ঢাকা: কবি আবুল হাসান। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাজা যায় রাজা আসে’র প্রথম কবিতায় তিনি লিখেছেন- সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র,/মায়াবী করুণ/এটা সেই পাথরের নাম নাকি?/ এটা তাই?/এটা কি পাথর নাকি কোনো নদী? উপগ্রহ? কোনো রাজা?/পৃথিবীর তিনভাগ জলের সমান কারো কান্না ভেজা চোখ?/মহাকাশে ছড়ানো ছয়টি তারা? তীব্র তীক্ষ্ম তমোহর/কী অর্থ বহন করে এই সব মিলিত অক্ষর? (আবুল হাসান)।
লাবন্য ধারনকারী ক্ষণজন্মা এ কবির জন্মদিন মঙ্গলবার। কবি ১৯৪৭ সালের ৪ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার বর্নি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের ঝনঝনিয়া গ্রামে।
তিনটি মাত্র কাব্যগ্রন্থের (রাজা যায় রাজা আসে, যে তুমি হরণ করো, পৃথক পালঙ্ক) এ বিরলপ্রজ কবি মাত্র ২৯ বছরের আয়ু পেয়েছিলেন। এর মধ্যে মাত্র এক দশকের কবি জীবনে লেখা কবিতা তাকে পাঠক হৃদয় ও বাংলা কবিতায় স্থায়ী আসন দিয়েছে।
কবিতার জন্য তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৫), একুশে পদক (১৯৮২, মরণোত্তর)। ১৯৭০ সালে এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন কবি।
আবুল হাসান ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে এসএসসি ও বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বি.এ শ্রেণীতে ভর্তি হন, কিন্তু পরীক্ষা শেষ না করেই ১৯৬৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের
বার্তাবিভাগে যোগদান করেন। কর্মজীবনে তিনি গণবাংলা (১৯৭২-১৯৭৩) এবং দৈনিক জনপদ-এ (১৯৭৩-৭৪) সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলা কবিতায় আবুল হাসান তার কবিতার মতোই এক মুক্তা ফলানো আক্ষেপের নাম। তিনি লিখেছিলেন, ‘ঝিনুক নীরবে সহো/ঝিনুক নীরবে সহো,/ ঝিনুক নীরবে সহে যাও/ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!’ (ঝিনুক নীরবে সহো)।
হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল আবুল হাসানের। মুখ বুজে মুক্তা ফলানো কবিকে অসুস্থতা ক্রমেই নিয়ে যেতে থাকে মৃত্যুর দিকে। ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মাত্র ২৯ বছর বয়সে তার জীবনাবসান ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৫
আরএম