১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৫৯তম কিস্তি
__________________________________
বর্তমানে অন্য দুটি গোষ্ঠীর যেকোনো একটি থেকে অথবা উভয় গোষ্ঠী থেকে ছিটকে পড়ে একটি নব্য মধ্যবিত্ত গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তিন শ্রেণির মধ্যে কেবল নিম্নবিত্তরাই কখনো এমনকি সাময়িক সময়ের জন্যও তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। বলা বাহুল্য, গোটা ইতিহাস জুড়ে বাস্তবিক অর্থে তাদের অবস্থার কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমনকি আজ এই অবক্ষয়ের যুগেও, কয়েক শতক আগে মানুষ যেমন ছিল তার চেয়ে গড়পড়তা ভালো আছে। কিন্তু সম্পদ বাড়েনি, মানুষের আচরণ পাল্টায়নি, কোনো সংস্কার বা বিপ্লব ঘটেনি যা থেকে মানুষের সাম্য এক মিলিমিটারও কাছাকাছি আসতে পেরেছে। নিম্নবিত্তের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আসলে তাদের প্রভুদের নামগুলো পাল্টে যাওয়া ছাড়া ঐতিহাসিক পরিবর্তনগুলো তাদের জীবনে আর কোনো অর্থই বহন করে আনতে পারেনি।
উনিশ শতকের শেষভাগে সমাজে এই অবস্থা ফিরে এলে তা অনেক পর্যবেক্ষকেরই চোখে ধরা পড়ে। তখন গড়ে ওঠে চিন্তাবিদদের বিদ্যালয় যারা ইতিহাসের চক্রকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দিল এই অসমতা মানব জীবনের এক অমোঘ বিধান। এই মতবাদ নিঃসন্দেহে বরাবরই সমর্থন পেয়ে আসছে, কিন্তু আজ মতবাদটি যেভাবে সামনে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য এক ভিন্নতা। অতীতে আধিপত্যবাদী সমাজের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে যে মতবাদ, তা কেবল উচ্চবিত্তদের মাঝেই বিদ্যমান ছিল। রাজা-রাজরাদের, অভিজাতদের, ধর্মগুরু, আইনজীবীদের আর তাদের তোষামোদকারীদের মুখেই কেবল এ কথা শোভা পেত। তখন কবরের পরের এক কল্পিত জগতে ক্ষতিপূরণ মিলবে এমন অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুরও কিছুটা নরম থাকত তাদের।
মধ্যবিত্তরা, যতক্ষণ ক্ষমতার জন্য লড়াইয়ে সামিল, ততক্ষণই স্বাধীনতা, ন্যয়বিচার আর ভ্রাতৃত্বের বাণী কপচাত। আজ, অবশ্য মানব ভ্রাতৃত্বের এই ধারণাটি সেই সব মানুষের হাতে জর্জরিত হতে শুরু করেছে যারা এখনো কোনো কথা বলতে পারছে না, তবে অনেক আগে থেকেই তারা কথা বলতে চায়। অতীতে মধ্যবিত্তরা সাম্যের ব্যানারে তাদের সব অভ্যুত্থান ঘটায়, আর অতঃপর পুরনো শাসকদের হটিয়ে দিয়ে নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। নব্য মধ্যবিত্ত গোষ্ঠীগুলো তাদের জুলুমশাহী ঘোষণা করে নতুন অত্যাচারে নেমে পড়ে। সমাজতন্ত্র, তত্ত্বটি আসে ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে চিন্তামালার শেষ সংযুক্তি হয়ে যা প্রাচীন দাসবিদ্রোহ পর্যন্ত আলোচনায় টেনে আনে, কিন্তু তাও গভীরভাবে সংক্রমিত হয়ে থাকে অতীতের যুগ-যুগের সব কাল্পনিকতায়। ১৯০০ সালের পর থেকে আসা সমাজতন্ত্রের প্রতিটি রূপভেদে স্বাধীনতা ও সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ক্রমেই আরো আরো প্রকাশ্য পরিত্যক্ত হতে দেখা যায়।
শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এসে ওশেনিয়ায় ইংসক, ইউরেশিয়ায় নব্য-বলশেভিক আর ইস্টেশিয়ায় মৃত্যু-পূজা ডাক নামে যেসব নব্য আন্দোলনের সূচনা হলো তার সবগুলোরই অতি সচেতন উদ্দেশ্যই ছিল স্বাধীনতাহীনতা আর অসাম্যকে স্থায়ী রূপ দেয়া। এসব নব্য আন্দোলন, নিঃসন্দেহে, পুরনো আন্দোলনের নির্যাস থেকে এসেছে, পুরনো নাম ধারণ করে রাখতে চেয়েছে আর আদর্শ স্থান পেয়েছে স্রেফ মুখের ভাষায়। এদের সকলেরই উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো এক পছন্দসই সময়ে উন্নয়নকে থমকে দেওয়া আর ইতিহাসকে হিমাগারে পাঠানো। একই পরিচিত পেণ্ডুলাম দুলিয়ে ঘোর সৃষ্টি করে আবার থামিয়ে দেওয়া। আগে স্বাভাবিক পন্থায় উচ্চবিত্তদের হটিয়ে মধ্যবিত্তরা হয়ে উঠত নব্য উচ্চবিত্ত, কিন্তু এবার, এক সচেতন কৌশলে উচ্চবিত্তরা তাদের অবস্থানকে অনেকটা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬১তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬০) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।