ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৫১তম কিস্তি
___________________________________

ব্যক্তিমালিকানা আর বিলাসিতার বিবেচনায় সম্পদের সমবণ্টণ হবে, কিন্তু ক্ষমতা ছোট্ট একটি প্রাধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণির হাতে থাকবে এমন একটা সমাজ কল্পনাও এখন অবাস্তব নয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এমন একটি সমাজ স্থায়ী রূপ নিতে পারছে না। কাজের পর বিশ্রাম আর নিরাপত্তা যদি সকলের জন্য সমান হয়ে যায় তখন মানব গোষ্ঠীর একটা বড় অংশ, যারা দারিদ্র্যের কারণেই নির্বোধ, তারা শিক্ষিত হয়ে উঠবে, নিজেদের নিয়ে ভাবতে শিখবে। আর যখনই তারা সেটা করবে তখন খুব দ্রুত কিংবা আরও পরে তাদের কাছে ধরা পড়ে যাবে সুবিধাভোগী সংখ্যালঘুদের আসলে কোনো কাজ নেই। আর তখন তারা এদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে।



একটি আধিপত্যবাদী সমাজ নিশ্চিত করা কেবল তখনই সম্ভব যখন দারিদ্র্য থাকে, থাকে বঞ্চনা। অতীতের কৃষি সভ্যতায় ফিরে যাওয়া, কোনো কোনো চিন্তাবিদ বিশ শতকের গোড়ার দিকে যেমনটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, তাও কোনো বাস্তবসম্মত সমাধান নয়। এতে বিরোধ বাঁধে যান্ত্রিকীকরণের সঙ্গে, যা এখন মোটামুটি গোটা বিশ্বেরই প্রবণতা। তবে যেসব দেশ শিল্পে পিছিয়ে তারা সামরিক বিবেচনায় হয়ে পড়ে অসহায়। তখন এরা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অপেক্ষাকৃত এগিয়ে থাকা শত্রু-দেশের হাতে শাসিত ও শোষিত হতে থাকে।

পণ্যের সুফল থেকে বঞ্চিত রেখে দারিদ্র্য জিইয়ে রাখার মধ্য দিয়ে কোনো সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেল না। পুঁজিবাদের চূড়ান্ত দিনগুলোতে, মোটা দাগে ১৯২০ থেকে ১৯৪০ এর মধ্যে, ঘটনাটি ঠিক এমনই ঘটল। অনেক দেশের অর্থনীতি  স্থবির হয়ে গেল, ভূমি পড়ে থাকল অনাবাদী, মৌলিক যন্ত্রপাতি রয়ে গেল অনেকের কাছেই অধরা, বৃহৎ বৃহৎ চাক ধরে জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে থাকল, আর হয়ে পড়ল রাষ্ট্রীয় চ্যারিটির অনুদাননির্ভর। কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হলো না, সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে আসলো, চেপে বসল অকারণ দারিদ্র্য আর তাতে বিরোধী শক্তির দানা বেঁধে ওঠা অনিবার্য হয়ে উঠল। শিল্পের চাকা ঘুরবে কিন্তু বিশ্বের প্রকৃত সম্পদ বাড়বে না এমন একটি পথ বের করা তখন হয়ে পড়ল সত্যিকারের সমস্যা। পণ্য তৈরি হবে কিন্তু তার বণ্টন থাকবে না সেটাই ছিল লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য পূরণের একটাই পথ দাঁড়াল, তা হলো যুদ্ধ জিইয়ে রাখা।

বিনাশই যুদ্ধের অনিবার্য রূপ। এমন নয়, সে বিনাশ হতে হবে কেবলই মানব জীবনের, হতে পারে তা পণ্যের বিনাশ, কিংবা মানব শ্রমেরও। মানবজীবন সহজ করে তুলতে পারত, কিংবা পরিণামে তাদের করে তুলতে পারত আরো বুদ্ধিমান, এমন সব কিছুকে খান-খান করে আকাশে-অন্তরীক্ষে ছড়িয়ে দেয়, অথবা সাগরের অতলান্তে তলিয়ে দেয় এই যুদ্ধ। এমনকি অস্ত্রে অস্ত্রে যখন সয়লাব হয়ে থাকে, ব্যবহার নেই, ধ্বংসও হচ্ছে না তখনো এর প্রস্তুতকরণে নিয়োজিত থাকে বৃহৎ শ্রমশক্তি যারা স্রেফ তাই উৎপাদন করে চলে যার কোনো ভোক্তা নেই।

একটি ভাসমান দূর্গের কথাই ধরা যাক, এই দূর্গে শ্রমিকরা শত শত কার্গো জাহাজ তৈরিতে ন্যস্ত। জানা আছে এসব জাহাজ একসময় পরিণত হবে ভাঙারির সামগ্রীতে, বাস্তবে কোনো কাজেই লাগবে না, কারো জন্য বয়ে আনবে না বস্তুগত কোনো সুবিধাও। কিন্তু তারপরেও আরেকটি অতিকায় ভাসমান দূর্গই তৈরি হবে। নীতিগতভাবে জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো মিটিয়ে যা উদ্বৃত্ত থাকবে যুদ্ধ পরিকল্পনা হতে হয় তারই ভিত্তিতে, কিন্তু বাস্তবে জনগণের প্রয়োজনকে ঊন জ্ঞান করা হয় আর তার ফলে মানুষের জীবনের জন্য যা প্রয়োজন তার আধাই অপূর্ণ থেকে যায়। আর সেই অপূর্ণতাকেই আবার দেখা হয় বড় ধরনের সুবিধা হিসেবে।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৩তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।