১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৭তম কিস্তি
___________________________________
একটি ভারি কালো মলাটের বিশাল বই, কাচাহাতের বাঁধাই, মলাটে কোন নাম কিংবা শিরোনাম নেই। ছাপাগুলো কিছুটা অবিন্যস্তই মনে হলো। ধারের দিকে পাতাগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে গেছে, কোনও কোনওটি ছিঁড়ে ভিন্ন হয়ে গেছে। এমনটা বুঝেই নেওয়া যায় বহু হাত ঘুরেই তার হাতে পড়েছে এই বই। মলাট উল্টে প্রথম পাতায় লেখা রয়েছে
গোষ্ঠীশাসনভিত্তিক যৌথবাদের তত্ত্ব ও চর্চা
- ইমানুয়েল গোল্ডস্টেইন
পড়তে শুরু করলো উইনস্টন:
প্রথম অধ্যায়
অবজ্ঞাই শক্তি
যতদিনের কথা নথিভুক্ত রয়েছে ততদিন ধরে, অথবা বলা যায় নব্যপ্রস্তর যুগের পর থেকেই পৃথিবীতে উচ্চ, মধ্য আর নিম্ন এই তিন শ্রেণির মানুষ বাস করে আসছে। এরা আরও নানাভাবে উপ-বিভক্ত হয়ে, ভিন্ন ভিন্ন অগুনতি নাম পেয়েছে, তাদের আপেক্ষিক সংখ্যা, একের প্রতি অন্যের আচরণ যুগে যুগে পাল্টেছে, কিন্তু সমাজের অপরিহার্য কাঠামোটি থেকে গেছে অপরিবর্তিত। বড় বড় অভ্যুত্থান আর আপাতদৃষ্টিতে অপরবর্ত্য পরিবর্তনের পরেও, এই একই ব্যবস্থা নিজের মতো করেই সমাজ কাঠামোয় আবার স্থান করে নিয়েছে, মাপযন্ত্রের কাটা যেভাবে এদিক-ওদিক করে প্রতিবারই একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় ফিরে আসে ঠিক তেমনি।
এই গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্য পুরোপুরোই পরষ্পর পরাহত...
পড়া থামালো উইনস্টন। প্রধানত, যে কথাগুলো সে পড়ছে অতি স্বাচ্ছন্দ আর নিরাপদে তার যথার্থতার প্রশংসাটুকু করার জন্যই এই থামা। এখানে সে একা, টেলিস্ক্রিন নেই, চাবির ফুটো দিয়ে পাতা নেই কোনও কান, কাঁধের ওপর দিয়ে চেয়ে নেই কোনও সতর্ক চোখ, অথবা তার নিজের হাতেই ঢেকে রেখে পড়তে হচ্ছে না বইয়ের পাতা। গ্রিষ্মের মিষ্টি হাওয়া গালের ওপর খেলা করে যাচ্ছে। দূরে কোথাও থেকে শিশুদের চেচামেচির মিলিয়ে আসা শব্দ কানে আসছে। কক্ষের ভেতরে ঘড়ির টিক টিক ধ্বনি ছাড়া পুরোই নিস্তব্ধ পরিবেশ। হাতলওয়ালা চেয়ারে আরও একটু গেড়ে বসলো, আর পা দুটো তুলে রাখলো ফেন্ডারের উপর। এ যেনো স্বর্গ, এ যেনো অনন্ত সময়। কেউ যখন অন্য কখনো কোনও বইয়ের সবটা, প্রতিটি শব্দ পড়বে বলে ঠিক করে তখন এলোমেলোভাবে পাতা উল্টায়, ঠিক সেভাবেই একটি পাতা খুলে সে দেখলো ওটি তৃতীয় অধ্যায়ের শুরুটা। সে পড়তে শুরু করলো:
তৃতীয় অধ্যায়
যুদ্ধই শান্তি
বিশ্বকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করে ফেলার ঘটনাটি যে ঘটবে তা বিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়েই আন্দাজ করা যাচ্ছিলো। ইউরোপকে রাশিয়ার দখলে নেওয়া, আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দখল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ায় বর্তমান তিন পরাশক্তির দুই শক্তি ওশেনিয়া আর ইউরেশিয়া ততক্ষণে পুরোদস্তুর কার্যকরভাবে বর্তমান। আর তৃতীয় শক্তি ইস্টেশিয়ার উত্থান আরও দশক খানেক সময়ের বিভ্রান্তিমূলক অন্তর্যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পর। তিন প্রধান শক্তির মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রগুলোর কোনও কোনওটি স্রেফ আবেগনির্ভর। যৌক্তিকতা নেই তাও যুদ্ধ। অন্যস্থানগুলোতে যুদ্ধ নির্ভর করছে যুদ্ধেরই ভাগ্যের ওপর, হলে হয়, নইলে নয়। তবে সাধারণভাবে যুদ্ধটি চলছে ভৌগলিক রেখার অনুসরণে। ইউরোপীয় ও এশিয়াটিক স্থলভাগের গোটা উত্তরাংশ জুড়েই ইউরেশিয়া। পর্তুগাল থেকে শুরু হয়ে বেরিং প্রণালী অব্দি যার বিস্তৃতি। আমেরিকাদ্বয়, ব্রিটিশ দ্বীপমালা আর অস্ট্রেলিয়াসহ আটলান্টিক দ্বীপপুঞ্জ এবং আফ্রিকার দক্ষিণাংশ ওশেনিয়াভুক্ত। পশ্চিমে সীমিত যুদ্ধক্ষেত্র নিয়ে ইস্টেশিয়া অন্য দুই ভু-খ-ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট, চীন ও তার দক্ষিণের অন্য দেশগুলো, জাপানের দ্বীপমালা, মানচুরিয়া, মঙ্গোলীয়া আর তিব্বত মিলিয়ে বৃহৎ এক ভূ-খ- এর অংশ। তবে ইস্টেশিয়ার এই অংশটি বাড়া-কমার মধ্যেই থাকে।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৯তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪৮) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।