ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একজোড়া কবিতা | দীনা আফরোজ

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫
একজোড়া কবিতা | দীনা আফরোজ

মায়ের গল্প

বেগুন গাছের চারা লাগাতে লাগাতে মা বলতেন, ভবিষ্যত দেখা যাবে একদিন এই গাছটিতে। আরো বলতেন, ঝিনুকের পেটে মুক্তোর অস্তিত্বের কথা।

আমি এখন বেগুন ফুল দেখে ছুটে যাই সমুদ্রে, নোনা জলের গভীরে খুঁজি মুক্তোহীন ঝিনুকের ঘর। মাকে দেখি আর মরা গাছে ফুল ফোটাই প্রতিনিয়ত। মুক্তোর অস্তিত্ব থাক বা না থাক ঝিনুকের ওপর রাখি অকৃত্রিম বিশ্বাস। বিশ্বাসই শক্তি, মেনে এই শাশ্বত বাণী। মা বলেন, বাঁচতে হলে পলে পলে তালি দিতে হয় ছেঁড়া জায়গায়। কেননা, নিখুঁত রিপুর মধ্যেই স্থায়িত্ব বাড়ে সম্পর্কের। অথচ আমি দেখি, ধৈর্যের দেয়ালে যে ছবিটা ছিল এতদিন সহাস্য; তা এখন রাসের মতো রক্ত চুষতে উদ্যত, নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে ছড়িয়ে দেয় মারণবিষ।

অবশেষে বেগুন গাছটি নেতিয়ে পড়ে একদিন উঠোনের একপাশে। মাকে বলি, আই এম নট এক্সেপট দিস লাইফ! তবু মায়ের হাসিতে দোলে ভরসার ছায়া। সিদ্ধান্তের শরীরে হুইসেল বাজিয়ে নির্ভরতার গন্ধ আসে পাখিযানে। আমি ভাবি কতটা নিরেট এই আসা-যাওয়া! 

ইতিহাস, বাবাকে হারানোর—অথচ, সঙ্গীর কথা ভেবে একদিনও প্রকাশ্যে কাঁদেনি আমার মা।


সভ্যতার পাঠ

দ্বিধা ভেঙে গেলে কারো কাছে জীবনযুদ্ধ মানে
কার্তিক মাসের ক্ষুধা
অভাবের কাঠফাটা রোদে পুড়ে পুড়ে
আনোয়ারা থেকে লোকের মুখে হয়ে ওঠা আনু
চিৎকার করে মাতিয়ে তোলে পাড়া—

     ‘ভাত চাই ভাত,
     পূর্ণিমাসের চাঁদের লাহান
     এক থাল ভাত’

পৃথিবীর সব অভাব পেটের ভেতর খচ্ খচ্ করে
তার কাছে এখন সব কিছুই ভাতগন্ধী
স্বার্থের ঘর কিংবা প্রশস্ত নগরীর খোলা মাঠ।

একদিন বিষাক্ত নখরে দংশিত হয় আনু
নগরীর সম্ভান্ত পথে
চোখে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুজল
বস্ত্রহীন হিমদেহ খুঁটে খায় মাছিদের পাল!

আনু এখন হেমন্ত কুয়াশায় ঝলসে যাওয়া স্মৃতি
সভ্যতা শেখায় প্রতিক্ষণ!



বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।