ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বৃষ্টির জন্মভূমি | ধ্রুব এষ (কিস্তি ৫)

ধারাবাহিক উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
বৃষ্টির জন্মভূমি | ধ্রুব এষ (কিস্তি ৫) অলংকরণ : মাহবুবুল হক

চতুর্থ কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন

৫.
ওল্ডম্যান না, ওল্ড স্মাগলার।
মল্টেড হুইস্কি।


একটা বোতল আছে সেলারে।
কাল সন্ধ্যায় পান করা যেতে পারে।
সেলিব্রেশন।
ছাদে বসা যাবে। কে কে থাকবে?
সর্বজনাব ভাই তো অবশ্যই।

ক্রমান্বয়ে তরলদা, ঠাকুর, মামুন, শাকিল এবং বিশিষ্ট আঁতেল বগা ওয়াদুদ থাকতে পারে। তরলদা আর্টিস্ট, ঠাকুর কবি, মামুন এনজিওজীবী, শাকিল প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। অতপর বগা ওয়াদুদ। মূর্তিমান একটা হোয়াট নট বগা। গবেষক, কবি, আর্টিস্ট, গীতিকার, বুদ্ধিজীবী, শর্টফিল্ম মেকার এবং ব্লগার। মোবাইল ফোনে ঊনচল্লিশ সেকেন্ডের একটা শর্টফিল্ম বানিয়েছে। যাকে পায় তাকে দেখায়। ইলাকে দেখিয়েছে ১৩শ’ বার। কি-না, সে একটা ফিচার ফিল্ম বানাবে। জীবন ঘনিষ্ঠ ছবি। সেই ছবির নায়িকা হবে ইলা। নায়ক এখনও ঠিক করতে পারেনি। তেমন কাউকে যদি না পায় নিজেই করবে রোলটা। নায়কের সঙ্গে নায়িকার কিছু ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থাকবে ছবিতে। শালা ছাগল! কুত্তা বানাতে হবে ছাগলটাকে। বলতে হবে ইলা তার ফিল্মে ব্লাউজ না পরে অভিনয় করবে।

শোনামাত্র কী ঘটবে? কুত্তা হয়ে যাবে ছাগলটা! ঘেউ ঘেউ করে উঠবে আশাতীত আনন্দে! ছা-গল!
ঘুম ধরেছে। অল্প।
ঘুমিয়ে পড়বে?
মাথা খারাপ!
মাইলস টু ওয়াক বিফোর স্লিপ।
ভাবতে হবে এখন অনেক।
মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করতে হবে।
ক্রিয়েটিভ পারসন।
দেখা যাবে এখন কতটা ক্রিয়েটিভ?
এখন পর্যন্ত গ্রিপে আছে ঘটনা।
হাউজিঙের সিকিউরিটিরা আজ তাকে দেখেনি।

দুপুরে রিসেপশন থেকে কল করেছিল একবার। সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে এসেছিল কেউ। ইলা কল ধরেছিল। বলে দিয়েছে, ‘উনি বাসায় নেই। ’

সিকিউরিটিরা সন্ধ্যা সাতটার পর আবু ইয়ামিনের নীল গাড়িটা দেখেছে। আবু ইয়ামিন একা ছিল গাড়িতে। হাউজিংয়ের পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে সে দুই নম্বর লিফটে উঠেছে। লিফটম্যান গাবরু সরদার দেখেছে।

গাবরু সরদার। নাম শুনে জোয়ান মর্দ মনে হয়। তা না। মানুষটা ছোট সাইজের। হাইট কত হবে? তিন ফুট চার-পাঁচ ইঞ্চি। বয়স, ৪৮। আনুমানিক।

সিকিউরিটি গার্ডদের যেরকম বশ করে ফেলেছে আবু ইয়ামিন, গাবরু সরদারকে তেমন পারেনি। গাবরু সরদার কিছু নীতি মেনে চলে। তার নিজস্ব কিছু হিসাব-নিকাশ আছে। ভালো-মন্দের ভেদ নিজের মতো করে।

তবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আজকেও আবু ইয়ামিন লিফটে উঠে কিছু কথাবার্তা বলেছে গাবরু সরদারের সঙ্গে।

‘কেমন আছো, গাবরু? ভালো?’
‘জি। ’
‘তোমার বউ-বাচ্চা কেমন আছে? ভালো?’
‘জি। ’
‘তোমার তো একটাই ছেলে?’
‘জি। ’
‘সাত বছর বয়স না এখন?’
‘জি। ’
‘স্কুলে পড়ে?’
‘জি। ’
‘সেও তোমার সাইজের হয়েছে?’
‘জি। ’
‘তোমার বউ কি তোমার সাইজের?’
‘জি। ’
‘তোমরা তাহলে প্রকৃত অর্থেই ছোট পরিবার সুখী পরিবার?’
‘জি। ’

লিফট সেভেনথ ফ্লোর পর্যন্ত ওঠে। সিক্সথ ফ্লোরে নেমে গেছে আবু ইয়ামিন। কায়দা। কী মনে করে? গাবরু সরদার কায়দা ধরতে পারে না? হেঁটে ফিফথ ফ্লোরে নেমে যাওয়ার কায়দা। হায়রে মানুষ! এই হাউজিংয়ের কম কুকীর্তির খবর রাখে গাবরু সরদার? বউ ছাড়া আর কাউকে সেসব কথা বলে না ব’লে! আবার কিছু কথা বউকেও বলে না। জায়গামতো বলে। আবু ইয়ামিনের কথা যেমন।
কাক স্বভাব। আবু ইয়ামিনের।
কী মনে করে?
কেউ কিছু জানে না? কিছু বোঝে না?
হায়রে মানুষ!
সিকিউরিটিরা পর্যন্ত জানে কাহিনী।
বছর দেড়েক ধরে ঘটনা ঘটছে।
দেড় মাসে দুই মাসে একবার এই হাউজিংয়ে আসে আবু ইয়ামিন। ফিফথ ফ্লোরে যায়। ইন্টারেস্টিং একটা তথ্য আছে এখানে। আবু ইয়ামিনের চোখের রং কী? এটা কিন্তু জানে না সিকিউরিটির কেউই। সর্বজ্ঞ গাবরু সরদারও না। দেখেনি কখনও। ডার্কগ্লাস পরে থাকে আবু ইয়ামিন। দিনেও, রাতেও। এই হাউজিংয়ে যখনই আসে।

শীতকালের এক বিকেলে প্রথম আবির্ভাব।
সিকিউরিটি আটকে ছিল গেটে।
‘কই যাইবেন, স্যার?’
‘ফিফথ ফ্লোরে। ই-ফোর। ’
‘স্যারের কাছে? এক মিনিট... স্যার...?’
‘স্যার না, ম্যাডামের কাছে যাব। ’
‘এক মিনিট, স্যার। ... ম্যাডাম? ... স্যার, আপনার নামটা কাইন্ডলি বলবেন?’
‘ইয়ামিন। ’
‘ইয়ামিন স্যার, ম্যাডাম। ... জি, ম্যাডাম। ... জি, জি... স্যার, প্লিজ। ’
জন্মদিন ছিল সেদিন ইলার।
দারুণ সারপ্রাইজড হয়েছিল ইলা।
যাওয়ার সময় সিকিউরিটিদের সন্তুষ্ট করে গিয়েছিল আবু ইয়ামিন। পরেও সন্তুষ্টি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সিকিউরিটি আর তাকে আটকায় না।
ফিফথ ফ্লোরের ফ্ল্যাট ই-ফোর।
ই-ফোরের ম্যাডামের সঙ্গে সম্পর্ক আবু ইয়ামিনের।
নীতিগতভাবে এ রকম ব্যাপার কখনও মেনে নিতে পারেনি গাবরু সরদার এবং কখনও পারবেও না। এ কারণে ই-ফোরের সাহেবের জন্য বুকে অনেক দরদ লাগে তার। ই-ফোরের ম্যাডামকে মনে হয় চুড়াইল।
কিছুদিন আগে একটা হিন্দি ছবি দেখে এই শব্দটা শিখেছে গাবরু সরদার। ডাইনীকে হিন্দিতে বলে চুড়াইল।
চুড়াইল ম্যাডাম।
ই-ফোরের ম্যাডাম ইলা।

৬ষ্ঠ কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।