১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪২তম কিস্তি
___________________________________
আসলে আমরা সবাই মৃত। আমাদের একমাত্র সত্যিকারের জীবন আসবে ভবিষ্যতে। যার সুফল পেতে আমাদের হাড়গোড়ের দেহাবশেষই কেবল টিকে থাকবে। কিন্তু সেই ভবিষ্যত কতদূরে হতে পারে, তা কারও জানা নেই। হতে পারে সহস্র বছর। এখন আসলে এই সুস্থ মানবিক বোধের পরিধি অতি স্লথ গতিতে বাড়িয়ে চলার বাইরে আর কিছুই করার নেই। আর সে কাজ যে আমরা দলবেধে একযোগে করতে পারব তাও নয়। আমরা কেবল আমাদের জ্ঞান একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারব, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বিস্তৃত করতে পারব। থট পুলিশের এই যুগে এর বাইরে আর কিছুই করার নেই। ’
থামলেন তিনি আর তৃতীয়বারের মতো হাত ঘড়ির দিকে তাকালেন।
‘কমরেড, তোমার চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে’—জুলিয়ার উদ্দেশে বললেন তিনি।
‘দাঁড়াও। বোতলের আধেকটা তো এখনও রয়ে গেছে। ’
গ্লাসগুলোতে ফের মদ ঢাললেন, আর নিজের গ্লাসটি তুলে নিলেন।
‘এবার তাহলে কার নামে?’—একই বক্রাঘাতি উচ্চারণ তার। ‘থট পুলিশের বিভ্রান্তির নামে? বিগ ব্রাদারের মৃত্যু কামনার নামে? মানবতার নামে? ভবিষ্যতের নামে?’
‘অতীতের নামে’—বলল উইনস্টন।
‘অতীতটাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ’—সম্মতি ও’ব্রায়েনের।
যে যার গ্লাস শেষ করল তারা, আর পরক্ষণেই জুলিয়া চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। ও’ব্রায়েন কেবিনেটের ওপর থেকে একটি বাক্স নামিয়ে আনলেন আর ভেতর থেকে চ্যাপ্টা সাদা রঙের ট্যাবলেট বের করে তার হাতে দিয়ে বললেন, ‘জিভের ওপর দিয়ে রাখো। এটার দরকার আছে। মদের গন্ধ মুখে নিয়ে বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। লিফটের অ্যাটেন্ডেন্টরা কড়া নজরদারি করে। ’
জুলিয়ার পেছনে দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ও’ব্রায়েনের মুখের ভাবখানা এমন রূপ নিল যেন তার অস্তিত্বই ভুলে গেলেন। আরও দুবার পায়চারি করে থামলেন তিনি।
‘আরও কিছু বিষয় চূড়ান্ত করা প্রয়োজন’—বললেন ও’ব্রায়েন। ‘আমার ধারণা তোমাদের একটা গোপন স্থান আছে?’
মি. চ্যারিংটনের দোকানের উপরের কামরাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাল উইনস্টন।
‘এই মূহূর্তে ওতেই চলবে। পরে আমি তোমাদের জন্য অন্য কিছু একটা ব্যবস্থা দেব। মাঝে মধ্যেই গোপন স্থান পাল্টে নেওয়া জরুরি। এরমধ্যে আমি তোমাদের “দ্য বুক”-এর একটি কপি পাঠিয়ে দেব’—ও’ব্রায়েন, লক্ষ্য করল উইনস্টন, বইটির নাম এমনভাবে বলেলন যেন উচ্চারণেই মনে হলো তা ইটালিক ফন্টে লেখা—‘গোল্ডস্টেইনের বইটি, আশা করি বুঝতে পারছো। যতটা দ্রুত সম্ভব পাঠিয়ে দেব। একটি কপি আমার হাতে আসতে দিন কয়েক লাগতে পারে। বুঝতেই পারো, আসলে এর কপি খুব বেশি নেই। যত দ্রুত আমরা এর কপি প্রকাশ করতে পারি তার চেয়েও দ্রুততায় থট পুলিশ সেগুলো পাকরাও করে ধ্বংস করে দেয়। অবশ্য তাতে খুব একটা যেয়ে আসে না। এই বই আসলে অবিনাশ্য। শেষ কপিটিও যদি ধ্বংস হয়ে যায়, আমরা আবারও তার প্রতিটি শব্দ প্রকাশ করতে পারব। তুমি কি কাজে যাওয়ার সময় ব্রিফকেস রাখো?’ যোগ করলেন তিনি।
‘নিয়ম বটে, তাই রাখি’
‘কেমন দেখতে ওটা?’
‘কালো, দুই চর্মবন্ধনির ভাঙাচোরা। ’
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৪তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।