১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৪তম কিস্তি
__________________________________
যে সকল বিশ্বাস, অভ্যাস, পছন্দ, আবেগ, অনুভব, মানসিকতা আমাদের সময়কে বৈশিষ্টমণ্ডিত করে তার সবই আসলে পার্টির রহস্যময়তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, আর এখনকার সমাজের বাস্তবিক প্রকৃতিকে হৃদয়াঙ্গমে বাধা সৃষ্টির জন্য তৈরি। বিদ্রোহ কিংবা প্রাক-বিদ্রোহের নামে সামান্য নড়াচড়াটিও আজ অসম্ভব। প্রলেতারিয়েতদের নিয়ে ভয়ের কিছুই নেই। স্রেফ কাজ করে, সন্তান জন্ম দিয়ে, আর মৃত্যুকে বরণ করে নিয়ে তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম, শতাব্দীর পর শতাব্দী পার করে দেবে, তাদের মধ্যে বিদ্রোহের ছিটেফোঁটাও থাকবে না। আর কেবল তাই নয় তাদের এটুকু বোঝার ক্ষমতাও তৈরি হবে না যে বিশ্বটি হতে পারত এখন যেমন তার চেয়ে ভিন্ন কিছু।
তারা কেবল তখনই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে যখন শিল্পায়নের কারিগরি অগ্রসরতা এমন মানে পৌঁছে যাবে যেখানে তাদের আরো শিক্ষিত হয়ে ওঠা দরকারি হয়ে পড়বে। কিন্তু, যেহেতু সামরিক ও বাণিজ্যিক বিভেদ এখন আর গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, সেহেতু জনপ্রিয় শিক্ষার হার ও মান দিন দিন কমছে। জনগণ যে মত ধারণ করে, কিংবা করে না, তাকে ঔদাসীন্যের বিষয় হিসেবেই দেখা হয়। তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা দেওয়া যায় অনায়াসেই, কারণ তারা বুদ্ধিই ধারণ করে না। অন্যদিকে পার্টির কোনো সদস্যের বেলায় অতি তুচ্ছ বিষয়েও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভিন্নমত্যতাও সহ্য করা হয় না।
পার্টির একজন সদস্য তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত থট পুলিশের চোখে চোখে থাকে। এমনকি যখন যে একা থাকে তখনও কখনোই নিশ্চিত হতে পারে না যে, সে একা। যে কোনো সময়ে, হতে পারে ঘুমিয়ে কিংবা জেগে, কাজে কিংবা বিশ্রামে, গোসলে কিংবা বিছানায়, তাকে তল্লাশি করা যাবে তার জন্য সংকেত কিংবা সতর্কতা পর্যন্ত জারি করতে হবে না, আর এমনকি সে জানতেও পারবে না তার ওপর তল্লাশি চলছে। যা কিছু সে করে তার কোনোটিই তুচ্ছজ্ঞান করার সুযোগ নেই। তার বন্ধুত্ব, বিশ্রাম যাপন, স্ত্রী-সন্তানের প্রতি আচরণ, একাকীত্বের অভিব্যক্তি, ঘুমের মাঝে বিড়বিড়ানি, এমনকি হাঁটাচলার ভঙ্গি, শরীরের নড়াচড়ার বৈশিষ্ট্য, এ সবকিছুতেই অতিসন্দেহের দৃষ্টিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে।
বাস্তবিক দুষ্টাচরণই কেবল নয়, কোনো খামখেয়ালিপনা, হোক সে ছোটখাটো, কোনো অভ্যাসের পরিবর্তন, কোনো স্নায়ুবিক আচরণ যা ভেতরগত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার লক্ষণ তুলে ধরে এসব কিছুই নিশ্চিত ধরা পড়ে যাবে। কোনো পথেই তার পছন্দের কোনো স্বাধীনতা নেই। অন্যদিকে, তার কাজগুলো আইন দিয়ে কিংবা কোনো বিশেষ আচরণবিধি দিয়ে নিয়ন্ত্রিতও নয়। ওশেনিয়ায় কোনো আইন নেই। কিছু চিন্তা কিংবা কাজ ধরা পড়ে গেলে মৃত্যু অনিবার্য, অথচ তা নিষিদ্ধ নয়। আর নিরন্তর শুদ্ধিকরণ, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, কারাবাস আর বাষ্পকরণ যে চলে তা কিন্তু কোনো কৃত অপরাধের সাজা নয় বরং স্রেফ ভবিষ্যতে অপরাধী হয়ে উঠতে পারে এমন মানুষগুলোকে উবে দেওয়াই কাজ।
দলের কোনো সদস্যের কাছে, সঠিক মতামতের অধিকারী হবে কেবল সেটাই চাওয়া হয় না, তার থাকতে হবে সঠিক সহজাত প্রবর্তনাও। তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত এসব বিশ্বাস ও আচরণের অনেকগুলোরই কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই, ইংসকের অন্তঃস্থায়ী অসংগতিগুলোর নগ্ন উপস্থাপন ছাড়া তার ব্যাখ্যা দেওয়াও যাবে না। সে যদি প্রকৃতিতে নীতিসিদ্ধ (নিউস্পিকে বলে সুচিন্তক) কেউ হয়, তাহলে চিন্তা ব্যাতিরেকেই সকল পারিপার্শ্বিকতায় সে জেনে যাবে কোনটি সত্যিকারের বিশ্বাস অথবা প্রত্যাশিত আবেগ।
কিন্তু কোনো না কোনোভাবে শৈশবেই যেসব প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে সে যাচ্ছে আর নিউস্পিকের ক্রাইমস্টপ, ব্ল্যাকহোয়াইট ও ডাবলথিঙ্কের মতো শব্দগুলোর মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে তাতে যে কোনো বিষয়ই হোক না কেন তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার ইচ্ছা কিংবা সক্ষমতা দুইই হারিয়ে ফেলবে।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৬তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬৫) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।