ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৭৩তম কিস্তি
___________________________________


অধ্যায় এক |
                  সে জানে না সে কোথায়। ধারণা করছে ভালোবাসা মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই তার অবস্থান, কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার কোনো পথ নেই। মাথার ওপর উঁচু সিলিংয়ের জানালাবিহীন একটি কুঠুরি। সাদা সিরামিকের ঝকঝকে দেয়াল। কোথাও গোপন স্থানে বসানো বাতি থেকে একটি ঠাণ্ডা আলো এসে কক্ষটাকে ভরে রাখে সারাক্ষণ, আর টানা একটা ঝিম ধরা শব্দ কানে আসে। হতে পারে বায়ু আসার পথেই উৎপত্তি এই শব্দের। দেয়ালের চৌদিকটা ঘুরিয়ে পেতে রাখা একটি বেঞ্চ, কিংবা তাকিয়াও বলা চলে। পশ্চাৎদেশ পেতে দেয়ালে পিঠ দিয়ে সটান বসার জন্য যথেষ্টই চওড়া। প্রবেশপথ আর তার ঠিক উল্টোদিকে পায়খানার দরজার কাছে বেঞ্চিটি কাটা পড়েছে। পায়খানার প্যানে নেই কাঠের আসন। প্রতিটি দেয়ালে চারটি করে টেলিস্ক্রিন।



দলের কারাবন্দি ও সাধারণ বন্দিদের মধ্যে যে ফারাকটি থাকে তা খুব করে লক্ষ্য  করেছে সে। দলের বন্দিরা ভয়ে কুঁকড়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকে, কিন্তু সাধারণ অপরাধীরা কেউ কাউরে কিছুতেই পাত্তা দেয় না। ওরা নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গেও খিস্তিখেউর করে, নিজেরটা ঠিক মতো না পেলে ভয়ঙ্কর হামলা চালায়, গোপনে পাচার করে আনা খাবার খায়, নিজেদের কাপড়ের মধ্যেই কেমন করে কোনো রহস্যময় লুকোনো স্থানে করে বয়ে আনে সেই খাবার, আর টেলিস্ক্রিনে কোনো নির্দেশনা, হুমকি ধমকি এলে পাল্টা চিৎকার শোরগোল বাজিয়ে দেয়।



হালকা একটা পেটব্যথা চলছেই। সেই যখন ওরা তাকে বেঁধে বদ্ধ একটি ভ্যানে চড়িয়ে রওয়ানা দিল তখন থেকেই ব্যথাটা শুরু। তবে ক্ষুধাও পেয়েছে তার, যন্ত্রণাদায়ক ফালতু রকমের ক্ষুধা। শেষ খেয়েছে চব্বিশ ঘণ্টা হয়ে গেছে হয়ত, নয়ত হতে পারে ছত্রিশ ঘণ্টাও। এখনও সে জানে না, হয়ত কখনোই জানতেও পারবে না, তার গ্রেফতার ঠিক কখন হয়েছিল সকালে, নাকি সন্ধ্যায়। তবে এটা জানে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তার পেটে কোনো দানাপানি পড়েনি।

সরু বেঞ্চটিতে যতটুকু বসা যায় ততটুকুই বসে আছে, হাত দুটো হাঁটুর ওপরে ক্রস করে ফেলে রাখা। চুপচাপ অনড় বসে থাকা এরই মধ্যে সে শিখে গেছে। কোনো রকম অপ্রত্যাশিত নড়াচড়া হলেই টেলিস্ক্রিনে ওদের তারস্বর ভেসে আসে। কিন্তু ক্ষুধার ব্যাকুলতা ক্রমেই তাকে পেয়ে বসছে। এখন তার আর কিছুরই নয়, স্রেফ এক টুকরো রুটির অপেক্ষা। তার ধারণা আলখেল্লার পকেটে গুঁড়ো হয়ে যাওয়া রুটি কিছুটা রয়েছে। হতেও পারে—কারণ পায়ের ত্বকে কিছু একটা অনভূতও হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা রয়েছে পকেটে। ভাবতে ভাবতে ভয়কেও কিছুটা অতিক্রম করেছে সে, আর আলগোছে পকেটে হাতটি ঢুকিয়ে দিয়েছে মাত্র—

‘স্মিথ!’ টেলিস্ক্রিন থেকে ভেসে এলো তীব্র আওয়াজ। ‘৬০৭৯ স্মিথ ডব্লিউ! কারা প্রকোষ্ঠে হাত পকেটে নয়!’

ফের অনড় বসে রইল সে, হাত দুটো হাঁটুর ওপরে আড়াআড়ি হয়ে পড়ে আছে। এখানে আনার আগে তাকে আরেকটি স্থানে নেওয়া হয়েছিল, হতে পারে সেটি সাধারণ কারাগার অথবা টহলদারদের অস্থায়ী লক-আপ। জানে না সেখানে কতক্ষণ ছিল; তবে ঘণ্টা কয়েক তো হবেই; সেখানে কোনো ঘড়ি ছিল না, ছিল না দিনের আলোও, ফলে সময় হিসাব করা কঠিন। ভীষণ শোরগোলে, পুঁতি-গন্ধময় স্থান ছিল সেটি। ওই প্রকোষ্ঠটির আকার এইটির মতোই ছিল তবে ওটি ছিল নোংরা আর আরো দশ পনেরো জনে ঠাসা। ওদের অধিকাংশই ছিল সাধারণ অপরাধী, তবে গুটিকয় রাজনৈতিক বন্দিও ছিল। দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে থেকে নিশ্চুপ হয়ে ছিল তারা সবাই, নোংরা শরীরের গন্ধ নাকে লাগছিল কিন্তু পেটের ব্যথা আর ভয়ের চোটে নিজেই এত বেশি কুঁকড়ে ছিল যে ওগুলোয় ধ্যান দেওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে দলের কারাবন্দি ও সাধারণ বন্দিদের মধ্যে যে ফারাকটি থাকে তা খুব করে লক্ষ্য  করেছে সে। দলের বন্দিরা ভয়ে কুঁকড়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকে, কিন্তু সাধারণ অপরাধীরা কেউ কাউরে কিছুতেই পাত্তা দেয় না। ওরা নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গেও খিস্তিখেউর করে, নিজেরটা ঠিক মতো না পেলে ভয়ঙ্কর হামলা চালায়, গোপনে পাচার করে আনা খাবার খায়, নিজেদের কাপড়ের মধ্যেই কেমন করে কোনো রহস্যময় লুকোনো স্থানে করে বয়ে আনে সেই খাবার, আর টেলিস্ক্রিনে কোনো নির্দেশনা, হুমকি ধমকি এলে পাল্টা চিৎকার শোরগোল বাজিয়ে দেয়। এছাড়াও এদের কারো কারো নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে বেশ খাতির। ওরা তাদের ডাকনামে ডাকে, কারো কারো হাতে দরজার গুপ্তফুঁকো দিয়ে এসে পড়ে দু’চারটি সিগারেটও। নিরাপত্তা রক্ষীরাও এই সাধারণ কয়েদীদের বেশ ধৈর্যের সাথে সামলায়, এমনকি যখন তাদের ওপর চড়াও হতে হয় তখনও। বহুল আলোচিত জবরদস্তিমূলক শ্রম ক্যাম্পও রয়েছে যেখানে অধিকাংশ কয়েদীকেই যেতে হয় অবধারিতভাবে। সে জেনেছে, এসব ক্যাম্পে সবই সই, কোনো ভাবনা নেই যতক্ষণ আপনার কিছু ভালো যোগাযোগ আছে, হাতে পেয়ে যাচ্ছেন ধরার মতো রশি। এখানে ঘুষ চলে, চলে পক্ষপাতিত্ব, আছে সব ফন্দি-ফিকির, সমকামিতা, পতিতাবৃত্তিও; আলু দিয়ে এখানে তৈরি হয় চোলাই মদ। আস্থার সবটুকুই এই সাধারণ অপরাধীদের ওপর ন্যস্ত, বিশেষ করে যারা গ্যাংস্টার, খুনি, যারা তৈরি করেছে এক ধরনের আভিজাত্য। আর এই সকল নোংরা কাজই ঘটে চলে রাজনীতির নামে।

তৃতীয় খণ্ডের ২য় কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।