জীবনের কলমন্ত্রস্বর
তাকিয়ে রয়েছি আমি একখণ্ড সৌরকণা খসে পড়বে বলে
আর এক সবুজ গ্রহের জন্মপথ হাঁটা হবে বলে
পথিক-থলির মধ্যে জমিয়ে রেখেছি আমি ঘন মেঘছায়া,
জমিয়েছি অশ্বত্থের পাখিডাকা বীজ
আমার থলিতে আছে শিশুদের জন্মস্বর, রৌদ্রের রুপালি গন্ধ,
বৃষ্টির অথৈ নূপুর,
আমাকে শুধাবে ওরা, হে অদ্ভুত পথিক, কোথা থেকে এলে?
পদচিহ্নে কার লিপি লেখা, বলো, কার জলছাপ?
আমি কোনো জবাব দেব না
আকাশে ওড়াব শুধু এক মুঠো ভোরের শিশির।
ডেকে নেব নদী আর সন্ধ্যার ঢেউজাগা হাওয়া।
যদি প্রশ্ন করে, ‘এ অরূপ আভা, এ দেহলাবণ্য তুমি
কোথা থেকে পেলে?’
বলি তারে, ‘এই দেখ সূর্যোদয়, হিমেল গোধূলি
ধানক্ষেত, ভরামাঠ, শ্যামল ঘাসের সব সরস মাধুরী
যদি চাও মধ্য দিনে নিবিড় বনের ঘনছায়া
তাও পেয়ে যাবে। ’
আমার কৌটায় ভরা বৃষ্টিজল, পাখামেলা ময়ূরের কাংসক্রেঙ্কার
এ-দেহে লুকানো আছে ফুল-গন্ধ-মধুময় বসন্ত-উদ্যান।
দেখতে চাও তো দেখো, নাভিতে সমুদ্র নাচে, কী অগাধ তুমুল তুফান!
শুনতে চাও তো কান পেতে শোনো, কী গভীর জীবনের কলমন্ত্র স্বর!
আমি কবি
মাঝরাতে বাদলের গানে ভুলে যাই
তীরবিদ্ধ এ বুকের গহন যন্ত্রণা।
বৃষ্টি নিবিড় শব্দে নুপূর বাজায়
সাঁই সাঁই শব্দ ওঠে, গানে মত্ত নিশিথ বাতাস।
নেমে আসে হাজার কিন্নর—
ভুলে যাই সারাদিন উড়ে আসা তীর।
কবি আমি মানুষকে ভালোবাসি
মানুষের জন্য কথা বলি
তাই আমাকে পুড়িয়ে মারতে
জ্বলে ওঠে দানবের কুতকুতে চোখ।
আমি তো সত্যের কথা বলি,
কোদালকে সর্বদাই বলি যে কোদাল
তাই ক্রোধে জ্বলে কুপিত বুকের।
তৈলসিক্ত বন্দনার গান যারা শোনে
আমাকে পাঠাবে তারা নির্বাসনে
আন্দামানে সংগোপনে চলছে
সেই গুপ্ত আয়োজন।
তবু যত দিন আছি, সেখানেই আছি,
আমি কবি।
আমার এ চোখ যাবে অসীম আকাশে
কারার প্রকোষ্ঠ ভেদ করে
আমার হৃদয়ে নামবে তুমুল বাদল।
যদি বিষপানে মারতে চাও মারো,
আমি তো প্রণাম করি হেমলক পেয়ালা।
যদি গুলি করো
বুক পেতে দিব।
কবির ঊর্বর রক্তে
ফুল ফুটবে এ বন্ধ্যা শহরে।
উপেক্ষা, অপমান, নির্বাসন
দণ্ড কিংবা প্রাণদণ্ড
যে অশ্রু ফেলে যায় কবি,
সেই তো চন্দনবৃষ্টি—
ফোটায় তা বন্ধ্যা দেশে গোলাপের ঝাড়।
যতদিন বেঁচে থাকে কবি
যতই উপেক্ষা থাক
যতই দেখাক ভয় দাঁতাল শুয়োর
কবিকে প্রণাম করে বিনত আকাশ।
জ্যোৎস্না এসে সঙ্গ দেয় নিঃসঙ্গ কবিকে
উড়ে যাওয়া বলাকার ঝাঁক
কবিকে পাখায় নেয় তুলে।
মাঝরাতে বৃষ্টিধারা এসে
মল্লারের নিশিথ কূহকে
কবিকে জাগায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫