ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা | মাসুদুজ্জামান

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৫
একগুচ্ছ কবিতা | মাসুদুজ্জামান

আপেলগাথা
___________________________________

      যে ফুল ঝরিত শূন্যে, দীর্ঘশ্বাসে, আমি তাকে নিয়ে দাঁড়িয়েছি অরণ্যসমীপে,
      গাছগুলি কতটা যে প্রণয়ে আপ্লুত, ফলের সোনালি শাঁসে জলন্ত, ভাস্বর,
      যদি সে জানিত।

      আত্মার মসৃণ মেঘমালা খুলে কখনও তোমাকে কেউ আকাশের কাছে নিয়ে
      আসেনি, অরণ্যের অন্ধকার গুহার ভেতরে তুমি ছিলে একা, হিমযুগ থেকে
      চলে এসেছো এই খনিজপ্রহরে।



      কম্পিউটারের মাঝ থেকে ইঁদুরের বাচ্চারা মুঠোর ভেতরে এসে খেলা করে,
      কীবোর্ডে আঙুলগুলি নাচে, পাহাড়ের খাড়ি বেয়ে তুমি উঠে যাও অরণ্যে,
      পাহাড়চূড়ায়, ঝাঁপ দাও স্ফটিকস্বচ্ছ নেকড়ের সরোবরে, উঠে আসো আগুনের
      লেলিহান জিভে হিংস্র নখরে।

      চারিদিকে ঘাসের সবুজ দীপ, ধূসর বিবর্ণ নারী, তুমি যার হাত ধরতে চাও
      তার হাতে আগুনের শিখা, ঝলসে যাওয়া হাত পত্রহীন শাখার মতো
      শূন্যে ঝুলছে আর অস্তিত্ব-নিরস্তিত্বের বিন্দুতে একটা আপেল ঘুরতে ঘুরতে
      মাধ্যাকর্ষণহীন সৌরপৃথিবীতে ছিটকে দূরে সরে যাচ্ছে।


ল্যান্ডস্কেপ
___________________________________

      তিমির যামিনী। কালো নৌকা। পাটাতনে দু-জন মানুষ
                নগ্ন
                         কম্পমান
                                      বাষ্পীভূত
      ভাসতে ভাসতে চলে গেল দূর মোহনায়।
      দুজনেই দাঁড় বাইছে
      আর সেই যুগল শরীর জ্যোৎস্নায়, ঘামে
                       ছলকে উঠছে
      পাশাপাশি। কথা বলছে।
      বাইতে বাইতে আরও দূরে চলে গেল।
      হাঙরের জঠরে ঢোকার আগে পরস্পর চুমু খেল।
 
      কালো নদী। নৌকাটা কিছুটা শূন্যে উঠে নিঃশব্দে ডুবে গেল।


নেকড়ের নখরে
___________________________________

      ভালোবাসা কী জানি না। শুধু এক শতাব্দী ধরে একটা বেহালা বাজিয়ে চলেছি
      আর বার বার একটা গোলাপ হাতে তোমার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছি। আমার
      হৃৎপিণ্ড থেকে ঝরে-পড়া রক্ত থেকেই ওই গোলাপটা তৈরি হয়েছে।
 
      আমি আমার অহম খুইয়েছি আর মানুষের জন্যে চাপাতির নিচে রেখে যাচ্ছি
      নেকড়েনখর। ঘাড় থেকে ধড়টা খসে পড়বার আগে নিজেকে ভালোবাসো।
      যুদ্ধের ঠিক আগে কুচকাওয়াজ করতে করতে দিগন্ত থেকে দিগন্তে আগুন ধরিয়ে
      নিরোর বাঁশিটা ছুঁড়ে ফেলে মানবভজনা করো।

      আমার বেহালা থেকে আর কতকাল রক্ত ঝরবে?


চেয়েছি কিছুটা বেশি
___________________________________

      কখনও আগে এসব ভাবিনি, এখন প্রায়ই ভাবি,
      জিভে নিতে চাই সাপের ছোবল, অগ্নি, অথবা নীরবে
      মাথা পেতে নিতে চাই চাপাতির কোপ, রক্তস্রোত...
 
      কী হবে এভাবে বেঁচে থেকে এই জনপদে, অরণ্যবেবুন,
      জীবন যেদিকে যায় সেদিকেই শাদা আর কালো,
      মাঝখানে দীর্ঘ সেতু, ঝলমলে আরণ্যক নারী,
      আরও কোনও অন্ধকার বনের ভিতরে সরে যায়।
      নারীর হাতেই ঘাতকের কাটামুণ্ডু,
      হরিণের উড়ন্ত বাঁকানো শিঙে মৃত্যুর ঝলক।
 
      কোনও এক তৃণভূমি থেকে মেঘবালিকার মতো
      এসেছিলে তুমি, অরণ্যের মাঝে শ্বাপদের নখরে বিঁধিয়ে
      নেকড়ের শবাধারে ফেলে রেখে চলে গেলে।
 
      শরীর চাইনি আমি, আরও কিছু বেশি চেয়েছি, চুম্বন,
      কোনার্ক অথবা উজ্জয়িনীর পথে হাতে হাত রেখে
      চেয়েছি তোমার হৃদয়সমিধ, মানবিক লোহিত উত্থান।

 
আততায়ী
___________________________________

      শূন্য থেকে ধেয়ে আসছে খড়গ, কূটাভাস,
      নির্মম হিংস্র চাপাতির হাত
      জ্যোতির্বলয়ের মাঝে স্খলিত ঘাতক
      কাপুরুষ, ধর্ম আর অন্ধকার ছাড়া
      চেনে না মানব।
 
      বহুবর্ষ আগে শূন্য থেকে যে ওহি নাজেল হয়
      তাকে ওরা চিবিয়ে চিবিয়ে খায়
      সহি, জঙ্গনামা, বেহালা বিধুর
      রক্তস্রোতে ভেসে যায়
      মাধুর্যে বিহ্বল একাকী দিব্য দেবদূত,
      সে ছিল শয়ান, নক্ষত্রপুরুষ, অন্ধকারে
      কংক্রিটের পালঙ্কে দীর্ণ, পাশেই পুঞ্জিত জনস্রোত
      ভেসে চলে যায়, হয়ত ঘাতক, আচঞ্চল
 
      কোথায় উজ্জ্বল সেই পুঁথি, কীটদষ্ট,
      হিংসার বর্ণমালা ফুঁসে ওঠে
      ধর্মগ্রন্থ থেকে ঝরে পড়া রক্তে
      ভিজে যায় নির্বাক নিথর পবিত্র শরীর,
      এই দেশ, মৃত্তিকা, নিখিল।




বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।