“বদমাইশ, লুইচ্চা, ইতর...”
শব্দগুলো কানে আসতেই নিটিং সেকশানের শ্রমিকরা মহাউৎসাহে দেখতে ছুটল ব্যাপারখানা কী। তবে শ্রমিকদের বেশিরভাগই উৎসাহী হলো রাহেলার কণ্ঠ শুনে।
রাহেলা মাথা নিচু করে ফেলল। কিছু বলছে না দেখে ধমক দিলেন। “কী ব্যাপার, চুপ করে আছো কেন?” রাহেলা চুপ করেই রইল। লজ্জায়, ঘৃণায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তার। এতগুলো মানুষের সামনে সে কী করে বলবে, বদমাশটা একা পেয়ে তার বুকে হাত দিয়েছিল?
রাশভারি চেহারার জিএম উপস্থিত হতেই শফিউল নালিশ জানাল, “দেখুন স্যার, কী অসভ্য মেয়ে। অকথ্য ভাষায় আমাকে গালি দিচ্ছে। আবার স্যান্ডেলও হাতে নিয়েছে। এই আচরণ স্যার কারখানা আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এর উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিৎ। ’
রক্তচক্ষু রাহেলা চিৎকার করে উঠল, “ওই বেজন্মা, পুঙ্গির পুত; লাত্থি মারি তর আইনের কপালে। শুয়ারের বাইচ্চা, জুতাইয়া তর চৌদ্দগুষ্ঠির নাম ভুলাইয়া দিমু। বাইনচোত...’
“চো-ও-ও-ও-প!” গমগম করে উঠল হায়দার আলীর কণ্ঠ। রাহেলা চুপ করে গেল। সমস্ত ফ্লোরে নেমে এলো পিনপতন নীরবতা।
“শফিউল, এই মেয়ে তোমাকে গালমন্দ করছে কেন?”
“এরা স্যার ছোটলোক, ছোটবেলা থেকে গালাগালি ছাড়া ভালো কিছু শেখে না। ”
হায়দার আলী বিরক্ত গলায় বললেন, “এটা আমার প্রশ্নের জবাব হলো না। ”
“কারখানাতে এখন প্রচণ্ড কাজের চাপ, এটা সবার জানা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রোডাকশান টার্গেট মিট করতে না পারলে কোম্পানিকে লসের মুখ দেখতে হবে। তাই লাঞ্চের পর এই মেয়ে অযথা ঘুরঘুর করছিল দেখে কাজে যেতে বলি। অমনি সে গাল দিতে শুরু করে। আর কী স্পর্ধা স্যার দেখুন, স্যান্ডেলও নিয়েছিল আমাকে মারার জন্যে। এর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। ”
হায়দার আলী আড়চোখে ঘড়ি দেখে নিলেন। এখনো লাঞ্চ আওয়ার শেষ হয়নি। কোনো শ্রমিককে এই সময় কাজের জন্যে ডাক দেয়াটাই বরং অন্যায়। কিন্তু কাজের জন্যে ডাক দিলেই কেউ গালাগালি শুরু করবে, এ গল্প বিশ্বাসযোগ্য নয়। শফিউলটা নিশ্চিত মিথ্যে কথা বলছে। একে শায়েস্তা করা প্রয়োজন। ব্যাটা মহা ঝামেলাবাজ। এর আগেও বেশকিছু ফ্যাঁকড়া বাঁধিয়েছে। ধমক ধামক দিয়ে সিধে করতে হবে। তবে সেটা শ্রমিকদের সামনে করা যাবে না। তাঁর অভিজ্ঞতায় বলে, এতে করে শ্রমিকরা ম্যানেজমেন্টের ঘাড়ে চেপে বসে। আর যাইহোক, কোনোভাবেই শ্রমিকদের লাই দেয়া চলবে না।
হায়দার আলী রাহেলার দিকে কটমট করে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এই মেয়ে, পি.এমকে কোন সাহসে তুমি গাল দিয়েছো? সত্যি করে বলো কী হয়েছে। ”
রাহেলা মাথা নিচু করে ফেলল। কিছু বলছে না দেখে ধমক দিলেন। “কী ব্যাপার, চুপ করে আছো কেন?”
রাহেলা চুপ করেই রইল। লজ্জায়, ঘৃণায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তার। এতগুলো মানুষের সামনে সে কী করে বলবে, বদমাশটা একা পেয়ে তার বুকে হাত দিয়েছিল?
হায়দার আলী যারপরনাই বিরক্ত হলেন। “তোমার তাহলে কিছু বলার নেই?”
রাহেলা চুপ। টপটপ চোখের পানি ঝরছে। আর খানিক অপেক্ষা করে ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেলেন হায়দার আলী। শীতল গলায় বললেন, “বোঝা যাচ্ছে পি.এমের কোনো দোষ নেই। সম্পূর্ণ বিনা কারণে তুমি তার সাথে অসদাচারণ করে কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছ। ছুটির পর তুমি আমার সাথে দেখা করে যাবে। ”
শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলে তিনি চলে গেলেন। সবাই যে যার কাজে চলে গেল। কেবল রাহেলা দাঁড়িয়ে রইল একা। রাগে, ক্ষোভে, ভীষণ অসহায়ত্বে কাঁদছে সে।
২.
পাহাড়ের পাদদেশে বস্তিটা আঁধারে দূর থেকে মনে হবে অদ্ভুতুড়ে, অবাঞ্চিত, বিসদৃশ কিছু। একটু কাছে গিয়ে দেখলে সারি সারি খুপড়ি স্পষ্ট চোখে পড়বে। এখন মাঝরাত। আকাশ থমথমে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে যেন নিতান্ত অনিচ্ছায়। পুরো বস্তিই নিকষ আধাঁরে ঢাকা, কেবল পাহাড়ের একেবারে গা ঘেঁষে থাকা একটিতে মিটমিট আলো জ্বলছে। অনেকটা ভৌতিক আলোর মতন। বেড়ার ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়তে চাইছে যেন ম্লান আলো, অন্ধকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে।
মিছিমিছি রাগ দেখিয়ে চাকরি হারালে। এখন কী করবে, খাবে কী? তবে তোমার একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারি যদি সন্ধ্যার পর আমার বাসায় আসো। আমার বাসা চেনো তো? ওই যে, অফিস থেকে বেরিয়ে চারতলা বিল্ডিং? ওটার দোতলায়। আমি কনফারম্ড ব্যাচেলর। একাই থাকি। কোনো সমস্যা হবে না।
খুপড়ির ভেতর আলো অতটা ম্লান নয়। খুপড়ির বেড়ার গায়ে হেলান দিয়ে বসে রাহেলা। প্রদীপের লালচে আলো এসে পড়েছে মুখের একপাশে। ফর্সা মুখে চাপা বিষাদ। চোখে শূন্য দৃষ্টি। মুখের অন্যপাশ ঢেকে আছে রুক্ষ চুলে। খুপড়ির ঠিক মাঝখানে তার পাঁচ বছরের ছেলে শায়িত ময়লা তক্তপোশে। ঘুমন্ত। তেল চিটচিটে নোংরা কাঁথা গলা পর্যন্ত টেনে দেয়া। পাশেই ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা বসে ছেলেটির কপালে জলপট্টি দিচ্ছেন। শুকিয়ে আসা জলপট্টি বদলে দিতে দিতে বৃদ্ধা বললেন, “অই রাসুর জ্বরত কমতাছে না, ওষুধ খাওয়ান লাগব। ”
“পয়সা দিব কেডা?”
ঝাঁঝিয়ে উঠলেন বৃদ্ধা। “আমি কেমনে কমু। পয়সা ত আনবি তুই। ”
কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ করে যায় রাহেলা। চাল আনার টাকা পর্যন্ত যেখানে নেই, সেখানে ছেলের চিকিৎসা করাবে কিভাবে। এই সেদিন পি.এমের সাথে অযথা বাজে আচরণের অভিযোগে চাকুরিটা গেছে। সে মাসের বেতনও দেয়া হয়নি। শ্রমিক ইউনিয়নের লিডার বলেছিল রাহেলার পক্ষ হয়ে সে মালিকপক্ষের সাথে লড়বে, যদি রাহেলা তার প্রতি একটু সদয় হয়। নোংরা ইঙ্গিত বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি রাহেলার। ঘৃণায় কাঁপতে কাঁপতে যখন কারখানা থেকে বেরিয়ে আসছিল তখন পি.এম পথ আটকে বলেছিল “মিছিমিছি রাগ দেখিয়ে চাকরি হারালে। এখন কী করবে, খাবে কী? তবে তোমার একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারি যদি সন্ধ্যার পর আমার বাসায় আসো। আমার বাসা চেনো তো? ওই যে, অফিস থেকে বেরিয়ে চারতলা বিল্ডিং? ওটার দোতলায়। আমি কনফারম্ড ব্যাচেলর। একাই থাকি। কোনো সমস্যা হবে না। ”
কথাগুলো শুনে রাহেলার আর ঘৃণা হচ্ছিল না। তার কেবলই মনে হচ্ছিল, হয়ত মানুষ আসলে এমনই। স্বাভাবিকভাবেই নির্দয়, সুযোগ সন্ধানী, বিবেকবর্জিত। সে একটিও কথা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে এসেছিল।
এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। যদিও সুরুজ আলীর পরিচিত একজন মানুষ দুই মাস অপেক্ষা করতে বলেছে। দুই মাস পর আবারো কোন একটা গার্মেন্টসে ঢুকিয়ে দেবে। সে-ই আগের চাকুরিটা জুটিয়ে দিয়েছিল। এখন এই দুই মাস খাবেটা কী? বড়জোর সাত দিনের ডাল-চাল মজুদ আছে ঘরে। কিন্তু তারপর? সুরুজ আলী থাকতে অন্তত খাওয়া পরার কোনো কষ্ট ছিল না। কিন্তু মাস পাঁচেক আগে মানুষটা দুম করে মরে গেল। রিক্সা চালাতে গিয়ে ট্রাকের নিচে পড়ে দুটুকরো হয়ে গিয়েছিল মানুষটার শরীর। সুরুজ আলীর মৃত্যুর পর চাকুরিটা পেয়ে মন দিয়ে কাজ করছিল রাহেলা। ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিচ্ছিল নিজেকে। কিন্তু...
“রাসুর জ্বরত বাড়তাছে, অষুদ না খাওয়াইলে পোলাডা মরব। ” শাশুড়ির দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কণ্ঠ শুনে রাহেলা এগিয়ে এসে ছেলের জ্বরটা দেখল একবার। ছেলেটা একবার চোখ মেলেই আবার বন্ধ করে ফেলল। কথা বলারও শক্তি নেই তার। ছেলের পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ল সে। ছেলেকে এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। দয়ালু ডাক্তার ফি ছাড়াই প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা ছাড়া তো আর কেউ ওষুধ দেবে না। কী করবে সে?
রাহেলা পরদিন হন্যে হয়ে ঘুরল, যদি কিছু টাকা ধার পাওয়া যায় এই আশায়। পাওয়া গেল না। দুপুরে ভয়ানক ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরল। শাশুড়ি ওর মুখ দেখেই বুঝলেন কিছু মেলেনি। রাহেলাকে কিছু না বলে বৃদ্ধা চুপচাপ বাইরে বেরিয়ে গেলেন। রাহেলা বসে রইল ছেলের পাশে। প্রচণ্ড জ্বরে প্রলাপ বকছে ছেলেটা। টপটপ চোখের পানি ঝরতে লাগল ওর। একসময় ভীষণ ক্লান্তিতে ছেলের পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সন্ধ্যায় শাশুড়ি এসে জাগালেন ওকে।
চোখ কচলে নিয়ে সে জিজ্ঞেস করল, “কই গেছিলা?”
ফোঁকলা দাঁতে অপ্রতিভ হাসলেন বৃদ্ধা। কিছু খুচরো নোট আর পয়সা রাহেলার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “এইগুলান দিয়া রাসুর অষুদ অইব না?”
রাহেলা গুণে দেখল সব মিলিয়ে পঁচিশ টাকাও হবে না। সহসা তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল ওর দৃষ্টি।
“ট্যাকা পাইলা কই?”
আবারও অপ্রতিভ হাসলেন বৃদ্ধা। “খুইজ্যা আনছি। ”
গভীর অসহায়ত্বে হাহাকার করে উঠল রাহেলা। “তুমি ভিক্ষা করতে গেছিলা!”
“তয় কী করুম, পোলাডারে এমন কইর্যা মরতে দিমু?” ঝাঁঝিয়ে উঠলেন বৃদ্ধা।
“তাই বইল্যা...”
গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে ওঠায় কথা শেষ হয় না ওর। ছি ছি কী লজ্জা, শেষপর্যন্ত ভিক্ষা করে ছেলেকে বাঁচাতে হবে? তীব্র রোষে খুচরো টাকাগুলি ছুঁড়ে ফেলে পাথর মুখে উঠে দাঁড়ায় রাহেলা। জরাজীর্ণ শাড়িতে যতটা সম্ভব পরিপাটি করে নেয় নিজেকে। ঘরের একমাত্র ভাঙা আয়নায় নিজেকে মন দিয়ে দেখে নেয় চকিতে একবার। রাহেলার শাশুড়ি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, “অই কি করস তুই? কী করস, এ্যাঁ?”
“কিছু না। রাসুরে দেইখ্যা রাইখো। ”
খুপড়ির ঝাঁপ ঠেলে বেরিয়ে আসে সে। না, কোনো সন্ধ্যাতারা ওকে ভ্রুকুটি করছে না। জোছনা আলো ছড়িয়ে নিষেধ করছে না আধাঁরে হারাতে। যেন ওরাও জানে ওর এই যাত্রা স্বাভাবিক। তাই হয়ত রাত্রির আকাশ জুড়ে গম্ভীর মেঘ। থেকে থেকে বিজলি চমকাচ্ছে। ভেজা বাতাসে তুমুল বৃষ্টির আগমনী সংকেত। বস্তি পেছনে ফেলে রাহেলা দ্রুত হাঁটতে শুরু করে, আধাঁরে।
৩.
অফিস তাড়াতাড়ি ছুটি হওয়ায় শফিউল বিকেল থেকেই বাসায়। সন্ধ্যার পর চা খেয়ে আয়েশ করে বসে রগরগে হিন্দি সিনেমা দেখছিল, এসময় দরজায় ঠকঠক শব্দ হওয়ায় বিরক্ত হয়ে উঠল দরজা খুলতে। দরজা খুলেই সে বিস্মিত, হতবাক। রাহেলা দাঁড়িয়ে। বৃষ্টিতে ভিজে গেছে একদম। সস্তা জীর্ণ শাড়ি লেপ্টে আছে শরীরে। ভেজা শাড়িতে স্পষ্ট শরীরের প্রতিটি রেখা। ঠাণ্ডায় মৃদু কাঁপছে। ওর ভরাট সুপুষ্ট বুকে নির্লজ্জ দৃষ্টি রেখে শফিউল জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার?”
আরেকটু এগিয়ে যেতেই, বিজ্ঞাপনের বিশাল বোর্ড চোখে পড়ল। ওটা বাঁয়ে রেখে বস্তিতে যেতে হয়। তাহলে তো পথ ঠিকই আছে, কিন্তু বস্তির চেহারা এমন কেন? কেমন যেন, চেনা দৃশ্যের সাথে ঠিক মেলে না।
ঠোঁটজোড়া একবার কেঁপে উঠল রাহেলার। ডাগর ডাগর চোখে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে সে বলল, “আমারে কিছু ট্যাকা দিবেন?”
নগ্ন উল্লাস ফুটল শফিউলের চোখে। “ভেতরে এসো। টাকা দিচ্ছি। ”
রাহেলা স্খলিত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করল।
সকালে বেরিয়ে রাহেলা হতভম্ব। রাস্তা-ঘাট পানিতে থৈ থৈ। সারারাত বৃষ্টি ঝরেছে। তাই বলে রাস্তায় এত পানি জমে যাবে, কল্পনাও করেনি। রীতিমত বিক্ষুব্ধ নদী হয়ে ফুঁসছে পুরো রাস্তা। কোমর সমান পানি ঠেলে মানুষজন চলাফেরা করছে। অগ্যতা সে-ও আর সবার মতো পানিতে নেমে হাঁটতে থাকল প্রাণপণে। দোকানপাট প্রায় সবই বন্ধ। অধিকাংশ দোকানেই পানি ঢুকেছে। সৌভাগ্যক্রমে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় একটা ফার্মেসি খোলা পেয়ে ছেলের জন্যে ওষুধ কিনল সে। প্রেসক্রিপশন শাড়ির আঁচলে বাঁধা ছিল। পাশেই খেলনা দোকান থেকে একটা লাল বলও কিনে নিল। রাসু একবার বলেছিল লাল বল কিনে দিতে। কিছু খাবার, ওষুধ আর ছেলের জন্যে লাল টুকটুকে একটি বল নিয়ে রাহেলা বস্তির পথ ধরল।
বস্তির কাছাকাছি এসে রাহেলার মনে হলো, পথ ভুল করেছে। আরেকটু এগিয়ে যেতেই, বিজ্ঞাপনের বিশাল বোর্ড চোখে পড়ল। ওটা বাঁয়ে রেখে বস্তিতে যেতে হয়। তাহলে তো পথ ঠিকই আছে, কিন্তু বস্তির চেহারা এমন কেন? কেমন যেন, চেনা দৃশ্যের সাথে ঠিক মেলে না। আরো এগোতেই কানে এলো সম্মিলিত কণ্ঠের আহাজারি। বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠল ওর। দ্রুত পা চালাল। বস্তির সামনে অনেক মানুষের ভীড়। কিছু পুলিশও দেখা যাচ্ছে। এ কোথায় এসেছে সে, কোথায় তার ঘর আর আশে পাশের ঘরগুলো?
ভালো করে দেখার জন্যে এগিয়ে যেতেই, একজন পুলিশ এসে ধমকে উঠল, “এই এখানে কি? ভাগো!”
“আমার ঘরে যামু। ”
“কিসের ঘর?”
“ওইতো ওইখানে আছিল...” হাত দিয়ে তাল তাল মাটির স্তূপ দেখায় রাহেলা।
কোমল হয়ে আসে পুলিশটির দৃষ্টি। “ঘরে কে কে ছিল তোমার?”
“মা আর পোলা। আমার পোলাডার জ্বর। অষুদ আনছি। ” হাতের ওষুধগুলো উঁচু করে দেখায়, “আমার ঘর কই। আমার পোলা?”
পুলিশটি ছলছল চোখে বলল, “পাহাড় ধসে পড়েছে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবার কবর হয়ে গেছে। একজনও বাঁচেনি। ”
রাহেলা টলে উঠে ধপ করে বসে পড়ল কাদামাটিতে। ওষুধগুলো ছিঁটকে পড়ল এদিক সেদিক। লাল বলটিও হাত থেকে পড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে যেতে লাগল ঢালু জমিন বেয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৫