১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৭তম কিস্তি
___________________________________
তার মনে হতে লাগল স্রেফ একটা অতি নির্বোধের কাজ সে করে ফেলেছে। ও’ব্রায়েন একজন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারী হবেন এমন কীই প্রমাণ তার কাছে আছে? কিছুই নেই, স্রেফ চোখের দৃষ্টিতে সামান্য সেই ঝলকানিটুকু ছাড়া। আর একটি মাত্র অতি অস্পষ্ট উক্তি। এর বাইরে বাকিটা সবই তার অতি গোপন কল্পনা, আর স্বপ্নে দেখা ঘটনা। ডিকশনারি নিতেই এখানে আসা, সে যুক্তি ধোপে টিকবে না, কারণ তাতে জুলিয়ার উপস্থিতির কোনও ব্যাখ্যা নেই। ও’ব্রায়েন যখন টেলিস্ক্রিনের সামনে দিয়ে এগিয়ে গেলেন তার মনোজগতে এসব ভাবনাই খেলে যাচ্ছিল। ও’ব্রায়েন থামলেন, পাশ ঘুরে দেয়ালের ওপর একটি সুইচ টিপলেন। টেলিস্ক্রিনের শব্দ থেমে গেল।
জুলিয়ার মুখ থেকে একটা ছোট্ট শব্দ বেরিয়ে এলো, বিস্ময় প্রকাশে সে শব্দটুকুই যথেষ্ট। আর এত ভীতির মাঝেও উইনস্টন সে ঘটনায় এতটাই আলোড়িত হলো যে নিজের কণ্ঠকে বশে রাখতে পারল না।
‘আপনি এটা বন্ধ করে দিতে পারেন!’—বলল সে।
‘হ্যাঁ পারি’—বললেন ও’ব্রায়েন। ‘আমরা বন্ধ করে দিতে পারি, আমাদের এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ’
ততক্ষণে ও’ব্রায়েন তাদের সামনাসামনি দাঁড়িয়েছেন। তার দৃঢ়-কঠিন বপুখানি ওদের দুজনেরই মাথা ছাড়িয়ে, আর মুখের অভিব্যক্তি তখনও অনির্ণেয়। মনে হচ্ছিল উইনস্টনের মুখ থেকে কথা শোনার জন্য ভীষণ অপেক্ষায় তিনি, কিন্তু কী কথা তা স্পষ্ট নয়। আবার এও মনে হচ্ছে তিনি স্রেফ ব্যস্ত একটি মানুষ, কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর কারণটিই জানতে চান। সব কটি মানুষই চুপ। টেলিস্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়ায় গোটা কামরায় কবরের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। প্রতিটি ক্ষণ কাটতেই যেন লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়। অনেক কষ্টে উইনস্টন তার চোখ ও’ব্রায়েনের চোখে ধরে রাখতে পারছে। আর তখনই হঠাৎ সেই মুখ ভিন্ন অভিব্যক্তি দেখাল। একটি মৃদু হাসি ফুটে উঠল ও’ব্রায়েনের মুখে। সহজাত ভঙ্গিমায় চশমা জোড়া নেড়েচেড়ে নাকের ডগায় বসিয়ে নিলেন।
‘কথাটি আমিই বলব, নাকি তুমি?’—বললেন তিনি।
‘আমিই বলব’—দ্রুততায় বলল উইনস্টন। ‘বস্তুটি কি আসলেই বন্ধ করা হয়েছে?’
‘হ্যাঁ সব কিছুই বন্ধ করা হয়েছে, এখানে এখন স্রেফ আমরাই। ’
‘আমাদের এখানে আসার হেতু হচ্ছে...’
থামল সে, এই প্রথম তার মনে হলো, আসলে কী উদ্দেশ্যে আসা তা তার নিজের কাছেও স্পষ্ট নয়। আর যেহেতু সে জানেই না ঠিক কী ধরনের সাহায্য সে ও’ব্রায়েনের কাছে চায়, সেহেতু কেন এখানে আসা তা বলাও কঠিন। কিন্তু কথা শুরু করল সে, যদিও ভালো করেই জানে এখন সে যা বলবে তা হবে অতি দুর্বল আর আত্মশ্লাঘার উচ্চারণ।
‘আমাদের বিশ্বাস কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র চলছে, পার্টির বিরুদ্ধে গোপন কোনও শক্তি কাজ করছে, আর সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আপনি জড়িত রয়েছেন। আমরা পার্টির শত্রু। আমরা ইংসকের নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা চিন্তা-অপরাধী। আমরা ব্যভিচারীও। আমরা কথাগুলো আপনাকে বলছি, কারণ আমরা আপনার কাছেই নিজেদের সোপর্দ করতে চাই। এখন আপনি যদি আমাদের দোষীও সাব্যস্ত করেন, আমরা তার জন্য প্রস্তুত। ’
থামল সে, আর ও’ব্রায়েনের কাঁধের ওপর দিয়ে তাকাল। কেউ একজন দরজা খুলে ঢুকছে। নিশ্চিত, কড়া না নেড়ে ঢুকে পড়া লোকটি বেটেখাটো হলদে মুখো চাকরটি বৈ কেউ না। উইনস্টন দেখল একটি বোতল আর ক’টি গ্লাস সাজানো ট্রে নিয়ে ঢুকছে সে।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৯তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৩৮) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।