ঢাকা, বুধবার, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সনির ব্লুজ (৬) | জেমস আর্থার বাল্ডউইন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন

অনুবাদ গল্প ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
সনির ব্লুজ (৬) | জেমস আর্থার বাল্ডউইন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন

জেমস আর্থার বাল্ডউইন (২ আগস্ট, ১৯২৪-পহেলা ডিসেম্বর, ১৯৮৭) একাধারে একজন আমেরিকান ছোট গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, নাট্যকার, কবি এবং সমাজ সমালোচক। তার প্রবন্ধ সংগ্রহ ‘নোট অব আ নেটিভ সন’ (১৯৫৫)-এ তিনি বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়কার আমেরিকার পশ্চিমা সমাজে বিদ্যমান এবং তখনও আলোচিত হয়নি এমন সাম্প্রদায়িক, যৌন এবং নানা ধরনের শ্রেণী বিভেদ এবং এই সংক্রান্ত অনেক অপরিহার্য সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন।

দ্য ফায়ার নেক্সট টাইম (১৯৬৩), নো নেইম ইন দ্য স্ট্রিট (১৯৭২), এবং দ্য ডেভিল ফাইন্ড ওয়ার্ক (১৯৭৬) তার আরো তিনটি বিখ্যাত প্রবন্ধ সংগ্রহ।

বাল্ডউইনের উপন্যাস এবং নাটক সমূহে কৃষ্ণাঙ্গসহ সমকামী এবং উভকামী পুরুষদের মৌলিক ব্যক্তিগত অনেক প্রশ্ন এবং জটিল সব সামাজিক ও মানসিক পীড়ন এবং ন্যায়সঙ্গত চাওয়া পাওয়া কাহিনী হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। একই সঙ্গে এধরনের ব্যক্তিত্বের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে বেশ কিছু আভ্যন্তরীণ বাঁধা বিঘ্নও বর্ণিত হয়েছে। সমকামীদের অধিকারের বিষয়টি আমেরিকা জুড়ে ব্যাপকভাবে সমর্থন পাবার আগেই এসম্পর্কে বল্ডউইন তার বিখ্যাত উপন্যাস, গিওভানি’স রুম (১৯৫৬) লেখেন, এটি তার দ্বিতীয় উপন্যাস। তার প্রথম উপন্যাস, গো টেল ইট ওন দ্য মাউন্টেইন, তার সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম।

সনি’স ব্লুজ গল্পটি বল্ডউইনের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং নির্বাচিত গল্পগুলির একটি। এটি ১৯৫৭ সালে প্রথম ছাপা হয়, পরে গোয়িং টু মিট দ্য ম্যান (১৯৬৫) গল্প সংগ্রহে ঠাঁই পায়। - অনুবাদক



পঞ্চম কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন



একা একাই হাসে এবং আমরা দুজনেই রাস্তার ওপাশে ভিড়ের দিকে তাকাই। তিন বোন আর এক ভাই এক সঙ্গে মাথা নুইয়ে গাইছে—আবারও দেখা হওয়া পর্যন্ত প্রভু যেন তোমার সঙ্গে থাকেন। ওদের ঘিরে থাকা মুখগুলো তখন খুবই শান্ত। এরপর গানটা শেষ হয়। ছোট্ট ভিড়টা মিলিয়ে যায়। আমরা তখন দেখি তিন বোন আর সেই একা লোকটা সড়ক ধরে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে।

“মহিলা আগে যখন গেয়েছিল”—হঠাৎ, সনি বলে ওঠে, “তার স্বর মিনিট খানেকের জন্য আমাকে হেরোইনের স্বাদ কেমন তা বুঝতে সাহায্য করেছিল—যখন সেটা শিরার ভেতরে থাকে। এটা একই সঙ্গে তোমাকে এক ধরনের শীতলতা এবং উষ্ণতার অনুভূতি দেবে। এবং দূরের। এবং—এবং নিশ্চিত। ” ইচ্ছে করেই ও আমার দিকে না তাকিয়ে বিয়ারে চুমুক দেয়। আমি ওর মুখটা দেখি। “এটা তোমাকে পরশ দেবে—নিয়ন্ত্রণের। কখনো সখনো তোমার এমন অনুভূতি হয়েছিল। ”
“হয়ে ছিল কি?” আমি ধীরে আরাম চেয়ারে বসি।
“কখনো সখনো। ” ও সোফার কাছে গিয়ে আবারও নোটবুকটা হাতে তুলে নেয়। “কিছু লোক করে। ”
“বাজাবার”—আমি জিজ্ঞেস করি, “জন্যে?” আমার গলার স্বর ছিল খুবই বিশ্রী, ঘৃণা আর ক্ষোভে ভরা।
“ভালো”—ও প্রচণ্ড দুশ্চিন্তার চোখে আমার দিকে তাকায়, যেন সত্যিসত্যি, সে আশা করেছে তার চোখ দুটা আমাকে এমন কিছু বলছে সেটা ছাড়া অন্যকিছু বলা সম্ভব নয়—“ওরা এমনই মনে করে। এবং যদি তারা এমনই মনে করে—!”
“আর তোমার কী মনে হয়?” আমি জিজ্ঞেস করি।



আমি আরো বেশি কিছু বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। আমি কথা বলতে চাই ইচ্ছাশক্তি এবং জীবন কেমন করে—ভালো, সুন্দর হতে পারে। আমি বলতে চাই এর সবটা ভেতরেই থাকে; তবে আগে কি ছিল না? অথবা, বরং, সেটাই কি সত্যিকার সমস্যা ছিল না? আর আমি অঙ্গীকার করতে চেষ্টা করি যে আর কখনোই ওকে আবারও হেরে যেতে দেব না। কিন্তু এর সবই—ফাঁকা বুলি আর মিথ্যা বলে মনে হয়



ও সোফায় বসে এবং বিয়ারের ক্যানটা মেঝেতে রাখে। “আমি জানি না”—ও বলে, এবং আমি নিশ্চিত নই ও কি আমার প্রশ্নের জবাব দিল নাকি নিজের ভাবনা হাতড়ে বেড়ালো। ওর মুখ দেখে তা বোঝা যায় না। “বাজাবার সঙ্গে এর খুব একটা সম্পর্ক নেই। একে এর মাঝেই দাঁড়াতে হয়, অন্তত একে সক্ষম হতে হয়। যেকোন পর্যায়ে। ” ও ভ্রু কুঁচকায় এবং  হাসে। “ঝাঁকিয়ে গানের কলি বের করতে। ”
“কিন্তু তোমার সেই বন্ধুরা”—আমি বলি, “ওদের দেখে মনে হয় ঝাঁকিয়ে ওরা দ্রুত নিজেদেরই টুকরো করে ছাড়ছে। ”
“হতে পারে। ”

সে নোটবুকটা নিয়ে খেলতে শুরু করে। এবং আমাকে এমন কিছু একটা বলে যাতে আমি আমার জিহ্বা নিয়ন্ত্রণে রাখি, যাতে সনি ভালো মতো কথা বলতে পারে, যাতে আমি শুনি। “কিন্তু তুমি কেবল একজনের কথা জানো যে ভেঙ্গে টুকরো হয়ে গেছে। কেউ কেউ ভাঙ্গেনি—অথবা অন্তত ওরা এখন পর্যন্ত তার ছোঁয়া পায়নি এবং শুধু এটাই আমাদের যে কেউ বলতে পারে। ” ও থামে। “এবং কেউ কেউ আছে যারা কেবল বেঁচে থাকে, সত্যি সত্যি দোযখে বসবাস করে আর সেটা ওরা জানে আর কী ঘটছে সেটা ওরা দেখে আর ওরা ঠিকঠাক মতো চলে। আমি তা জানি না। ” ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে, নোটবুকটা নামিয়ে রেখে, হাত ভাঁজ করে। “কেউ কেউ, তুমি বলতে পারো তারা ওরকমভাবেই বাজায়, তারা সব সময় কোনো না কোনো কিছুর ওপর থাকে। আর তুমি সেটা চাক্ষুষ দেখতেও পাবে, এটা ওদের জন্য কোনো কিছুকে বাস্তব করে তোলে। কিন্তু অবশ্যই”—ও মেঝে থেকে বিয়ারটা তুলে নেয় এবং তাতে চুমুক দেয় এবং আবারও ক্যানটা নামিয়ে রাখে, “ওরা সেটা চায়ও, তুমি সেটা দেখে এসেছো। এমনকি ওদের কেউ কেউ বলে বেড়ায় ওরা এসব নেয় না—কেউ কেউ, সবাই নয়। ”

“আর তোমার কী খবর?” আমি জিজ্ঞেস করি—কিছু করার থাকে না। “তোমার কী খবর? তুমি কী চাও?”

ও উঠে দাঁড়ায় এবং হেঁটে জানালার কাছে যায়। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। “আমি”—ও বলে। তারপর: “আগে যখন আমি সিঁড়ির নিচে থাকতাম, এখানে উঠে আসার সময়, সেই মহিলার গান শুনতে পেতাম, সেটা আমাকে হঠাৎই আঘাত করে জানান দিত কতটা দুর্ভোগের মাঝ দিয়ে সে যাচ্ছে—যে এভাবে গাইছে। সেটা বুঝতে হলে তোমাকেও অনেক বেশি ভুগতে হবে। ”
আমি বলি: “কিন্তু কষ্ট না পেয়ে তো কোনো উপায় নেই—আছে কি, সনি?”
“আমার বিশ্বাস নেই”—ও বলে এবং হাসে, “কিন্তু সেটা কাউকে চেষ্টা থেকে বিরত রাখবে না। ” সে আমার দিকে তাকায়। “রেখেছে কি?” আমি সেই উপহাসের চাহনি দেখে বুঝতে পারি আমাদের মাঝে যা দাঁড়িয়ে গেছে তা সময়ের ক্ষমতা বা ক্ষমাশীলতার বাইরে, এই সত্যটা উপলব্ধি করবার পর আমি চুপ থাকি—বহুক্ষণ!—কখন ওর সাহায্যের জন্য মানুষের কথা দরকার হয়। ও জানালার দিকে ফিরে। “না, না ভুগে কোনো উপায় নেই। কিন্তু এর মাঝে ডুবে যাওয়া ঠেকাতে তোমাকে সব রকম চেষ্টাই করতে হবে, এর ওপর ভেসে থাকতে, এবং একে দৃশ্যমান করতে—ভালো, তোমার মতো। তুমি ঠিকঠাক কিছু একটা করেছো তার মতো, আর এখন তুমি অধীর হয়ে ভুগছো, “লোকে কেন ভোগে? হতে পারে এর কোনো একটা বা যেকোন কারণ দাঁড় করাবার চাইতে কোনো কিছু করাই আসলে ভালো। ”
“কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলাম”—আমি বলি, “যে কষ্ট না পেয়ে আসলে কোনো উপায় নেই। এটাই কি ভালো নয়, এরপর, কেবল—একে গ্রহণ করা?”
“কিন্তু কেউই একে এমনি এমনি মেনে নেবে না”—সনি চিৎকার করে ওঠে, “সেইটাই আমি তোমাকে বলছি! সবাই একে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। তুমি কেবল কিছু কিছু লোক যেমনটা চেষ্টা করে সেটা নিয়ে পড়ে রয়েছো—এটা তোমার কাজ নয়!”

আমার মুখের পশমগুলো চুলকাতে থাকে, মুখটা ভেজা মনে হয়। “কথাটা সত্য নয়”—আমি বলি, “কথাটা সত্য নয়। অন্য লোকেরা যা করে আমি তার পরোয়া করি না, এমনকি ওরা কিভাবে ভোগে আমি তারও পরোয়া করি না। তুমি কিভাবে ভুগছো আমি কেবল সেটা নিয়েই চিন্তিত। ” এবং ও আমার দিকে তাকায়। “দয়া করে আমাকে বিশ্বাস করো”—আমি বলি, “আমি তোমাকে দেখতে চাই না—মরেছো—না ভুগতে চেষ্টা করে। ”
“আমি তা করছি না”—আমার মুখের ওপর ও বলে, “না ভুগতে মরার চেষ্টা। অন্তত, কারো আগে নয়। ”
“কিন্তু সেটার কোনো দরকার নেই”—হাসতে চেষ্টা করে আমি বলি, “আছে কি? তোমার নিজেকে হত্যা করার। ”

আমি আরো বেশি কিছু বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। আমি কথা বলতে চাই ইচ্ছাশক্তি এবং জীবন কেমন করে—ভালো, সুন্দর হতে পারে। আমি বলতে চাই এর সবটা ভেতরেই থাকে; তবে আগে কি ছিল না? অথবা, বরং, সেটাই কি সত্যিকার সমস্যা ছিল না? আর আমি অঙ্গীকার করতে চেষ্টা করি যে আর কখনোই ওকে আবারও হেরে যেতে দেব না। কিন্তু এর সবই—ফাঁকা বুলি আর মিথ্যা বলে মনে হয়।

তাই সেই অঙ্গীকারটা আমি নিজের কাছে করি এবং প্রার্থনা করি যে আমি তা রাখব।

“ভেতরে ভেতরে, এটা কখনো কখনো খুবই ভয়ানক”—ও বলে, “সেটাই আসল সমস্যা। তুমি এসব শীতল, কালো, ভয়ানক পথ ধরে হেঁটে যাবে এবং কথা বলার জন্য সেই পথে জীবন্ত কোন গাধা পর্যন্ত খুঁজে পাবে না, এবং সেখানে ঝাঁকাবার জন্য কিছুই নেই, এবং এর থেকে বেরুবারও কোনো পথ নেই—ভেতরকার সেই ঝড় থেকে। তুমি এর সঙ্গে কথা বলতে পারবে না এবং তুমি একে ভালোও বাসতে পারবে না, এবং শেষে যখন এর সঙ্গে থাকতে আর বাজাতে চেষ্টা করবে, তখনই কারো না শুনবার ব্যাপারটা বুঝতে পারবে। তাই তোমাকে শুনতে হয়েছে। শুনবার জন্য একটা পথ খুঁজে নিতে হয়েছে। ”

এবং এরপর সে হেঁটে জানালার কাছ থেকে সরে আসে এবং আবারও সোফায় এসে বসে, যেন হঠাৎই সব বাতাস মিলে একসঙ্গে ওকে ঠেলতে শুরু করেছে। “কখনো কখনো বাজাবার জন্য তুমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে, এমনকি নিজের মায়ের গলাটা পর্যন্ত কাটতে দ্বিধা করবে না। ” ও হাসে এবং আমার দিকে তাকায়। “নতুবা তোমার ভাইয়ের। ” তারপর গম্ভীর স্বরে বলে। “নতুবা তোমার নিজেরটা। ” তারপর বলে: “চিন্তা করো না, আমি এখন ঠিক আছি এবং আমি মনে করি আমি ঠিকই থাকব। কিন্তু আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না—আমি কোথায় ছিলাম। আমি কেবল বাস্তব কোনো জায়গায় থাকার কথা বোঝাচ্ছি না, বলতে চাইছি আমি কোথায় ছিলাম এবং আমি কী করেছি। ”
“তুমি কী করেছো, সনি?” আমি জিজ্ঞেস করি।
সে হাসে—তবে সোফায় পাশ ফিরে বসে, কনুই পেছনে হেলান দিয়ে রেখে, আঙ্গুলের সাহায্যে মুখ আর থুতনি জুড়ে হাতড়ে বেড়াচ্ছে, আমার দিকে তাকাচ্ছে না। “আমি এমন কিছু একটা ছিলাম যা আমি চিনে উঠতে পারিনি, জানতামও না আমি তা হতে পারি। জানতাম না কেউ তা হতে পারে। ” ভেতরের দিকে তাকিয়ে, ও থামে, একই সঙ্গে ওকে অসহায় যুবক আর বৃদ্ধের মতো মনে হয়। “এখন আমি এটা নিয়ে কথা বলছি না তার কারণ নিজেকে আমার দোষী বলে মনে হচ্ছে বা সেরকম কিছু একটা—হতে পারে সেটা পারলে অনেক ভালো হতো, আমি জানি না। যাই হোক, সত্যি বলতে কি আমি এটা নিয়ে কথা বলতে পারছি না। তোমার সঙ্গে নয়, কারো সঙ্গে নয়”—এবং এবার সে ঘুরে আমার দিকে মুখ করে। “কখনো কখনো, তুমি জানো, এবং বাস্তবে আমি যখন সবচেয়ে বেশি পৃথিবীর বাইরে থাকি, আমার মনে হয় আমি এর ভেতরে রয়েছি, যেন আমি এর সঙ্গে রয়েছি, সত্যি, এবং আমি বাজাতে পারি অথবা সত্যিই আমি বাজাতে পারি না, এটা কেবল আমার ভেতর থেকে বেরয়, এটা ওখানেই ছিল। আর আমার জানা নেই কী করে বাজিয়েছি, সেটা নিয়ে এখন ভাবছি, কিন্তু কেমন করে আমি জানলাম আমি ভীষণ রকমের একটা জিনিস করেছি, সেই সময়, কখনো কখনো, লোকেদের দিকে। অথবা ওদের দিকে কিছুই করিনি—এটা এমন ছিল যেন ওরা বাস্তব ছিল না। ” সে বিয়ারের কৌটাটা তুলে নেয়; সেটা ছিল ফাঁকা; সে তার দুহাতের মাঝে সেটা পাকায়: “এবং অন্যান্য সময়—ভালো, আমার একটু স্থিরতা দরকার ছিল, ঠেস দেবার জন্য আমার একটা চমৎকার জায়গার দরকার ছিল, শুনবার জন্য একটা পরিচ্ছন্ন জায়গা—এবং আমি সেটা পাইনি, এবং আমি—পাগল হয়ে যাই, নিজের প্রতি ভয়ানক সব কাজকারবার করতে শুরু করি, নিজের কাছে ভয়ানক হয়ে উঠি। ” সে দুহাত দিয়ে বিয়ারের কৌটাতে চাপ দিতে থাকে, আমি সেই ধাতব গোঙানি শুনতে পাই। সেটা চকচক করছিল, যখন ও সেটা নিয়ে খেলছিল, একটা ছুরির মতো, এবং আমার ভয় হচ্ছিল ও হয়ত হাত কেটে ফেলবে, তবু আমি কিছুই বলি না। “ওহ ভালো। আমি কখনোই তোমাকে বলতে পারিনি। আমি কোনো কিছুর তলানিতে ছিলাম, দুর্গন্ধে, ঘামে ভিজে, কেঁদে কাঁপতে কাঁপতে আমি তার গন্ধ শুঁকি, তুমি জানো? আমার দুর্গন্ধ, আর আমার মনে হয়েছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পরলে আমি মরে যাব এবং একইভাবে আমি এও জানতাম যে যা কিছুই করছি তাতে করে এর মাঝে আরো বেশি নিজেকে বন্দী করে ফেলছি। আর আমি জানতাম না। ”

সে থামে, তখনও বিয়ারের কৌটাটাকে চ্যাপ্টা করছে, “আমি জানতাম না, এখনো পর্যন্ত আমি জানি না, কিছু একটা আমাকে বলছিল নিজের দুর্গন্ধ শুঁকা হয়ত ভালো কিছুই হবে, কিন্তু আমার মনে হয়নি আমিও সেটাই করতে চেষ্টা করেছি—এবং—কে এর বিরোধিতা করতে পারত?” এবং হঠাৎই সে দুমড়ানো বিয়ারের কৌটাটা ফেলে দিয়ে, আমার দিকে ছোট্ট একটা হাসি দেয়, স্থির হাসি, এবং তারপর উঠে দাঁড়িয়ে, এমনভাবে জানালার দিকে এগিয়ে যায় যেন চুম্বকের আস্ত একটা পাথর। আমি ওর মুখটা দেখি, ও রাস্তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। “মা যখন মারা যান কথাটা তোমাকে বলতে পারিনি—কিন্তু আমি হারলেম ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম মাদক ছাড়বার জন্যে। এবং তারপর, যখন আমি দূরে চলে যাই, সত্যি বলতে কি, একারণেই আমি দূরে চলে গিয়েছিলাম। যখন আমি ফিরে আসি, ততদিনে কোনো কিছুই বদলায়নি, আমিও বদলাইনি, আমার কেবল—বয়স বেড়েছে। ” এবং ও থামে, জানালার শার্সির ওপর আঙ্গুল দিয়ে আঘাত করতে থাকে। সূর্যটা মিলিয়ে গেছে, খুব শীঘ্র চারদিকে আঁধার নেমে আসবে। আমি ওর মুখটা দেখি। “এটা আবারও ফিরে আসতে পারে”—ও বলে, যেন নিজের সঙ্গে কথা বলছে। তারপর আমার দিকে ফিরে। “এটা আবারও ফিরে আসতে পারে”—ও আবারও বলে। “আমি কেবল তোমাকে জানিয়ে রাখতে চাইছি। ”
“ঠিক আছে”—শেষে, আমি বলি। “তাই এটা আবারও ফিরে আসতে পারে। ঠিক আছে। ”
ও হাসে। কিন্তু হাসিটা বিষাদময়। “আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম”—ও বলে।
“হ্যাঁ”—আমি বলি। “আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। ”
“তুমি আমার ভাই”—আমার দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে, এবং একটুও না হেসে, সে বলে।
“হ্যাঁ”—আমি আবারও বলি, “হ্যাঁ। আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। ”
ও জানালার দিকে ঘুরে, বাইরে তাকায়। “সব ঘৃণা ওইখানে নিচে”—ও বলে, “সব ঘৃণা এবং রহস্য আর ভালোবাসা। এটা একটা বিস্ময় যে এটা অ্যাভিনিউটাকে উড়িয়ে দূরে সরিয়ে দেয় না। ”

শেষ কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন



বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।