১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৬তম কিস্তি
__________________________________
অতীতকে মুছে দেওয়াই ইংসকের মূল নীতি। অতীতের ঘটনার, যেমনটি বলা হয়, কোনো বস্তুগত অস্তিত্ব নেই, স্রেফ টিকে থাকে লিখিত নথিতে আর মানুষের স্মৃতিতে। অতএব, অতীত তাই যা নথিতে পাওয়া যায় কিংবা স্মৃতি স্বীকার করে নেয়। আর পার্টি যেহেতু সকল নথিপত্রের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখে, আর একই সঙ্গে তার সদস্যদের মনেরও ওপরেও রয়েছে পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, তাহলে বলাই যায় অতীত তাই, ঠিক যেভাবে পার্টি তা তৈরি করবে। এরই ধারাবাহিকতায় বলা যায়, অতীত পরিবর্তনযোগ্য হলেও, তা কখনোই কেবল কিছু নির্দিষ্ট ঘটনায় পাল্টাবে না। যখন তা নতুন করে সৃষ্টি হয়, তা যে কোনো আকারই পাক না কেন, তখন সেই নতুন আকারটিই হয়ে ওঠে অতীত, এর চেয়ে ভিন্ন কোনো অতীতের অস্তিত্ব কখনোই ছিল না।
এক বছরের মধ্যে যখন এই অতীতকে বারবার পাল্টাতে হয় তখনও প্রতিবারই একই কাজ করতে হয়। সর্বদাই ক্ষমতাসীন পার্টিই চূড়ান্ত সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত, আর এটাও তো স্পষ্ট যে চূড়ান্ত কোনো কিছু আজ যা, তার চেয়ে ভিন্ন কিছু কোনো কালেই ছিল না। অতীতের ওপর নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করে স্মৃতির ওপর শাসনে। এই সময়ের প্রথা ও রীতি পদ্ধতিতে সম্মতি রেখে সকল নথি লিখিত রাখা নিশ্চিত করার কাজটি স্রেফ যান্ত্রিক। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে যে, যা কিছু ঘটেছে তা ইচ্ছাকৃতভাবেই ঘটেছে। আর যদি কারো স্মৃতিকে পুনরায় সাজিয়ে নিতে হয়, অথবা লিখিত রেকর্ডের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয় তাহলে কেউ তা করলে অতীতকে স্রেফ ভুলে যেতে হবে। এর কৌশলটিও অন্য যেকোনো মানসিক কৌশলের মতোই শিখে নেওয়া সহজ। পার্টির অধিকাংশ সদস্যই বিষয়টি শিখে নিয়েছে, আর নিশ্চিতভাবে যারা বুদ্ধিমান ও একই সঙ্গে প্রথাপন্থি তারা তো শিখেছেই। পুরোনো ভাষায় একে বলে, সত্যি কথা বলতে কি এটাই আসলে, ‘বাস্তবতার নিয়ন্ত্রণ’। নিউস্পিকে এরই নাম দ্বৈতচিন্তা, যদিও দ্বৈতচিন্তার এর বাইরেও কিছু অর্থ রয়েছে।
দ্বৈতচিন্তা মানে কারো মনে একইসঙ্গে স্ববিরোধী দুটি বিশ্বাসকে ধারণ ও গ্রহণ। পার্টির একজন বোদ্ধা জানেন কোন পথে স্মৃতি পাল্টে দিতে হবে; আর তিনি এও জানেন যে, বাস্তবতার সাথে কৌশলী এক খেলা তিনি খেলছেন; আবার দ্বৈতচিন্তার চর্চায় তিনি নিজেকে সন্তুষ্ট করে রাখছেন এই ভেবে যে সত্যের কোনো লঙ্ঘন এখানে ঘটেনি। প্রক্রিয়াটি হতে হবে সচেতনতায়, কিন্তু পর্যাপ্ত শুদ্ধতায় নয়, আর যদি তা ঘটে যায় অসচেতনতায়ও, তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকবে এক মিথ্যার অনুভূতি ও অপরাধবোধ। ইংসকের কেন্দ্রেই রয়েছে এই দ্বৈতচিন্তা। পার্টির অন্যতম প্রয়োজনীয় কাজটি হচ্ছে সচেতন প্রতারণা, কিন্তু সে প্রতারণার কাজটি হতে হবে চূড়ান্ত সততায়। সত্য বিশ্বাসে স্বেচ্ছা মিথ্যাচার করে যাওয়া, পীড়াদায়ক যে সত্য তা বেমালুম ভুলে যাওয়া, আর অতঃপর, যখন ফের হয়ে উঠবে দরকারি তখন বিস্মরণ থেকে তা তুলে আনা ঠিক যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণের জন্য, বস্তুগত বাস্তবতার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা, আর সারাক্ষণ অস্বীকৃত বাস্তবতার হিসাব কষে যাওয়া—এসবই অপরিহার্য আবশ্যিকতা। এমনকি দ্বৈতচিন্তা কথাটির ব্যবহারেও চলে দ্বৈতচিন্তার চর্চা। এই শব্দের ব্যবহারের মধ্য দিয়েই যে কেউ স্বীকার করে নেয়, বাস্তবতার ব্যত্যয় ঘটছে; একটি আনকোরা দ্বৈতচিন্তার ঘটনা দিয়ে কেউ তার জ্ঞানকেই অস্বীকার করে; আর এভাবে অনির্দিষ্ট সময় ধরে মিথ্যায় ভর করে সে সত্যের সামনে সামনে দাবড়ে বেড়ায়। আর অবশেষে এই দ্বৈতচিন্তার মাধ্যমে দল ইতিহাসের গতিপথ আটকে রাখতে সক্ষম হয়, এবং আমরা সকলে যেমনটা জানি, হাজার বছর ধরে টিকে থাকে সে সক্ষমতা।
দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৮তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।