১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৯তম কিস্তি
___________________________________
চেয়ারেই নিজেকে কিছুটা ঘুরিয়ে নিয়ে বসলেন ও’ব্রায়েন যাতে ঠিক উইনস্টনের মুখোমুখি হওয়া যায়। জুলিয়াকে একরকম অবজ্ঞাই করলেন তিনি। যেন তার কথাগুলোও উইনস্টনই বলবে। হঠাৎই তার দুই চোখের পাতা পড়ল। দ্রুত তা খুলে ধীর, নির্বিকার কণ্ঠে প্রশ্নগুলো করা শুরু করলেন যেন এ এক নিয়মিত প্রশ্নোত্তর পর্ব, আর প্রশ্নগুলোর অধিকাংশেরই উত্তর তার কাছে আগে থেকে জানা।
‘তোমরা জীবন দিতে প্রস্তুত?’
‘হ্যাঁ। ’
‘তোমরা জীবন নিতে প্রস্তুত?’
‘হ্যাঁ। ’
‘তোমরা এমন নাশকতা ঘটাতে পারবে যাতে শত শত নিরাপরাধ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে?’
‘হ্যাঁ। ’
‘বিদেশি কোনও শক্তির হয়ে তোমরা নিজের দেশের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারবে?’
‘হ্যাঁ। ’
‘তোমরা ছলচাতুরি, প্রতারণা, ধোকা, শিশুদের মনকে কলুসিত করে তোলা, মাদকাসক্ত করে তোলা, পতিতাবৃত্তিতে উৎসাহ যোগানো, যৌন রোগ সংক্রমণ বাড়ানো—এমন যে কোনও কিছু করতে প্রস্তুত যা পার্টির নৈতিকতার ভিত ভেঙে দেবে, ক্ষমতাকে খর্ব করবে?’
‘হ্যাঁ। ’
‘ধরো, উদাহরণ স্বরূপ, একটি শিশুর মুখে সালফিউরিক এসিড ছুড়ে দিলে তাতে আমাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হবে—তোমরা কি তা করতে প্রস্তুত?’
‘হ্যাঁ। ’
‘তোমরা তোমাদের বর্তমান পরিচয় হারিয়ে স্রেফ ওয়েটার বা ডকের শ্রমিক হিসেবে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে প্রস্তুত?’
‘হ্যাঁ। ’
‘তোমরা আত্মহত্যা করতে প্রস্তুত, যদি এবং যখন আমরা নির্দেশ দেব তখনই?’
‘হ্যাঁ। ’
‘তোমরা দুজন দুজনা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হতে প্রস্তুত, আর কখনও একের সঙ্গে অপরের দেখা হবে না?’
‘না!’ চিৎকার করে উঠল জুলিয়া।
উইনস্টনের মুখে কথা সরছিল না। এক মুহূর্তে এও মনে হলো সে আসলে বাক শক্তিই হারিয়ে ফেলেছে। তার জিহ্বা মুখের ভেতর নড়ছে কিন্তু শব্দ উৎপাদন করছে না। একটি শব্দের শুরুর শব্দাংশটি তৈরিতেই জিহ্বার লেগে গেলে বেশ খানিকটা সময়। আর যতক্ষণ না শব্দটি উচ্চারিত হলো, সে জানতও না, ঠিক কোন শব্দটি সে বলতে যাচ্ছে। ‘না’—অবশেষে বলল সে।
‘আমাকে বলে দিয়ে ভালো করেছো’—বললেন ও’ব্রায়েন। ‘আমাদের জন্য সবকিছুই জেনে রাখা প্রয়োজন। ’
এবার তিনি ঘুরে জুলিয়ার মুখোমুখি হলেন এবার আরও একটু অভিব্যক্তি ঝরিয়েই কথাগুলো উচ্চারণ করলেন:
‘তুমি কি বুঝতে পারো, সে যদি টিকেও যায়, তা এক ভিন্ন মানুষ হিসেবেই টিকবে। হতে পারে আমরা তাকে একটি নতুন পরিচয় দিতে বাধ্য হব। তার চেহারা, চলাফেরা, হাতের আকার, চুলের রঙ—এমনকি তার কণ্ঠটিও পাল্টে যাবে। আর তুমি নিজেও হয়ে যেতে পারো ভিন্ন কেউ একজন। আমাদের সার্জনেরা মানুষকে এমনভাবেই পাল্টে দিতে পারেন যে চেনাই যাবে না। কোনও কোনও সময় এটা দরকার হয়ে পড়ে। কখনও কখনও এমনকি শরীরের একটি অঙ্গচ্ছেদ পর্যন্ত করে ফেলি আমরা। ’
মার্টিনের মঙ্গোলীয় চেহারাটির দিকে একবার তাকানো থেকে কোনওভাবেই নিজেকে বিরত রাখতে পারল না উইনস্টন। সেখানে কোনও ধরনের ভীতি সে দেখতে পেল না। জুলিয়ার মুখমণ্ডলে আরও ফ্যাকাশে হয়ে ওঠার ছাপ, এতে তার মেছতাগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে ও’ব্রায়েনকে বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই মোকাবেলা করল সে। বিড়বিড় শব্দে কিছু একটা উচ্চারণ করল জুলিয়া যা থেকে বুঝে নেওয়া গেল সে বলেছে:
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪১তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪০) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।