১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৫তম কিস্তি
___________________________________
ইউরেশিয়ার কথা বলা যায়, এরা চাইলেই ব্রিটিশ দ্বীপগুলো দখলে নিতে পারে, ভৌগলিকভাবেও ওগুলো ইউরোপের অংশ; অন্যদিকে ওশেনিয়ার পক্ষে তার সীমারেখা চাইলেই রাইন নদী পর্যন্ত এমনকি ভিস্টুলা পর্যন্ত ছড়িয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু তা সাংস্কৃতিক অখণ্ডতার নীতি ভঙ্গ করবে, যদিও এমন নীতি কস্মিনকালেও গঠন করা হয়নি। ফ্রান্স বা জার্মানি নামে পরিচিত অঞ্চলগুলো ওশেনিয়া দখল করতে চাইলে, হয় এর বাসিন্দাদের নিঃশেষ করে দিতে হবে, যা বিশাল এক কঠিন কাজ, নয়ত মোটামুটি কোটি দশেক মানুষের দায়িত্ব নিয়ে নিতে হবে, যারা, কারিগরি উন্নয়ন যতদূর এগিয়েছে তাতে, অনেকাংশেই ওশেনিয়ার সমানে সমান।
এই সমস্যা তিন পরাশক্তির জন্যই একই রকম। তাদের প্রত্যেকের রাষ্ট্র কাঠামোয় যুদ্ধবন্দি আর কালো কৃতদাসদের ছাড়া আর কোনো বিদেশিকে স্বাগত জানানোর সুযোগ নেই। এমনকি এখন যে কাগজে কলমে মিত্রপক্ষ তাদের ওপরও থাকে সার্বক্ষণিক সন্দেহের চোখ। যুদ্ধবন্দিদের বাদ দিলে, ওশেনিয়ার নাগরিকরা ইউরেশিয়া বা ইস্টেশিয়ার কোনো একটি মানুষকেও কোনো দিন চোখেও দেখেনি। আর বিদেশি ভাষা শিক্ষাও তার জন্য বারণ। কেউ যদি কোনো বিদেশি সম্পর্কে জানতে বা যোগাযোগ করতে চায়, তাকে বলা হয় এরা ঠিক তারই মতো এক সৃষ্টি, আর এর বাইরে যা কিছু বলা হবে তার সবটাই মিথ্যা। যে মোহর এঁটে দেওয়া জগতে তার বিচরণ তা একদিন ভাঙবে, আর ভয়, ঘৃণা ও সাধুম্মন্যতার যে মনোভাব পোষণ করে চলছে তাও একদিন উবে যাবে। তাহলে সব দিক বিবেচনায় বোঝাই যাচ্ছে যতবারই পারস্য কিংবা মিসর কিংবা জাভা কিংবা শিলন তাদের হাত বদলাক, বোমা ছাড়া আর কিছুই মূল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে পড়বে না।
এর আড়ালে লুক্কায়িত এক সত্য যা কখনোই উচ্চকিত কণ্ঠে উচ্চারণ হয়নি, কিন্তু নীরবে বোধগম্য আর ইঙ্গিতবহ, তা হচ্ছে তিন প্রধান শক্তিতেই জীবন একইরকম। ওশেনিয়ার বর্তমান দর্শনের নাম ইংসক, ইউরেশিয়ায় এর নাম নব্য-বলশেভিকবাদ, আর ইস্টেশিয়ায় এর রয়েছে একটি চীনা নাম যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায় মৃত্যু-পূজা, তবে সাধারণ অর্থ নিজেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। ওশেনিয়ার কোনো নাগরিকেরই অন্য দুই দর্শনের ব্যাপারে কিছু জানার বা বোঝার অনুমতি নেই, তবে সাধারণভাবে তার মাথায় যা ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তা হচ্ছে এদের ঘৃণা করতে হবে আর তা হতে হবে বর্বরোচিতভাবে।
তিন দর্শনকে কদাচই আলাদা করে নির্দেশ করা যায়, আর তারা যে সমাজ কাঠামো অনুসরণ করছে তা আলাদা করা যাবেই না। সবক্ষেত্রেই একই পিরামিডীয় কাঠামো, নেতার প্রতি একই দেবতাতুল্য পূজা, আর ঘটমান যুদ্ধাবস্থায় একই অর্থনীতি। এতে বলা যায় তিন প্রধান দেশের একের পক্ষে অন্যকে জয় করা সম্ভব নয়, আর করলেও তা থেকে কোনো সুফল আসবে না। বরং তারা সংঘাত জিইয়ে রেখে একে অন্যকে ঠেকনা দিয়ে রাখছে, ভুট্টার তিনটি ছড়া ঠিক যেভাবে থাকে। তিনটি শক্তিরই শাসকেরা যা কিছু করছে তা সম্পর্কে তারা একই সঙ্গে সতর্ক আবার অসতর্কও। তাদের জীবন বিশ্বজয়ে নিয়োজিত, কিন্তু তারা এটাও জানে এই যুদ্ধ চলতে হবে অন্তহীন-অবিরাম যার কোনো বিজয় থাকবে না। যুদ্ধজয়ের বিপদ না ঘটে যাওয়ার এই নিশ্চয়তা শাসকদের সকল বাস্তবতাকে অস্বীকার করার সুযোগ করে দেয়। আর সেটাই মূলত ইংসক বা এর শত্রুপক্ষগুলোর চিন্তা প্রক্রিয়ার বিশেষ দিক। এখানে আবারও বলতে হয়, আগেও বলা হয়েছে, টানা এক যুদ্ধাবস্থা মূলত যুদ্ধের চরিত্রটিই পাল্টে দিয়েছে।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৭তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।