পঞ্চম কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন
৬.
‘ম্যাডাম ইলা। ’
‘কিহ্! কী বলো!’
‘কোথায় একটা নদী আছে অর্পনগাছিয়া।
‘অর্পনগাছিয়া?’
‘হ্যাঁ। আমরা একদিন অর্পনগাছিয়ায় যাব। ’
‘যাব। ’
‘ম্যাডাম ইলা। ’
‘হুঁ?’
‘কোথায় একটা নদী আছে কাসালং। ’
‘কাসালং?’
‘হ্যাঁ। আমরা একদিন কাসালঙে যাব। ’
‘যাব। ’
‘ম্যাডাম ইলা। ’
‘হুঁ?’
‘কোথায় একটা নদী আছে পিয়াইন। ’
‘পিয়াইন!’
‘হ্যাঁ। ’
‘থাকুক। আমি এখন আর কোথাও যাব না, বাবা। আমার ঘুম পাচ্ছে। ’
এ রকম দিন ছিল। এবং রাত ছিল।
আজকের দিনটা?
সে রকম ছিল না?
ইলা ঘুম থেকে উঠে ছয়টায়।
তানিয়ার মা আসে আটটায়।
তানিয়ার মা। বয়স চল্লিশের ধারে কাছে হবে। রিমা খালা জোগাড় করে দিয়েছেন। ইলার এই দূর সম্পর্কের খালা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বুয়া কনসালট্যান্ট। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় সুনামের সঙ্গে বুয়া সাপ্লাই দিয়েছেন। সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড। বুয়া কনসালট্যান্সির জন্য ফি নেন না। তানিয়ার মা থাকে বাবুপুরা বস্তিতে। সকাল আটটায় এসে বারোটায় চলে যায়। আজ আসবে না, কাল বলে গেছে।
এটা সে জানত না।
সাড়ে আটটায় ঘুম থেকে উঠে যখন দেখল কিচেনে ইলা আটার রুটি বেলছে, বলল, ‘মহীয়সী আসেননি এখনও?’
ইলা হাসল। বলল, ‘আসবেন না। ’
‘আসবেন না? আসবেন না কেন?’
‘বেচারির আজ বিয়ে। কী করে আসবে, বলো?’
‘বিয়ে মানে? সে কি সিঙ্গেল মাদার ছিল এতদিন?’
‘না। তানিয়ার বাপের সঙ্গে রিসেন্টলি তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। আচ্ছা, এই তানিয়ার মায়ের নাম কী বলো তো?’
‘কী?’
‘বিশ্বাস করবে না। সুইটি। ’
‘বিশ্বাস করলাম। সত্যি আজ সুইটি বেগমের বিয়ে? তোমাকে দাওয়াত করেনি?’
‘তোমাকেও দাওয়াত করেছে। যাবে?’
‘না, আজ আমি কোথাও যাব না। ’
‘সত্যি যাবে না? তাহলে আমিও কোথাও যাব না। ’
‘যাব না, দেখো। কেউ এলেও দেখা করব না। তুমি বলে দিও, আমি বাসায় নেই। ’
‘সত্যি বলছো তুমি? সত্যি? তিন সত্যি বল। ’
‘অত্যি, অত্যি, অত্যি। ’
‘কিহ্? স বল। ’
‘স স স। ’
‘এ আবার কী? ভালো করে বলো, সত্যি, সত্যি, সত্যি। বলো। ’
‘চুমু! চুমু! চুমু!’
‘অ্যাই! অ্যাই! একী! রুটি ছয়কোণা হয়ে যাবে তো। ’
‘ছয়কোণা! তিন ছয়ে আঠারো কোণা হয়ে যাক!’
‘নাশতা করবে না? নাশতা করো আগে!’
‘আরে, রাখ তোর নাশতা!’
‘লক্ষ্মী না!’
‘উঁহু। ’
মর্নিং শোজ দ্য ডে।
সূর্যের রক্তচক্ষুকে ভেঙিয়ে, বলার মতো চমৎকার একটা দিন গেছে।
বিস্তর ছেলেমানুষি হয়েছে।
‘রমাকান্ত কামার। ’
‘সুবল লাল বসু। ’
‘আর?’
‘সদানন্দন দাস। ’
‘তুমি একটা জিনিয়াস, বউ! ওহ্!’
‘অ্যাই! খবরদার! নো ধান্দা!’
‘বেডরুমের লাইট জ্বলছে। কিন্তু খাট দেখা যাচ্ছে না। কেন?’
‘কেন আবার, বেডরুমের দরজা আটকানো। ’
‘তুমি একটা জিনিয়াস, বউ! ওহ্! তুমি একটা য়া ছাড়া জিনিয়াস!’
‘আ ছাড়া জিনিয়াস মানে?’
‘আ না, অন্তঃস্থ য়-য়ে আকারে য়া। ’
‘কী? র্ওরেহ!’
সন্ধ্যার আগে আগে ছাদে উঠেছিল তারা। গোধুলি দেখেছে। উত্তপ্ত দিনের পর আশ্চর্য গোধূলি। আজব এক কমলা রং ফুটেছিল আকাশে। চোখে-মুখে সেই কমলা রং নিয়ে সন্ধ্যা নামার পর নিচে নেমে গেছে ইলা। সে বসেছিল। কতক্ষণ? দুই ঘণ্টা।
হাউজিংয়ের ছাদ। অলিখিতভাবে ওঠা নিষেধ। তেমন একটা কেউ ওঠেও না। তারা ওঠে এবং আড্ডা দেয়। ধোঁয়া ওড়ায়, জল শুষে নেয়। সে, ভাই, মামুন, তরলদা, ঠাকুর, শাকিল। সিকিউরিটিরা দেখলেও কিছু বলে না। সিকিউরিটিদের হেড রশিদুন্নবী। তার সঙ্গে বিশেষ খাতির হয়ে গেছে ভাইয়ের। ধোঁয়ার খাতির। ধোঁয়া লাইনের লোক ঠাকুর, মামুন এবং শাকিলও। ভাই আবার যতটা ধোঁয়া লাইনের, ততটাই জলীয় লাইনের। তরলদা পিওর জলীয়। সে, ভাইপন্থী। এমফিবিয়ান। ধর্মেও আছে, জিরাফেও আছে। ধর্ম কী? ধোঁয়া। জিরাফ কী? জল।
ফোন নিয়ে ছাদে উঠেছিল।
কথা বলেছে ভাই, মামুনদের সঙ্গে।
‘ভাই?’
‘জি, ভাই। ’
‘আপনি কোথায়?’
‘এই তো ভাই পথে। মৌচাকে আটকা পড়ে আছি। ’
‘আপনি ভাই সব সময় মৌচাকে থাকেন। হা! হা! হা!’
‘কী করব ভাই? বলি না আমার এক জবান। আজ মৌচাক, কাল ধানমণ্ডি, পরশু পরীবাগে থাকব, এ রকম পাবেন না, ভাই। আপনি কি ছাদে?’
‘আমার তো আপনার মতো এক জবান না, ভাই। আমি উত্তরায়। ’
‘উত্তরায়? ও আল্লাহ! কখন ফিরবেন ভাই?’
‘ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে, ভাই। আজ আর দেখা হবে না। ’
‘ঠিক আছে, ভাই। খোদা হাফেজ। ’
‘খোদা হাফেজ। ’
ভাইয়ের পর মামুন।
‘মামুন, তুই কোথায়?’
‘বাসায়। ’
‘বেরুবি না?’
‘না। দুপুর থেকে প্রচণ্ড মাথা ধরেছে। মাথা তুলতে পারছি না। ’
বাঁচোয়া।
মাথাধরা দীর্ঘজীবী হোক।
তরল দা?
অফিসে। নাইট ডিউটি আজ।
চমৎকার।
শাকিল?
ফোন বন্ধ।
অতএব, এসএমএস।
Shakil, aaJ
Dekha
hobena
কয়েক মিনিট পর রিপ্লাই।
Ok, Kal
ঠাকুর?
ব্যস্ত। সিনেমার গান লিখছে। মিটিং আছে সিনেমার প্রডিউসারের সঙ্গে।
হয়ে গেল। ছাদবাহিনীর কেউ তাহলে আজ আর আসছে না। রশিদুন্নবী টহল দিয়ে গেছে একবার।
কথা হয়েছে।
‘স্যার। ’
‘রশিদুন্নবী। ’
‘স্যার একলা বসে আছেন। ’
‘হ্যাঁ। ’
‘আমার আর স্যারেরা কই?’
‘এই তো, কেউ অফিসে, কেউ বাসায়। আসবে। ’
‘আইচ্ছা, স্যার। আমি আছি। কিছু যদি লাগে কল দিবেন। ’
কিছু মানে ধোঁয়ার আয়োজন। স্টিক, কল্কি অর্ডার মাফিক সরবরাহ করে রশিদুন্নবী।
‘দশটা। ’
‘আইজকা সাধুসঙ্গ হইব না, স্যার?’
‘দেখি, তারা আসুক। ’
‘জি, স্যার। জি, স্যার। ’
সাধুসঙ্গ হলে বসে এবং কল্কিতে দম দিতে পারে রশিদুন্নবী। ‘স্যার’ সাধুদের সঙ্গে বেজায় সম্মানিত বোধ করে মানুষটা। কল্কিতে দম দিয়ে বাউল গান ধরে,
চিরদিন ইচ্ছা মনে
চিরদিন ইচ্ছা মনে
আইল ডিঙায়ে ঘাস খাবা
মন
সহজে কি সই হবা...
ঝিনাইদহের আশাশুনির মানুষ। মায়া আছে রশিদুন্নবীর গলায়।
চাঁদ উঠল আকাশে।
রশিদুন্নবীর সাপ্লাই দেওয়া একটা স্টিক টানতে টানতে সে দেখল।
আধখানা চাঁদ।
৭ম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৫