আম্মার হাঁসগুলি
আম্মার হাঁসগুলার চোখ ছিল, তবু
আমার বোনই দেখে রাখত।
পুকুরে নামত ওদের প্রায় সবাই।
ওদের পেট ভরি গেলে ওরা উঠি আসত উঠানে
যেহানে কুঁড়াভাত দিত
কদম তলায়, ওদেরে শামুক ভাঙি দিত,
ইটের পর রাখি। ওরা মাঝেমধ্যে ঠোঁটে বাড়ি খাইত।
ওদের পেট ভরি গেলে দুলি দুলি হাঁটি হাঁটি
পুকুরের দিকে যাইত।
ওদের একটা ও দুইটা রাস্তা ছিল মনে মনে
পুকুর দিয়া উঠি আসার। ওদের সামনে
গরু বান্ধা পড়লে কোনোদিন
ওরা গরুর পেটের নিচ দিয়া
ওলানের নিচা দিয়া চলি যাইত।
ওদের রাস্তা ঠিক রাখিত।
দাদাই আমার এই বোনটার নাম রাখছিল
আত্মা। আম্মা ডাকত রুহু।
আত্মাই আম্মার হাঁসগুলিরে চিলের ছোঁ,
শেয়ালের হাত থাকি বাঁচাইত।
আত্মাকে আমরা
ভাবতাম তার শরীর আছে।
সে আমাদের বোন।
আম্মাদের হাঁসগুলা
কিছুদিন দেখেশুনে রাখে।
আমি তাকে একদিন ছুঁই
দেখছিলাম।
কইছিলাম, তুই তো
আমারই বোন!
আমার সরল তালগাছটি
জঙ্গল পার হইলে যারে দেখা যাইত
আকাশের দিকি যে একা একা নির্বাসিত
সে বছর সেই তালগাছ বাজ পড়ি আহত হইলে
তার বিবরণ না-লিখি আমি তার মতো
ঠিক ঐভাবে আমি রাখি দিই;
কিভাবে সে পচি পচি পাছে তারে কাটি
ধাক্কায়ে ধাক্কায়ে মাঠ থাকি বার করি দেয়া হইল
তখন ভাবি যে হাড়ও পচে
তাও আমি লিখি নাই;
আমার ফুপা ফুপার ছাওয়ালরা শরিক হইল;
আমি ক্যাল দেখি
পাখিগুলা চলি যাচ্ছিল
যারা মূর্ত হওনের লাগি
এই মরাটার পর আসি বসিত;
আজ যখন পত্রিকায়
শুনি পৃথিবীতে আজও শিলাবৃষ্টি হয় বাজ পড়ে
ছোটবেলার মতো
তখন ভাবি যে
সেই তালগাছটার কালা কালা ত্বক তুচ্ছ ছিল না মোটেও
আর তার ছায়ারে ধারণ করবার লাগি
যদি একটা নদী থাকত ওর পাশে!
এই
ছোটকালে যেইবার আমি পাগল হই
সবাই মিলি আমার নাম পাল্টাই ফেলায়।
আমার আগের নামে যারা ডাকত
তারাও আমাকে ‘এই’ কয়ে
ডাকত।
আমি যেন দড়ি ছেঁড়া বালতির মতো
কুয়ার অনেক গভীরে
চলি যাই সেইখানে গিয়া আব্বারে ধমকাই!
দেখি যে আমি ঘরের ভেতরে একটা ল্যাংগট পরি বসি আছি
আর এই কাঁপতেছে, আর আমি পাগল
হওয়ার পর আগের নামটাকে ফেরত পাইতে মন চাইল।
আমি স্বপ্নে দেখি যে এই গ্রাম আমার না,
অন্য একটা গ্রাম আমারে স্বপ্নের মধ্যে আসে
ডাকে। আমি যাই সেই গ্রামে মনে হইল ভোর বেলা
আমি একটা হাটের মধ্যে
মার খাই। সবাই বলে হালা, পাগলা চোর।
আমি কান্দি
আর বলি, আমার আগের নামটা খোঁজতি আইছি
এইখানে।
আমারে আর মাইরো না।
আমি আরেকটা গ্রাম চাই যেইখানে
আমি না থাকিলেও
আমার নামে কেউ যেন থাকে
তার চুল আঁচড়ানো, গোসল করা, লুঙ্গিপরা
দুপুর বেলা নাত্রি বেলা
এক মনে দেখবানে...
কেন বসি আছি
বুঝি নাই কেন নফী!
চা না খায়ে বসি আছি চায়ের দোকানে।
কুয়াশায় আঁকছিনু তোমার আনন।
তখনের আমি
এই আজ কনে গেল!
দূর থাকি দেখলেই কি শুধু
সোনাঝুরি পাহাড় অনেক দূরেই রহে!
বেলা এগারোটা বাজি গেলে জেবে হাত রাখি।
দুধঅলা আসবেনে।
পার হয়ে আসা মানে
গলাধাক্কা সেতু পার নাও হইতে পারে, ভাবি,
পার হই আসা মানে
তার পুরাটাই সময় নহে!
মোর পুত্রের সকালের স্বপ্ন
আমার পোলাডা পাগল এবং ছোট।
ঘুম থাকি উঠিই আজ সকালে কানতেছে।
কইতেছে তোমরা দুজনেই খারাপ।
আব্বু বলতেছে, বাড়ির থাকি বার হ।
আম্মু—খাটের তলায় গিয়া শুই থাক।
ও এখন কানতেছে।
আমারে তোমরা ভালোবাসো না।
আমি ওরে কোলে নি। আদর করি।
বলি বাচ্চাদের স্বপ্নের ভিতর এসব আজে বাজে জিনিস
ভূতেরা চালান করে।
ভূতেদের বাপ-মা নাই
তাই ওরা বাচ্চাদের বাপ-মাদের হিংসা করে।
ওমা এই কয়ে ও দেখি
আবার ঘুমায়ে পড়তেছে।
আমি বসি থাকি দুশ্চিন্তা নিয়া
প্লেটের উপর গোল পাউরুটির মতো।
যার যার স্বপ্ন তারে তারে দেখতে হয়
এই বিরাট জগতে
অন্যরা তাহার স্বপ্নরে দেখে না।
অগত্যা স্বপ্নরে শুনতে হয় কেন তখন।
কেউ একস্বপ্ন দুইবার দেখে না কেন!
ওর চোখের বল নড়তেছে
ভূত যে কি দেখাচ্ছে
আমি কিছুই আন্দাজ করিতে পারছিনে
আমি ওর স্বপন শুনব বলি বসি আছি!
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬