১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৩তম কিস্তি
___________________________________
ইনার পার্টির সব সদস্যের বিশ্বাসের মর্মমূলে গেঁথে আছে এক অনাগত বিজয়। হতে পারে এই বিজয় সুনিশ্চিত হবে একের পর এক নতুন ভূ-খণ্ড দখল করে তার মধ্য দিয়ে এক বিপুল শক্তির অধিকারী হয়ে, অথবা নতুন কোনো অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। নতুন অস্ত্রের এই সন্ধান চলে অবিরাম, নিরবচ্ছিন্ন, আর যে গুটিকয় কাজে উদ্ভাবনী কিংবা অনুধাবনীয় মন নিয়োজিত এটি তারও একটি। বিজ্ঞান বলতে যা বুঝায় ওশেনিয়ায় তা আজ অবর্তমান। নিউস্পিকে ‘বিজ্ঞান’ নামক শব্দটিই উঠে গেছে। চিন্তার প্রায়োগিক পদ্ধতি, যার ভিত্তিতেই অতীতের সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, তা আজ ইংসকের প্রায় সকল মূলনীতি দ্বারা প্রতিহত। আর কারিগরি অগ্রগতিও কেবল তখনই দেখা যায় যখন এর পণ্য কোনো না কোনো পথে মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করায় ব্যবহৃত হয়।
বিশ্বের সকল প্রয়োজনীয় মূর্ত সুন্দরের সৃজন হয় থমকে আছে, নয়ত পেছনের দিকে যাচ্ছে। জমি চাষ হচ্ছে ঘোড়ায় টানা লাঙ্গলে অথচ বইগুলো রচিত হচ্ছে যন্ত্রে। তবে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যেমন, অর্থ, প্রভাব, যুদ্ধ আর পুলিশি গোয়েন্দাগিরিতে প্রায়োগিক দৃষ্টিভঙ্গিকেই উৎসাহিত করা হচ্ছে, অথবা অন্তত সহ্য করে যাওয়া হচ্ছে। দলের দুটিই লক্ষ্য—গোটা পৃথিবীর উপরিতল করায়ত্ব করা আর স্বাধীন চিন্তার সকল সম্ভাবনা চিরতরে মিইয়ে দেওয়া। এই পথে দুটো বৃহৎ চাওয়া থেকে যাচ্ছে যার সমাধানের পথ বের করতে না পারায় পার্টি উদ্বিগ্ন। একটি, কিভাবে অন্য কেউ কী ভাবছে তা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই জেনে নেওয়া যায়, আর অন্যটি হচ্ছে, কী করে কয়েক কোটি মানুষকে আগেভাগে সতর্ক না করে, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মেরে ফেলা সম্ভব।
বিজ্ঞান গবেষণা যেহেতু এখনো বর্তমান, তাই এখন এর বিষয়বস্তু এই একটাই। এখনকার বিজ্ঞানী হয় মনস্তত্ত্ববিদ আর অনুসন্ধাতার মিশেল একটি রূপ, যারা চেহারার অভিব্যক্তি, অঙ্গভঙ্গি, কণ্ঠের আওয়াজ থেকে বোঝার চেষ্টা করেন আর ওষুধের ব্যবহার, ছ্যাকা, সংবেশন, শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে সত্য আদায়ের কৌশল পরীক্ষায় সময় পার করেন, নয়ত তারা স্রেফ রসায়নবিদ, পদার্থবিদ বা জৈববিদ যারা যে যার শাখার কোন পথে জীবন নেওয়া যায় সে সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। শান্তি মন্ত্রণালয়ের বিশাল পরীক্ষাগারে, আর ব্রাজিলের জঙ্গলে লুক্কায়িত পরীক্ষণ স্টেশনে, অথবা অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে, নয়ত অ্যানটার্কটিকার হারানো দ্বীপমালায় বিশেষজ্ঞের দলগুলো অতন্দ্রিত কাজ করে যাচ্ছে।
কেউ কেউ ভবিষ্যত যুদ্ধের উপকরণ তৈরি পরিকল্পনায় ন্যস্ত; অন্যরা বড় থেকে আরো বড় রকেট বোমা, আরো বেশি বেশি শক্তিশালী বিস্ফোরক, তৈরি, আরো অভেদ্য সাজোয়া যান নির্মাণের পথ বাতলে দিতে ব্যস্ত; আর অন্যরা আরো ভয়ঙ্কর মরক সৃষ্টিকারী গ্যাসের সন্ধানে, অথবা এমন দ্রবণীয় বিষ আবিষ্কারে যা এতটা পরিমাণে উৎপাদন সম্ভব যা দিয়ে গোটা মহাদেশের গাছ-লতা-পাতা ধ্বংস করে দেওয়া যায়, অথবা সম্ভাব্য সব ধরনের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অকেজো করে দিয়ে মানব শরীরে সংক্রমিত হতে পারে এমন রোগের জীবাণু প্রজনন; অন্যরা মনোনিবেশ করে আছে এমন যানবাহন আবিষ্কারে যা মাটির গভীরে প্রোথিত হতে পারবে, সাবমেরিনের মতো তলিয়ে যেতে পারবে পানির অতলে, অথবা এমন উড়োজাহাজ যা আকাশে উড়বে আবার পানিতেও ভাসবে; অন্যরা আরো দূরের সম্ভাবনাকে নিয়েও ঘাঁটাঘাঁটি করছে যাতে মহাকাশের হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের সূর্যের রশ্নি লেন্সের সাহায্যে ধরা, অথবা পৃথিবীর কেন্দ্রে তাপ কেন্দ্রীভূত করে কৃত্রিম ভূমিকম্প আর জলোচ্ছাসের সৃষ্টি করা সম্ভব।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৫তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।