তৃতীয় কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন
৪.
‘কী সর্বনাশ, ভাই!’
‘কী হলো ভাই?’
‘আমার হাতটা একটু দেখে দেন তো। নাকি ট্যাবে ছবি নিয়ে দেখবেন? আমার ট্যাবে ছবি নিলে হবে?’
‘এসব আবার কী কথা বলেন, ভাই? আমি হাত দেখে দেব মানে? আবার ট্যাবে ছবি উঠিয়ে মানে? বুঝলাম না, ভাই।
‘এই তো ভাই। আপনি তো আবার আমাকে কখনও দেখেননি। ’
‘বুঝলাম না, ভাই। ’
‘তা কি আর বোঝার কথা ভাই? কেন্টে কী আর কোনো মঈন জুবেরি গিয়েছিল নাকি? গত এপ্রিলে?’
‘তা কেন ভাই?’
‘তাহলে কেন্টবাসী বংললনাদের হস্তরেখা কে বিচার করল ভাই? তাও আবার কোনো ললনার হাত নাকি ধরে দেখেনি। ট্যাবে হাতের ছবি তুলে দেখেছে। ’
‘এসব ভাই আপনি কোত্থেকে শুনেছেন?’
‘শুনেছি ভাই। এ হলো ইনফরমেশন টেকনোলজির যুগ। গোপন কথাটি রবে না গোপনে। ঈভা কে, ভাই?’
‘কে ভাই? ঈভা লঙ্গেরিয়া? মডেল না মেয়েটা?’
‘ঈভা লঙ্গেরিয়া মডেল। এসব খবর আপনি খুব ভালো রাখেন। ঈভা লঙ্গেরিয়ার ব্রায়ের মাপও নিশ্চয় মুখস্থ করে রেখেছেন? মল্লিকা শেরওয়াত শনিবার রাতে কয়টা ডিম পেড়েছে জানেন?’
‘দুইটা ভাই। ছবিও দেখেছি ডিমের। ’
‘আপনিও দেখেছেন! ফেসবুকে! আপনি ভাই একটা স্মার্ট মানুষ। কিন্তু এটা কি ভাই ব্যাপক পর্যায়ের বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? ছবির ক্যাপশন কী দিয়েছে দেখেছেন? বাংলা ইংলিশ হিন্দি ভাষায় দিয়েছে। মল্লিকা শেরওয়াতের ডিম, এগস অব মল্লিকা শেরওয়াত, মল্লিকা শেরওয়াত কি আণ্ডা। এর মধ্যে লাইক দিয়েছে আট হাজার একুশ জন। মল্লিকা শেরওয়াত যদি দেখে মানহানির মামলা করে দেয়? মুরগির নাম কেউ মল্লিকা শেরওয়াত রাখে?’
‘সে রাখে, ভাই। কেন বেজিটার কথা মনে নেই?’
‘ঢেঁড়শ। ’
‘তাহলেই বোঝেন! বেজির নাম ঢেঁড়শ রাখতে পারে যে তার পক্ষে কী-না সম্ভব? মল্লিকা শেরওয়াত! মুরগির নাম যে ভাই দীপিকা পাডুকোন রাখেনি, এ-ই কত। দীপিকা পাডুকোনের ডিম। চিন্তা করতে পারেন?’
‘এই ঘটনা ঘটালে ভাই আমি ওকে জাস্ট জবাই করে ফেলতাম। ডিম ফোটার আগেই। ’
‘কার ডিম ভাই? দীপিকা পাডুকোনের?’
‘ভাই, আপনিও কিন্তু সীমা লঙ্ঘন করলেন। মাইন্ড করলাম। ’
‘স্যরি, ভাই। আপনাকে হার্ট করতে চাইনি এভাবে। কিন্তু কথা হলো কী, আমার হলো ভাই, এক জবান। মনে এক মুখে আরেক, এই নীতি বিশ্বাস করি না তো ভাই। মনে যা আসে বলে ফেলি। ভাবলাম মল্লিকা শেরওয়াত ডিম পাড়তে পারলে আর কেউ কেন পারবে না? তারা কম কী?’
‘সেটা আপনার দেবী পাড়ুক না, ভাই!’
‘আর দেবী! দেবীর কথা আর বলবেন না ভাই। দেবী আমার প্রতি বড় নারাজ হয়েছেন অতি সম্প্রতি। ’
‘কেন ভাই? কী হয়েছে?’
‘আরে ভাই, দেবীর জন্মদিন ছিল কবে? দাঁড়ান। এই তো গত বৃহস্পতিবারে। রাত বারোটায় আপনার ভাবির পাশে শুয়ে আমি কী করে তাকে উইশ করি বলেন? পরদিন বাসা থেকে বেরিয়েই করেছি। ’
‘ও। কখন?’
‘এই তো রাত আটটায় ভাই। আমি কী করব বলেন? বেয়াই বেয়াইন দুই দিন ধরে বাসায়। বাসা থেকে বের হওয়া যায়? আমি কি ভাই চাকরিবাকরি করি? দেবী হয়ে সে এটা বুঝবে না?’
‘তা তো ভাই, ঠিকই। ’
‘তবে?’
‘তবে আর কী? ঈভার কথা বলেন। কেন্টের ঈভা। স্টোরিটেলার। ’
‘ও-ও-ও-ও। ঈভনিং ইন প্যারিস। ও তো একটা পাগলী তো ভাই। আপনি এই পাগলীকে কী করে চিনলেন?’
‘আপনি তার হাত দেখে বলেছেন আরও একটা বিয়ে করবে সে?’
‘আরে ভাই, হাত দেখে বলতে হয় এসব? এই পাগলী আরও একবার, পারলে আর দশবার বিয়ে করবে, দেখবেন। এর জন্য হাতের রেখা দেখতে হয়?’
‘আপনি হাতের রেখার কিছু বোঝেন? এই যে, লাইফ লাইন কোনটা বলেন তো?’
‘আপনি দেখি সিরিয়াস, ভাই। ক্যান্ট একটা বিশ্রী চুপচাপ জায়গা তো। সময় কাটানোর জন্য এসব ভুং ভাং আর কী। ’
‘আগে অস্বীকার করলেন কেন তাহলে?’
‘বেটার লেইট দ্যান নেভার তো, ভাই। ’
‘আপনার ভাই তুলনা হয় না। শোনেন, ঈভা... আমি আর ঈভা প্রেম করতাম। ’
‘এই-ই-ই দেখেন! পাগলীর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে? সে আপনাকে কিছু বলেনি?’
‘কী বলবে? আপনার কথামতো সে আরও একটা বিয়ে করে ফেলেছে?’
‘আরে, না, ভাই। আবার ফোন করলে জিজ্ঞেস করবেন তো, তাকে আমি আপনার কথা স্পষ্ট করে বলেছি কি-না?’
‘আমার কথা!’
‘ওই আর কি! আমি তো তাকে বলেছি ভাই, ক্রিয়েটিভ একজন মানুষের সঙ্গে তার এক সময় রিলেশন ছিল। সে তো স্বীকারও করেছে। কেন আপনাকে কিছু বলেনি?’
‘মালিবাগে পাড়ার মুরুব্বি, শাহবাগ এলাকায় দেবীর গুরু, কেন্টে গিয়ে হস্তরেখা বিশারদ, আর কত রূপ দেখাবেন, ভাই?’
‘আমার থিওরি হলো কী ভাই, দুনিয়া আনন্দময়, করো যার যা মনে হয়। আপনি কি দ্বিমত পোষণ করেন, ভাই?’
ভাইয়ের সঙ্গে কাল দেখা হবে এবং এই জাতীয় কথাবার্তা হবে?
ভাই অতি উচ্চমার্গের মানুষ। পণ্ডিত ব্যক্তি। মিথ্যা চর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক। ফানি ওল্ডম্যান।
৫ম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৫