ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৫তম কিস্তি
__________________________________


দলের কোনো সদস্যের ব্যক্তি আবেগ প্রত্যাশিত নয় আবার প্রবল উচ্ছ্বাস দেখানো থেকেও নেই নিবৃতি। তাকে বিদেশি শত্রুর প্রতি অবিরাম উম্মত্ততায় ঘৃণা দেখিয়ে যেতে হবে, এবং পার্টির ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তার সামনে নিচের নীচতা বজায় রাখতে হবে। তার নগ্ন, অসন্তুষ্টির জীবন থেকে সৃষ্ট হতাশাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবেই বাইরে ঠেলে দেওয়া হয় আর ‘দুই মিনিটের ঘৃণা কর্মসূচি’র মতো প্রক্রিয়া দিয়ে তা দূর করা হয়। শিশুবেলায় স্রেফ কিছু অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলা আয়ত্ব করিয়ে ভেতরে ভেতরে সংশয়বাদী বা বিদ্রোহী মনোভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাগুলো হত্যা করা হয়।

এই নিয়ম শৃঙ্খলার প্রথম ও সহজতম স্তরকে, যা ছোট্ট শিশুটিও শিখতে পারে, নিউস্পিকের ভাষায় বলে ক্রাইমস্টপ। এর মানে হচ্ছে থামিয়ে দেওয়া, সহজাতভাবেই থামিয়ে রাখা, কোনও বিপজ্জনক চিন্তা গজিয়ে ওঠার আগেই দ্বারপ্রান্তে আটকে দেওয়া। সাযুজ্য খুঁজতে না যাওয়া, যৌক্তিক ভ্রমগুলোও মেনে নিতে পারা, ইংসক বিরুদ্ধ ক্ষুদ্রতম বিষয়টিতেও অবুঝ হয়ে থাকা আর প্রথাবিরোধী কোনও পথে টেনে নিতে পারে এমন চিন্তা বা বক্তব্যে বিরক্ত হওয়ার ক্ষমতা এর অন্তভর্’ক্ত। সংক্ষেপে ক্রাইমস্টপ মানে সংরক্ষণমূলক নির্বুদ্ধিতা। তবে স্রেফ নির্বুদ্ধিতাই যথেষ্ট নয়। পক্ষান্তরে, প্রথাপন্থিদের পূর্ণ প্রত্যাশাটি হচ্ছে কারো নিজস্ব মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, এই নিয়ন্ত্রণ হতে হবে পুরোদস্তুর, ঠিক যেমনটা থাকে শারীরিক কসরত দেখানো ব্যক্তিটির নিজের শরীরের ওপর। বিগ ব্রাদার ইশ্বর, আর পার্টি সকল ভুলভ্রান্তির উর্ধ্বে, এই বিশ্বাসের ওপরেই বসে আছে ওশেনীয় সমাজ।

কিন্তু বাস্তবে যেহেতু বিগ ব্রাদার ইশ্বর নন আর পার্টিও ভুলভ্রান্তির উর্ধে¦ নয়, সেহেতু প্রতিটি ঘটনার ওপরই ক্লান্তিহীনভাবে মূহূর্তে মূহূর্তে বাস্তবের লেবাস লাগিয়ে যেতে হয়। এর নাম ব্ল্যাকহোয়াইট। নিউস্পিকের অন্য অনেক শব্দের মতো এই শব্দেরও রয়েছে দুটি পারস্পরিক স্ব-বিরোধী অর্থ। প্রতিপক্ষের ওপর প্রযোজ্য হলে এর মানে হচ্ছে কালোকে সাদা বলে চালিয়ে দেওয়া, অর্থাৎ সাদামাটা সত্যটিরও বিরোধীতা। আর পার্টির সদস্যের ওপর প্রযোজ্য হলে এর মানে হচ্ছে পার্টির শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কালোকেও সাদা বলতে পারার আনুগত্যমাখা সদিচ্ছা। তবে এর মানে এও যে কালোই সাদা তা বিশ্বাস করে নেওয়ার যোগ্যতা, অধিকন্তু এও জেনে নেওয়া যে কালোই সাদা, সঙ্গে সঙ্গে এর বিপরীত বিশ্বাসটিকে মন থেকে মুছে ফেলতে হবে। আর এ জন্যই অতীতের সবকিছুকে সার্বক্ষণিকভাবে পাল্টে দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যা সম্ভব করে তোলা যায় চিন্তা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। যা সত্যিকার অর্থেই অবশিষ্ট সবকিছুকে বিব্রত করে, আর নিউস্পিকে এটাই দ্বৈতচিন্তা বা ডাবলথিংক বলে পরিচিত।

পাল্টে দেওয়াটা দুই কারণে জরুরি, যার আবার একটি কারণ সম্পূরক, যেমনটা বলা হয়, পূর্বসতর্কতামূলক। সম্পূরক কারণটি হচ্ছে পার্টির একজন সদস্য, প্রোলেতারিয়েতের মতোই, দিনকালের পরিস্থিতিটি মেনে নেবে, অংশত এই জন্য যে তার সামনে তুলনা করার মতো আর কোনও মান থাকবে না। তাকে অতীত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে, ঠিক যেভাবে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় সীমারেখার ওপারের দেশগুলো থেকে, কারণ তার এই বিশ্বাস স্থাপন জরুরি যে সে তার পিতৃপুরুষের চেয়ে ভালো আছে, আর দিন দিন তার আরাম আয়েশের মাত্রা বাড়ছে। কিন্তু তারও চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হচ্ছে পার্টির ভ্রান্তিহীনতা টিকিয়ে রাখতে অতীতের ঘটনাকে ফের সামঞ্জস্যপূর্ণ করা প্রয়োজন। এটা কেবল এই জন্য নয় যে, বক্তব্য, পরিসংখ্যান আর নথিগুলো সারাক্ষণ আপ টু ডেট করে রাখতে হবে যাতে দেখা যায় পার্টি যা কিছু বলেছে তার সবটাই ঠিক ঠিক ফলে গেছে। এটা এই জন্যও যে, মতবাদে কিংবা রাজনৈতিক সরলরেখায় কোনও পরিবর্তন আনা হয়েছে এমনটা কেউ কখনো বলতেও পারবে না। কারণ কারো মনের পরিবর্তন কিংবা কারো নীতির পরিবর্তন দুর্বলতা স্বীকার করে নেওয়ারই সামিল। উদাহরণস্বরূপ, যদি ইউরেশিয়া কিংবা ইস্টেশিয়া (যেকোনওটাই হতে পারে) আজকের শত্রু হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সেই দেশ ভুত ও ভবিষ্যতের উভয় কালের শত্রু।   বাস্তবতা যদি অন্য কিছু বলে, তাহলে বাস্তবতাকেই পাল্টে দিতে হবে। এভাবেই ইতিহাস অবিরাম পুনর্লিখন চলছে। সত্য মন্ত্রণালয়ের অতীতকে মিথ্যায়নের এই প্রাত্যহিক কাজটি শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন দরকারি, তেমনি দরকারি ভালোবাসা মন্ত্রণালয়ের দমননীতি আর গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে যাওয়ার জন্যও।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৭তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।