ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা | তারেক রহিম

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
একগুচ্ছ কবিতা | তারেক রহিম

বৃত্তবর্তী

তবু বয়ে চলে বৃত্তবর্তী মানুষ, বেঁচে থাকে;
চক্রের ভেতর থেকে একেকজন হারিয়ে যায়।
‘কেউ কি ছিল এখানে?’
কেউ কি ছিল—এখন, তখন, কিংবা কখনো!
সময়েরও শেষ আছে নিশ্চয় আর দিনের ফিরে ফিরে আসা

এই ফুল, রক্ত আর আগুন, তোমার শস্যের ঘর,
শোধ করে যেও এই ব্যাধি—
গোলাপের মৃত্যুময় ঘুম
আর
নিস্তব্ধতা ভেঙে...

আমরা তো সর্বংসহ নই, হে সহচর!


শিরোনামহীন -২

আবর্তনরত গ্রহদের ছবি আমি অনেক দেখেছি, কখনো আলাদা করতে পারিনি, শুধু দিন আর রাত, শব্দের ভেতরে অন্ধকার আর আলো যেমন মিলেমিশে যায়, অথচ আমরা শব্দহীনতাকে ভেবেছিলাম নীরবতা, আমাদের তো জানাশোনা হলো মোটে, তবুও সমস্ত কথা এখনই কেমন পুরনো হয়ে গেছে, অবলীলায় গড়িয়ে চলেছে সময়, ভস্ম আর ছাইয়ের ধুলো জড়িয়ে এক নদী আমার অস্তিত্বের ভেতর বয়ে যায়, কত কত রাতে তা স্পষ্ট হয়েছে ক্রমে...

সন্ধ্যায় যে কী হয়, বারবার দিক হারিয়ে ফেলি, রাস্তাজুড়ে আশ্চর্য আলো আর আলোর ছায়ারা কেঁপে ওঠে তখন, যেন কোনো বন্ধন ছিল না কোথাও; আর আমি তখন এত শব্দের ভেতরও কেমন অন্ধ হয়ে গেছি।

ভুলে যাওয়া কোনো কোনো ভোর ফিরে আসছে, আমি শিউলি মাড়িয়ে যাচ্ছি, ভয় হচ্ছে, ঘোলাটে কুয়াশার ভেতর হারিয়ে যেতে যেতে আমার আঙুল কাউকে ছোঁবে না আর। যেখানে যে ছিল তখন, সবাই থেকে গেছে... এক একটা ভোরে আমি একা ফিরে আসি, আর কেউ ফেরে না


দ্বিধা

না আঁকা অনেক স্কেচ, অনেক ইজেলে ছিটানো রঙ
চিন্তায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে
অনেক গোপনীয়তার মতো, দিনের শুরুতে
তোমায় যা বলা হয়নি, এখন এই মধ্যাহ্নের সূর্য
মেঘ ও মৃত্তিকার ঘ্রাণ
আমাকে সাহসী করে তোলে
কিংবা বেপরোয়া।
অথচ বাইরে ভীষণ রোদ্দুর
এবং
আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না এই রোদে
অগত্যা ইচ্ছা ও অনিচ্ছার দোলনায়
তোমায় চড়িয়ে দিলাম...
এখন দেখি জানালায় মন্থর দিন কাঁপছে নির্বিকার।


যেখানে, নেই

এক একটা দিন রাস্তাগুলো বহু দূরে চলে যায়, সময়ের সাথে দূরত্ব সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্থহীন মনে হয় যেহেতু রাস্তা ক্রমশ আরো আরো রাস্তার দিকেই যায় অন্ধকার ও আলোর দ্ব্যর্থহীন বিরোধের কথা মনে রেখে

হেঁটে যেতে যেতে আমি রাত্রির নিরপেক্ষতার কথা ভাবি, তার সহনশীল শীতল আচরণ আমাকে কতটা ব্যথিত করে এইরকম সময়ে, যখন আর কিছু নিয়েই ভাবছি না, পায়ের পর পা পড়ছে রাস্তায় আর দূরত্ব ক্রমে দূরে দূরে সরে যাচ্ছে, কিংবা যখন এ-বছরকার ফেব্রুয়ারি শেষে ক্ষণকালীন বসন্ত যেভাবে আসলো এবং চলেও গেল, তার বাতাসের ধূলিমুখর সংবেগ কোথায় ফেলে রেখে, তার খোঁজ রাখা হলো না

আমি অনুভব করি স্থিতির অপর্যাপ্ত কাল অথবা সময়হীনতার দীর্ঘ সেতু পেরিয়ে মুহূর্তের যে সম্ভাবনা রচিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমি তার কিছুই স্পর্শ করতে পারি না, শুধু মনে হয় সকল রাস্তাই বহূ দূরে দূরে চলে যায় সম্প্রসারণশীল শূন্যতার মতো দূরবর্তী নক্ষত্রের রাতে, আমি যার বহু পেছনে পড়ে থাকি; নিত্য-অতীতে আমি যেন রক্তমাংসের গতকাল


শিরোনামহীন -১

আমি একদিন তোমাকেও ঠিক ভেঙে দিয়ে যাব
এতো অবহেলা সইবো না।

আমার জন্মান্তর নেই
তাতে বিশ্বাসও নেই
আমি তত ধৈর্য রাখতে পারব না।

আমি ঈশ্বরকেও টুকরো টুকরো করে ভেঙেছি
দেখেছি বিশ্বাসের ভেতরে কাঁকড়,
গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়।

তোমার ভেতরে কী আমার দেখতে ইচ্ছে করে।

তোমাকে আমার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।
খুব ইচ্ছে করে।



বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।