১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৯তম কিস্তি
___________________________________
যেকোন পথেই এই তিন প্রধান-রাষ্ট্র এত বিশাল যে প্রত্যেকেই তার সীমারেখার মধ্যেই তার প্রয়োজনের প্রতিটি উপকরণ পেয়ে যাচ্ছে। আর যুদ্ধের যেহেতু সরাসরি একটি অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য থাকেই, বলা যায় এই যুদ্ধ এখন আসলে শ্রম শক্তির যুদ্ধ। প্রধান তিন রাষ্ট্রের সীমান্তের মাঝে যে অংশ তা কারোরই স্থায়ী দখলে নেই সেখানে চতুর্ভূজ আকৃতির একটি অংশ রয়েছে যার কোণায় কোণায় রয়েছে ট্যাঙ্গিয়ার, ব্রাজাভিল, ডারউইন আর হংকং, যার জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ। এই ঘন-বসতির অঞ্চলগুলো আর উত্তরাঞ্চলীয় বরফাচ্ছন্ন ভূ-খণ্ডের দখল নিতেই প্রধান তিন শক্তির যত লড়াই। এই অমীমাংসিত এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ কেউ কখনোই নিতে পারেনি। এর অংশ বিশেষ সারাক্ষণ হাতবদল হতে থাকে। আকস্মিক প্রতারণামূলক আক্রমণে এখন এটা, তখন সেটা করায়াত্ত্ব করার ফলে এখানকার দখলদারিত্বের সীমারেখা সীমাহীনভাবেই পাল্টাতে থাকে।
এইসব অমিমাংসিত সীমারেখায় রয়েছে মূল্যবান খনিজ, আর কোনো কোনো এলাকায় ফলে রাবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সবজি-পণ্য, অপেক্ষাকৃত শীতের জলবায়ুতে যার উৎপাদন ব্যয়ও অপেক্ষাকৃত বেশি। কিন্তু সর্বোপরি এসব অঞ্চলেরই রয়েছে সস্তা শ্রমের এক তলাহীন ভাণ্ডার। যে শক্তিই বিষুবমণ্ডলীয় আফ্রিকাকে কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে কিংবা দক্ষিণ ভারতকে অথবা ইন্দোনেশীয় দ্বীপমালাকে নিয়ন্ত্রণ করুক, এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানব দেহের ওপর তার দখল জন্মায় যারা সস্তায় গায়ে খাটা শ্রমিক-মজদুর। এসব অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রকাশ্য এক দাসত্বের জীবন, তারা এক শাসকের হাত বদলে অন্য শাসকের কব্জায় পড়ে। কয়লা বা তেলের ওপর দখলদারিত্বের মতোই এই শ্রমশক্তির ওপর দখলদারিত্ব বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে যাতে তা থেকে যে অর্থ বেচে যায় তা দিয়ে আরো অস্ত্র কেনা যায় আর তাতেই আরও ভূখণ্ড দখল হয়, কব্জায় আসে আরো শ্রমশক্তি। এ এক সীমাহীন লালসা।
খেয়াল করলে দেখা যাবে যুদ্ধ ওইসব অমীমাংসিত সীমারেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ইউরেশিয়ার সীমান্ত বরাবরই কঙ্গো অববাহিকা থেকে ভূমধ্যসাগরের উত্তর তীর পর্যন্ত আগু-পিছু করে। ভারত সাগর আর প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলো কখনো ওশেনিয়ার আবার কখনো ইস্টেশিয়ার দখলে থাকে। ইস্টেশিয়া আর ইউরেশিয়ার বিভক্তি রেখায় যে মঙ্গোলিয়ার অবস্থান সেখানকার পরিস্থিতি কখনোই স্থিতিশীল থাকেনি। মেরুঅঞ্চলে বিশাল সীমারেখায় তিন প্রধানশক্তিই তাদের দখলদারিত্বের ঘোষণা দিতে থাকে যখন তখন, যেখানে মূলত কারও বসবাস যেমন নেই, যাওয়াও সম্ভব হয়নি কখনো।
তবে শক্তির ভারসাম্য বরাবরই কম-বেশি নিশ্চিত থাকে, আর প্রতিটি প্রধান-রাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে যায় অক্ষত। অধিকন্তু, বিশ্ব অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য বিষুবমণ্ডলীয় এই বঞ্চিত মানুষের শ্রমের বাস্তবিক অর্থে কোনো প্রয়োজন নেই। তারা বিশ্বের সম্পদে কোনো মূল্যই যোগ করে না, কারণ তারা যা কিছু উৎপাদন করে তা যুদ্ধের কাজেই ব্যয় হয়ে যায়। আর যা যুদ্ধের উদ্রেক ঘটায় তা তো ভালোভাবে জিইয়ে রাখতেই হবে যাতে আরও একটি যুদ্ধের উদ্রেক ঘটে। এই দাসশ্রেণির মানুষগুলো তাদের শ্রম দিয়ে যুদ্ধকে নতুন নতুন গতি দেয়। কিন্তু তাদের অস্তিত্ব যদি না থাকত, বিশ্ব সমাজের কাঠামো, আর সে কাঠামো ধরে রাখার প্রক্রিয়া খুব বেশি ভিন্ন কিছু হতো না।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৫১তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫০) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।