা মানেই হলো রাতে পেট ভরে খেতে পারা। তবে আজকাল বাবা প্রায়ই খালি হাতে বাড়ি ফেরে। সে তো কথা বলতে পারে না, তবে বাবার ভাব ভঙ্গিমায় এটা বুঝতে পারে, তার মেজাজ-মর্জি আগের মতো নেই। কিন্তু, তার যে ক্ষুধা লাগে এটা কেন বাবা বোঝে না। তাই সে ইদানীং মাজিদ মিয়ার দোকানে যেতে শুরু করেছে। লোকটা কত ভালো। সে চাইলেই খেতে দেয়। সহসা মনে পড়ে গেল, তাকে দুপুরে যেতে বলেছিল দোকানী। কথাটা মনে হতেই লাফিয়ে বিছানা ছাড়ল আসমা। ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে।

মাজিদ মিয়া সবে পেট পুড়ে খেয়ে তক্তপোশের ওপর বসে আয়েশ করে পান চিবুচ্ছে এমন সময় আসমাকে দেখতে পেল। হনহনিয়ে তার দোকানের দিকেই এগিয়ে আসছে। এতে সে বিন্দুমাত্র অবাক হলো না। মেয়েটা যে আসবেই তা সে জানত। তাই তার বাড়ি থেকে পাঠানো খাবারের কিছুটা আগেই আলাদা করে রেখে দিয়েছে।

দোকানের ছাউনির নিচে এসে সবে দাঁড়িয়েছে আসমা। এমন সময় তক্তপোশ ছেড়ে উঠে এলো দোকানী। দোকানের এক পাশ থেকে কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে জায়গাটা ফাঁকা করে দিল। ভাতের প্লেটটা ওখানে রেখে আসমার দিকে ফিরল।

ল, খায়া ল। মাজিদ মিয়া বলা মাত্রই প্লেটের ওপর একরকম ঝাঁপিয়ে পড়ল মেয়েটা। গপগপ করে সাবরে দিতে লাগল প্লেটের সবটুকু ভাত। অবাক হয়ে মেয়েটার খাওয়া দেখছে মাজিদ মিয়া। দৃশ্যটা বেশ তৃপ্ত করছে তাকে। তার ঠোঁটের কোণ জুড়ে সূক্ষ্ম একটা হাসির রেখা ফুঁটে উঠছে ধীরে ধীরে।

চোখ খুলেই বিছানায় ধড়মড় করে উঠে বসল আসমা। পাশেই মোড়ার ওপর রাখা জ্বলন্ত কুঁপিটায় চোখ পড়ল। চকিত বাইরে দৃষ্টি দিল। ঘুটঘুটে অন্ধকার জানিয়ে দিল সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে এরইমধ্যে। এখনও বাবা ফিরে আসেনি। মনে পড়ল, সন্ধ্যায় কুঁপি জ্বালিয়ে বাবার অপেক্ষায় বিছানায় বসে মেলে দেওয়া দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল সে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই কখন যে তার দু’চোখ ভেঙে ঘুম নেমে এসেছিল টেরই পায়নি। মাথা ঝাঁকিয়ে তন্দ্রা ভাবটাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইল। কখন বাবা আসবে এই চিন্তায় তার ঘুম কেটে গেল নিমেষেই। বিছানা থেকে নেমে দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিল। অদূরেই মাজিদ মিয়ার দোকানের টিমটিমে আলোটা চোখে পড়ল। নিমেষেই পেটের ক্ষুধাটা চাগিয়ে উঠল। সহসা ইতি কর্তব্য স্থির করে ফেলল। আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে রাস্তা অভিমুখে হাঁটা দিল।

দোকানের ঝাঁপি বন্ধ করে সবে শোবার আয়োজন করছে মাজিদ মিয়া—এমন সময় অন্ধকার ফুঁড়ে অশারীরীর মতো উদয় হলো আসমা। ওকে দেখে বিন্দুমাত্র অবাক হলো না দোকানী।

কিরে তোর বাপ আয় নাই? আসমা মাথা নাড়ছে দেখে যোগ করল, খাইছস? এবারও সমুত্তর পেয়ে চোরা চোখে ইতি-উতি তাকিয়ে বলল, নে ভিতরে আয়। তোরে কিছু খাইতে দেই।

কৃতজ্ঞতায় ছলছল করে উঠল মেয়েটার চোখ। বিনাবাক্যব্যয়ে উঠে এলো দোকানের এক পাশের ফাঁকা জায়গাটায়, যেখানে এক মানুষ সমান জায়গা কিছুক্ষণ আগেই খালি করে রেখেছে দোকানী নিজের ঘুমের জন্য। আসমা সেখানে উঠে বসতেই সে বিন্দুমাত্র দেরি না করে দোকানের ঝাপিটা আস্তে করে নামিয়ে দিল।

মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে আছে রহীম শেখের। ঝলমলে চাঁদের আলোয় চারপাশ আলোকিত হয়ে থাকলেও তার মুখটা মলিন আঁধারে ঢেকে আছে। আজ কদিন যাবত ঠিকমত কাজ জুটছে না। প্রায় রাতেই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাকে। মা মরা মেয়েটার উপোসী মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না বলে, ইদানীং সে বাড়িও ফিরছে অনেক রাত করে। সকালে মেয়ে জাগবার আগেই আবার ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু, এমন করে আর কদিন পালিয়ে থাকা যায়। এভাবে তো আর জীবন চলবে না। ভাবছে আজ আর ঘরেই ফিরবে না। সারারাত মাজিদ মিয়ার দোকানের বেঞ্চিতে শুয়ে কাটিয়ে দেবে। অবশ্য চলার পথে ওটাই আগে পড়বে। বাড়ির কাছের মাজা পুকুরটার গজ পঞ্চাশেক কাছে আসতেই একটা ধুঁপ আওয়াজ শুনতে পেল। সেই সঙ্গে পানিতে হালকা আলোড়ন। দ্রুত এগিয়ে গেল সেদিকে। আবছা আলোয় পুকুরটার একটু গভীরে কচুরিপানার ভেতর একটা হালকা নাড়াচড়া হচ্ছে দেখতে পেল। মুহূর্তেই মনটা খুশি হয়ে উঠল ওর। না, আর ওদের না খেয়ে থাকতে হবে না। অন্তত এক সপ্তাহের জন্য তাদের জীবন ধারণ নিশ্চিন্ত হয়ে গেল। দ্রুত এগিয়ে গেল বাড়ির দিকে। উঠোনে পৌছেই গতি শ্লথ করে ফেলল। মেয়েকে কিছুতেই জানান দেওয়া চলবে না সে বাড়ি ফিরেছিল। একেবারে কাল সকালেই মেয়েকে চেহারা দেখাবে ঠিক করল।

পা টিপে টিপে ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে গেল। আধো অন্ধকারে ওটা বন্ধ আছে ঠাহর করতে পেরে স্বস্তি বোধ করল। তারপর দ্রুত পিছিয়ে এসে ঘরের চালার এক কোণে হাতড়াতে লেগে গেল। বহুল ব্যবহারে অক্ষত ধারালো শিকের কোচখানি পেয়ে গেল যথাস্থানেই। ওটা হাতে নিয়ে রীতিমত দৌড়ে চলে আসলো পুকুর পাড়ে। হাতটা যথা সম্ভব লম্বা করে কোচটা ছুড়ে দিল জায়গামতো, যেখানকার কচুরিপানার নড়া-চড়া বেড়ে গিয়ে এখন রীতিমত আলোড়িত হচ্ছে। তারপর অসীম ধৈর্যের প্রতীক হয়ে বসে পড়ল, যেহেতু সে ভালো করেই জানে এই আলোড়ন কিছুক্ষণের ভেতরই স্থিমিত হয়ে যাবে। মাছটা যদি রাঘব বোয়াল হয়, তবে সেও পাকা শিকারী। ঢিল ছোঁড়া হয়ে গেছে। জায়গামত লাগবেই, এ ব্যাপারে সে পূর্ণ নিশ্চিত।

বসে থাকতে থাকতে একসময় ঝিমুনি এসে গেল। তারপরেও ঠায় বসে রইল রহীম শেখ। সে জানে মাছ শিকারীদের কখনও ক্লান্ত হতে হয় না। আগে সে রাত-বিরেতে এরকম কত মাছ মেরে বেড়িয়েছে তার হিসেব নেই। কাজেই তার এতদিনের অভিজ্ঞতা তো মিথ্যে হতে পারে না। জানে কোচটা জায়গামতই পড়েছে। মাছটা যে বিঁধেছে তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। এর আগেও সে এই মাছটার পিছে কম সময় দেয়নি। পিঁপড়ের ডিম, উঁই পোকার ডিম থেকে ধরে বোলতার চাক সহ হেন টোপ নেই এটায় গেলায়নি। ভেবেছিল এত পুরনো মাছ এদ্দিনে ধরা যখন পড়েনি, মরে টরে গেছে বোধহয়। আজ এতদিন পর সেই মাছই নতুন করে জানান দিয়ে আসলে তার এই দুর্ভাগ্যের দিনে শাপে বর হয়ে ফিরে এসেছে। ভাবছে কাল সকালে কালো রঙের ঢাউস বোয়ালটা যখন মেয়েটা দেখতে পাবে, তার ক্ষুধা ক্লিষ্ট মুখটা কী পরিমাণ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। চিন্তাটা সাহস যোগালো তাকে। কোচের গোড়ার দিকটা শক্ত করে চেপে ধরল। ধীরে ধীরে আগাটা বেকে যাচ্ছে দেখতে পেল। অভিজ্ঞতায় জানে এ সময় তাড়াহুড়ো করতে নেই। বরং ধীরে ধীরে খেলিয়ে খেলিয়ে মাছটাকে দুর্বল করে তবে পাড়ে টেনে তুলতে হয়। সেও তাও শুরু করল।

নড়তে শুরু করেছে কচুরিপানার ঝোপটা। আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে পাড়ের কাছাকাছি। নিজের ভেতর প্রচণ্ড এক উত্তেজনা টের পাচ্ছে শিকারী। আস্তে আস্তে পেছনে সরে গিয়ে কাছেই একটা গাছের সাথে কোচের এ মাথাটা গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে ভালো করে আটকে দিল। পরনের লুঙ্গিটা কাছা দিল শক্ত করে। তারপর পাড়ের কাছে গিয়ে পিছলে নেমে গেল পানিতে। দু’হাত বাড়িয়ে দিল ঝোপের ভেতর। হাতের আগায় নরোম অথচ অনড় একটা কিছু ঠেকতেই সামান্য হতাশ হয়ে উঠল। দেখাই যাক না, কপালে কী আছে। ইয়াল্লাহ্, বলে হ্যাচকা এক টানে তুলে আনলো উপরে। পরমুহূর্তে একটা আর্তচিৎকার দিয়ে পিছিয়ে এলো। তার দুই হাতের মাঝে ঝুলে আছে নির্জীব আসমার নগ্ন দেহ। কোচটা তার গলায় বিঁধে আছে।



বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।