১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
তৃতীয় খণ্ডের ৬ষ্ঠ কিস্তি
___________________________________
তীব্র তারস্বরে ক্রোধান্বিত গর্জন বেরিয়ে এলো টেলিস্ক্রিন থেকে। চোয়ালবিহীন লোকটি লাফ মেরে নিজের আসনের সামনে। খুলিমুখো মানুষটি দ্রুতই দুটি হাত লুকিয়ে ফেললেন পিছনে, যেন গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চান, ওই উপহার তিনি নিতে চান নি।
‘বামস্টিড!’ গর্জে উঠল কণ্ঠস্বর। ‘২৭১৩ বামস্টিড জে.! রুটির টুকরোটি নিচে ফেলে দাও!’
চোয়ালহীন মানুষটি রুটির টুকরোটি মেঝেতে ফেলে দিলেন।
‘ঠিক যেখানে রয়েছো সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকো’—নির্দেশ কণ্ঠস্বরের। ‘দরজার দিকে মুখ করো, আর কোনো নড়াচড়া নয়। ’
‘কমরেড! অফিসার!’—কান্না জুড়ে দিলেন তিনি। ‘আমাকে ওখানে নেওয়ার প্রয়োজন নেই! আমি তো আগেই আপনাদের সব বলেছি। এর বাইরে আর কী জানতে চান আপনারা? স্বীকার করে নেওয়ার মতো আর তো কিছুই নেই, কিচ্ছু না! আমাকে বলুন আর কী জানতে চান? আমি সোজা সব স্বীকার করে নেব। লিখে দিন আমি সই করে দেই—যা কিছু! কিন্তু ওই ১০১ নম্বর রুমে নেবেন না!’
ঠিক ঠিক মানলেন চোয়ালহীন লোকটি। তার বড় ঝুলে থাকা গালদুটি থরথর করে নিয়ন্ত্রণহীন কেঁপে চলেছে। ক্যাঁচ করে খুলে গেল দরজার পাল্লা। তরুণ কর্মকর্তাটি ভিতরে ঢুকেই পাশের দিকে সরে গেলে বিশাল বাহু আর কাঁধের এক ষণ্ডামার্কা নিরাপত্তারক্ষী ঢুকল। চোয়ালহীনের ঠিক সামনে ততক্ষণে দাঁড়িয়ে সে, আর তখনই, কর্মকর্তার ইশারা পেয়ে, শরীরের সব শক্তি দিয়ে চোয়ালহীন মুখটির ওপর কষে এক ঘুষি বসিয়ে দিল। ঘুষির চোটে লোকটি মেঝেতে পড়ে ছিটকে পায়খানার প্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেলেন। হতভম্বের মতো কিছুটা সময় সেভাবেই পড়ে থাকলেন, মুখ আর নাক দিয়ে ততক্ষণে কালো ঘন রক্ত বেরিয়ে এসেছে। একটা অতি হালকা শব্দ গুমড়ে উঠল, অসচেতনতায় তা বেরিয়ে এলো লোকটির মুখ থেকে। এরপর হাত ও হাঁটুতে ভর দিয়ে অবিন্যস্তভাবে নিজেকে তুলে ওঠালেন। রক্ত আর লালা সমেত দুই পাটি দাঁত মুখ থেকে ঝরে পড়ল।
বাকি কয়েদীরা সবাই স্থির বসে আছে। প্রত্যেকের হাত হাঁটুর ওপর আড়াআড়ি করে রাখা। হামাগুড়ি দিয়ে চোয়ালহীন মানুষটি নিজের স্থানে ফিরলেন। মুখের নিচের দিকে একটি অংশে মাংস ততক্ষণে কালচে রঙ ধরেছে। ধীরে ধীরে পুরো মুখটি চেরি-রঙা একটি কদাকার রূপ নিল, যার ঠিক মাঝখানে একটি কালো গর্ত।
একটু পর পর কিছুটা রক্ত আলখেল্লার বুকের ওপর পড়ছে। তার ধূসর চোখ দুটো তখনও মুখ থেকে মুখে ফিরছে, তাতে আগের চেয়েও বেশি অপরাধের অভিব্যক্তি, যেন আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তার এই অপদস্থতায় অন্যদের অবজ্ঞা কতখানি।
দরজা খুলে গেলো। সামান্য ইশারায় খুলিমুখো লোকটিকে নির্দেশ করলেন তরুণ কর্মকর্তা।
‘রুম ১০১’—বললেন তিনি।
উইনস্টনের দিকটায় একটা হাঁপানি আর ব্যাকুলতার শব্দ উঠল। লোকটি তার দুই হাত জোর করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন।
‘কমরেড! অফিসার!’—কান্না জুড়ে দিলেন তিনি। ‘আমাকে ওখানে নেওয়ার প্রয়োজন নেই! আমি তো আগেই আপনাদের সব বলেছি। এর বাইরে আর কী জানতে চান আপনারা? স্বীকার করে নেওয়ার মতো আর তো কিছুই নেই, কিচ্ছু না! আমাকে বলুন আর কী জানতে চান? আমি সোজা সব স্বীকার করে নেব। লিখে দিন আমি সই করে দেই—যা কিছু! কিন্তু ওই ১০১ নম্বর রুমে নেবেন না!’
‘রুম ১০১’—বললেন কর্মকর্তাটি।
তৃতীয় খণ্ডের ৮ম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।