১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬০তম কিস্তি
__________________________________
পুঞ্জিভূত ইতিহাস জ্ঞান, আর ঐতিহাসিক ধারণায় অগ্রসরতার কারণে নতুন মতবাদ এবার আংশিক মুখ দেখাল, ঊনিশ শতকের আগে যা কখনোই ঘটেনি। ইতিহাসের চক্রাকার আন্দোলন এখন বুদ্ধিগ্রাহ্য, নয়ত তার কাছাকাছি, আর যখন তা বুদ্ধিগ্রাহ্য তখন তা পরিবর্তনীয়ও বটে। কিন্তু নীতিগতভাবে, মূলগত কারণটি হচ্ছে বিশ শতকের গোড়ার দিকেই মানব সাম্য কৌশলগতভাবে সম্ভবপর হয়ে ওঠে। এটা সত্য যে মানুষ এখনো তার বুদ্ধিমত্তা, মেধায় সমান নয়, আর সে কারণে একজন অন্যজন থেকে বিশেষভাবে এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে, কিন্তু শ্রেণি বিভেদ কিংবা সম্পদের বিশাল ব্যবধান টিকিয়ে রাখার কোনো বাস্তবসম্মত প্রয়োজন এখন আর নেই। আগে যুগে যুগে, শ্রেণি বৈষম্য কেবল যে অবশ্যম্ভাবী ছিল তাই নয়, প্রত্যাশিতও ছিল। সভ্যতারই দান এই অসাম্য। যন্ত্রে উৎপাদন উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এই শ্রেণি পাল্টেছে। এমনকি এখনো, মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাজই করতে হলেও তাদের আর ভিন্ন ভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বাস করতে হয় না।
সেক্ষেত্রে, ক্ষমতালিপ্সু নতুন গোষ্ঠীগুলোর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে, মানব সাম্য আর এমন কোনো আদর্শ হয়ে নেই যার জন্য লড়াই করে যেতে হবে, কিন্তু এর বিপদমুক্ত অবশ্যই থাকতে হবে। আরো আদিম যুগে, যখন একটি যথার্থ শান্তির সমাজ বাস্তবিকই ছিল অসম্ভব, তখন তা বিশ্বাসে নেওয়াও যেত সহজে। সৌভ্রাতৃত্বের আবহে বাস করবে, নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল থাকবে না, পশুর মতো খাটতে হবে না এমন এক পার্থিব স্বর্গরাজ্যের বাসনা মানুষের মনে বিরাজ করছে হাজার হাজার বছর ধরে। প্রতিটি ঐতিহাসিক ক্রান্তিকালে যারা সুবিধাভোগী ছিল তাদের মাঝেও এই স্বপ্ন ছিল। ফরাসি, ব্রিটিশ ও আমেরিকান বিপ্লবের উত্তরাধিকাররা মানুষের অধিকার, বাক স্বাধীনতা, আইনের চোখে সবাই সমান, এমন সব বিষয়ে তাদের নিজেদের দেওয়া সংজ্ঞার মধ্যে থেকে আংশিক বিশ্বাসও রাখতেন, আর একটা মাত্রায় তাদের কাজে-কর্মে এর প্রভাবও পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকের মধ্যেই রাজনৈতিক চিন্তার সকল মূল স্রোতই হয়ে উঠল কর্তৃত্ববাদী।
পার্থিব স্বর্গ যখন বাস্তবায়নযোগ্য হয়ে উঠল ঠিক তখনই তা বানচাল করে দেওয়া হলো। প্রতিটি নতুন রাজনৈতিক তত্ত্ব, যে নামেই তাকে ডাকা হোক না কেন, সমাজকে আধিপত্যবাদ আর নিয়ন্ত্রণবাদের দিকেই নিয়ে গেছে। আর ১৯৩০ এর কাছাকাছিতে এটা একটা কঠোরতার রূপ পেয়েছে। অনেক আগে যেসব চর্চা সমাজ থেকে উঠে গেছে—বিচার ছাড়াই কারান্তরীণ রাখা, যুদ্ধবন্দীদের কৃতদাস হিসেবে ব্যবহার, জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, স্বীকারোক্তির জন্য নির্যাতন, জিম্মিদশা, পুরো জনসংখ্যার বিতাড়ন—এ সবকিছুই আবার স্বাভাবিকই কেবল হলো না, যারা নিজেদের আলোকিত কিংবা প্রগতিশীল বলে মনে করে তাদের কাছেও সহনীয় এবং এমনকি সমর্থন পেয়ে গেল।
বিশ্বের সকল অংশে জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, বিপ্লব-প্রতিবিপ্লব ঘটে যাওয়ারও এক দশক পর ওশেনিয়ার ইংসকসহ অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী নীতিগুলো পুরোপুরি হিসাব কষে নেওয়া রাজনৈতিক তত্ত্ব হিসেবে আবির্ভূত হলো। তবে এগুলোর ওপরে আগে থেকেই ছায়া ফেলে ছিল বেশকিছু পদ্ধতি যাকে সাধারণভাবে সমগ্রতাবাদী নামে ডাকা হয়, যা এই শতকের গোড়ার দিকেও একবার দেখা দিয়েছিল। আর এই জটলা থেকে যে পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে তার মূল রূপরেখা বহু আগে থেকেই প্রতীয়মান। কোন ধরনের মানুষের হাতে এই পৃথিবী নিয়ন্ত্রিত হবে তাও হয়েছিল একইভাবে পরিষ্কার।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬২তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।