১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
তৃতীয় খণ্ডের ২য় কিস্তি
___________________________________
হতে পারে, ঘণ্টা দুই কিংবা তিনেক আগে ওরা তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। পেটের ব্যথাটি এক লহমার জন্যও বন্ধ হয়নি, তবে ক্ষণে ক্ষণে কিছুটা কম অনুভূত হয়েছে আবার মাঝে মাঝে চাগাড় দিয়ে উঠছে, তার সঙ্গে মিল রেখে ভাবনার গাড়িও কখনো স্তিমিত কখনো জোর বেগে চলছে। যখন ব্যথাটি বাড়ে তখন ব্যথা আর খাবারের প্রত্যাশা ছাড়া অন্য কিছুই আর ভাবনায় থাকে না। আর যখন ব্যথাটি ধরে আসে তখন মন জুড়ে জেঁকে বসে আতঙ্ক। কোনো কোনো মুহূর্তে তার ভাবনায় ভর করে যা কিছু ঘটতে যাচ্ছে তার কপালে সে সবের কল্পনা। আর এতে তার হৃদযন্ত্রটি লাফাতে থাকে আর শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। অনুভবে আসে কনুইয়ে লাঠির আঘাত, লোহার পাত বসানো জুতোয় জঙ্ঘাস্থিতে কষে বসানো লাথি, নিজেকে সে দেখতে থাকে মেঝের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে আর ভেঙ্গে ফেলা দাঁতের ফাঁকা দিয়ে করে যাচ্ছে ক্ষমার চিৎকার। জুলিয়ার কথা তার মনেই আসে না। এলেও ওর ওপর মনকে স্থির করতে পারে না। জুলিয়াকে সে ভালোবাসে আর তার সঙ্গে প্রতারণা করবে না, কিন্তু সে তো সত্য মাত্র, সেটা সে জানে ঠিক যেমনটি জানে অঙ্কের নিয়ম।
তবে একটি রেজর ব্লেডের কথা বলেছিলেন, বলেছিলেন ওরা যদি পারে একটি রেজর ব্লেড তোমাকে পৌঁছে দেবে। আর নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে কারা প্রকোষ্ঠে পৌঁছানোর আগে পাঁচ সেকেন্ড সময়ও পাওয়া যাবে। এই ব্লেড তাকে জ্বলন্ত এক শীতল কামড় বসাবে, যে আঙুলে সেটি ধরা থাকবে সেটি কেটে যাবে হাড্ডি অবধি। কল্পনায় সবকিছুই যেন ফিরে এসেছে তার অসুস্থ শরীরে, সামান্য ব্যথা বেড়ে এখন কম্পমান অসহনীয় রূপ নিয়েছে। রেজর ব্লেড হাতে পেলেও তার ব্যবহার করবে কি না তা মোটেই নিশ্চিত নয় সে।
কিন্তু এখন এই মুহূর্তে তার প্রতি কোনো ভালোবাসা সে অনুভব করছে না, এমনকি তার কী হয়েছে সে নিয়ে কৌতূহলও হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে ও’ব্রায়েনকেও মনে পড়ে, সূক্ষ্ম একটা আশা জাগানিয়া সে ভাবনা। ও’ব্রায়েন জানলেও জানতে পারেন সে এখন ধৃত। তিনি তো বলেইছিলেন, ব্রাদারহুড কখনোই তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে না। তবে একটি রেজর ব্লেডের কথা বলেছিলেন, বলেছিলেন ওরা যদি পারে একটি রেজর ব্লেড তোমাকে পৌঁছে দেবে। আর নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে কারা প্রকোষ্ঠে পৌঁছানোর আগে পাঁচ সেকেন্ড সময়ও পাওয়া যাবে। এই ব্লেড তাকে জ্বলন্ত এক শীতল কামড় বসাবে, যে আঙুলে সেটি ধরা থাকবে সেটি কেটে যাবে হাড্ডি অবধি। কল্পনায় সবকিছুই যেন ফিরে এসেছে তার অসুস্থ শরীরে, সামান্য ব্যথা বেড়ে এখন কম্পমান অসহনীয় রূপ নিয়েছে। রেজর ব্লেড হাতে পেলেও তার ব্যবহার করবে কি না তা মোটেই নিশ্চিত নয় সে। নির্ঘাত নির্যাতন জেনেও আরও দশটি মিনিটের জীবন প্রত্যাশিত। একটি মুহূর্ত থেকে আরেক মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
কুঠুরীতে কতগুলো ইট তা গুনে দেখে কখনো কখনো। গুনে ফেলাটা কঠিন কিছু কাজ নয়, কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনো পর্যায়ে খেই হারিয়ে ফেলে। বারবার কৌতূহল জাগে, কোথায় সে, কয়টা বাজে এসব জানার। একটা সময় তার নিশ্চিত করেই মনে হয় বাইরে এখন রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিবালোক, আবার একটু পরে একই নিশ্চয়তায় তার মনে হয় বাইরে ঘুঁটঘুটে আঁধারের রজনী। এইখানে, গভীর উপলব্ধিতে সে বুঝতে পারে, আলো কখনোই নেভে না। এ এক স্থান যেখানে কোনো আঁধার নেই: এখন সে বুঝল কেন ও’ব্রায়েন সেদিনের সেই পরোক্ষ কথার মানে ঠিক ধরে ফেলেছিলেন। ভালোবাসা মন্ত্রণালয়ে কোনো জানালা নেই। তার প্রকোষ্ঠটি হতে পারে ভবনের ঠিক মাঝখানটিতে, অথবা পাশের কোনো দেয়াল ঘেঁষাও, হতে পারে মাটির নিচে আরো দশতলা গভীরে, কিংবা মাটি থেকে আরো ত্রিশ তলা উপরে। মনে মনে সে বিচরণ করতে লাগল ভবনের এখান থেকে সেখানে, আর শরীর ও মনানুভূতি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করল কোথায় সে, অতি উচ্চে বায়ুতে নাকি অতি গভীর তলদেশে।
তৃতীয় খণ্ডের ৪র্থ কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ৩) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।