১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৩তম কিস্তি
__________________________________
বিগ ব্রাদারের পরেই আসে ইনার পার্টি। এর সদস্য সংখ্যা ছয় মিলিয়নে সীমিত যা ওশেনিয়ার মোট জনসংখ্যার দুই শতাংশেরও কম। ইনার পার্টির পরে আসে আউটার পার্টি, যাকে, ইনার পার্টিকে যদি রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলা হয়, বলা যাবে দুই হস্ত। এদের পরে রয়েছে নির্বোধ সাধারণ, যাদের আমরা ‘দ্য প্রোল’ বলেই অভ্যস্ত, আর এদের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশ। আগের শ্রেণি বিণ্যাসে প্রোলরা ছিল নিম্নশ্রেণি: বিষূবমণ্ডলীয় ভূমির এ এক দাস জনগোষ্ঠী যারা দখলদারদের হাতে হাতে বদলেছে, যারা পুরো কাঠামোর স্থায়ী কিংবা প্রয়োজনীয় কোনো অংশ নয়।
নীতিগতভাবে এই গ্রুপগুলোর সদস্যপদ বংশানুক্রমিক নয়। তত্ত্বমতে ইনারপার্টির বাবা-মায়ের সন্তান জন্মগতভাবে ইনার পার্টির হবে না। বয়স ষোল হলে পরীক্ষা দিয়ে তবেই এই পার্টির কোনো না কোনো শাখায় ভর্তি হতে হবে। এছাড়াও নেই কোনো বর্ণগত বৈষম্য, এক প্রদেশের ওপর অন্য প্রদেশের দাদাগিরিও নেই। ইহুদি, নিগ্রো, খাঁটি ভারতীয় রক্তবহনকারী দক্ষিণ আফ্রিকানরা পার্টির উচ্চসারিতে আসীন, আর প্রতিটি অঞ্চলের প্রশাসক নেওয়া হচ্ছে সেই অঞ্চলেরই বাসিন্দাদের মধ্য থেকেই। ওশেনিয়ার কোনো অংশেই বাসিন্দাদের এমন ভাবনার সুযোগ নেই যে তারা দূর রাজধানীর শাসনে এক উপনিবেশিক জনগোষ্ঠী। ওশেনিয়ার কোনো রাজধানী নেই, আর এর খেতাবি প্রধান এমন এক ব্যক্তি যার অস্তিত্ব কোথায় কেউ জানে না। এছাড়াও ইংরেজি এর মূল যোগাযোগের ভাষা, আর নিউস্পিক দাপ্তরিক ভাষা, তাও আবার কোনোভাবেই কেন্দ্রীভূত নয়। এর শাসকদের মধ্যে কোনো রক্ত-সম্পর্ক নেই, তবে তারা সবাই একই সাধারণ মতবাদের প্রতি অনুগত।
এটা সত্য আমাদের সমাজ স্তরে স্তরে বিন্যস্ত, আর সেই স্তরবিন্যাস অত্যন্ত অনমনীয়, প্রথম দর্শনে যা বংশানুক্রমিক বলেই মনে হবে। আন্তঃগোষ্ঠী যোগাযোগ পুঁজিবাদী সমাজে কিংবা প্রাক-শিল্পযুগে যেমনটা দেখা গেছে তেমনটা এখন খুব দেখা যায় না। পার্টির দুটি শাখার মধ্যে বিশেষ কিছু আন্তঃপরিবর্তন ঘটে কিন্তু তা ইনার পার্টির দুর্বলদের বের করে দেওয়া আর আউটার পার্টির উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে যারা ক্ষতিকর নয় তাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রলেতারিয়েতদের পার্টিতে অন্তর্ভূক্তির সুযোগ দেওয়ার চর্চা নেই। এদের মধ্যে যারা অতি অগ্রসরমান, যাদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে অসন্তোষ তাদের স্রেফ থট পুলিশের সহায়তায় চিহ্নিত করে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। তবে এই ব্যবস্থা স্থায়ী কিছু নয়, নয় কোনো নীতিগত বিষয়ও। পুরোনো বিশ্বের ধ্যান ধারণায় পার্টি চলে না। নিজেদের সন্তানদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার ইচ্ছাও পার্টির নেই, এমনকি যদি কখনো পার্টি পরিচালনার মতো দক্ষ হাত আর না থাকে তখন প্রলেতারিয়েতদের মধ্য থেকে পুরোপুরি নতুন একটি প্রজন্ম তুলে এনে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারেও পার্টি প্রস্তুত থাকবে। সঙ্কটের বছরগুলোতে, পার্টির এই বংশানুক্রমিক ব্যবস্থার অনুপস্থিতির ভাবমূর্তি বিরোধী শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
সমাজতন্ত্রের অতীত ধারায় যখন ‘শ্রেণি সুবিধা’ নামের একটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়তে হতো তখন এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে ওঠে যে, বংশানুক্রমিক না হলে কোনো কিছুকে স্থায়ীরূপ দেওয়া যায় না। তারা তখন বুঝতে পারেনি গোষ্ঠী শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো বাহ্যিক কাঠামো দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তারা এও বুঝতে চায়নি বংশানুক্রমিক আভিজাত্য বেশি দিন টেকে না, বরং ক্যাথলিক চার্চের মতো সবকিছুকে গ্রহণ করে নেওয়া সংগঠনগুলো শত শত কিংবা হাজার হাজার বছর ধরে টিকে থাকে। গোষ্ঠীবদ্ধ শাসনের সারমর্ম এই নয় যে পিতার ক্ষমতা যাবে পুত্রের হাতে, তবে বিশ্বজুড়ে ধারণাটি এমন যে, মৃত্যুর পর জীবিতের হাতে তুলে দেওয়া হবে ক্ষমতা। এটা একটা বিশেষ জীবনধারাও। একটি শাসক গোষ্ঠী যতক্ষণ তার উত্তরাধিকার মনোনয়ন করে যেতে পারবে ততক্ষণই শাসক গোষ্ঠী হয়ে থাকবে। আর রক্তের ধারার অক্ষুণ্ণতা নিয়ে পার্টি চিন্তিত নয়, পার্টি চায় তাকে নিজেকেই চিরস্থায়ী করে রাখতে। এখানে কার হাতে ক্ষমতা তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত ক্রমাধিকারতন্ত্রের কাঠামোটি ঠিক থাকে ততক্ষণ তো নয়ই।
৬৫তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬৪) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।