ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)


মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ


[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]


দ্বিতীয় অধ্যায়

পর্ব ৫

যাইহোক, এ কথা ভাবলে খুব ভুল হবে, আমাদের বন্ধুত্বটা শুধু একপেশেই ছিলো। এমনটা ভাবলে তা হিটলার তো বটেই আমার জন্যও খুব সস্তা একটি বিষয় হয়ে যাবে। যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, আমরা একজন আরেকজনের প্রশংসা করতে ভালোবাসতাম। সবকিছুতেই তীব্র বিরোধিতা করাটা তার স্বভাবের মধ্যেই পড়ে বা বলা যায়, সে হয়তো তার আবেগের জায়গাটাকে এভাবেই চাপা দিয়ে রাখতে চাইতো। অন্যদিকে, শুধু সঙ্গীত ছাড়া আমি তার অন্য প্রতিটা কাজের বিষয়েই খুব মনযোগী একজন শ্রোতা ছিলাম এবং তার সব রকম যুক্তিকে অবলীলায় মেনে নিতাম।  

অবশ্য আমি এটা বলবো, আমার প্রতি অ্যাডলফের প্রত্যাশা ছিল প্রচুর এবং আমার অনেক ব্যাক্তিগত সময়েও সে ভাগ বসাতো। যেহেতু তার নিজের সময়জ্ঞান তেমন ছিলো না, এ কারণে বিষয়টা আমাকেই দেখভাল করতে হতো এবং এ বিষয়ে আমি সবসময় তার পাশেই থাকতাম। সত্যি বলতে এছাড়া আমার আর কোনো পথও ছিলো না। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার কারণে অন্য আরও চারটি বন্ধু খোঁজার সময়ও আমার ঠিক হতো না বা ঠিক তার প্রয়োজনও হতো না। কারণটা হলো, হিটলারের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা ছিলো অন্য আরও ডজনখানেক বন্ধুদের মতোই। ধরা যাক, আমরা দু’জনেই যদি একটি মেয়ের প্রেমে পড়ি তাহলেই হয়তো আমাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরার একটা সুযোগ ঘটতে পারতো। বিষয়টা সত্যি খুব বিপজ্জক হয়ে যেতো। যেহেতু সেই সময়ে আমার বয়স মাত্র সতের তখন ঘটনাটা ঘটলেও ঘটতে পারতো। তবে এক্ষেত্রে আমাদের ভাগ্য ভালো ছিলো, এ ধরনের কোনো বিশেষ ঘটনা তখন আমাদের জীবনে ঘটেনি। বিষয়টি নিয়ে আমি পরবর্তীতে ‘স্টেফেনি’ অধ্যায়ে বর্ণনা করবো।

আমি জানতাম যে তার দিক থেকেও আমি ছাড়া আর কোনো বন্ধু নেই। এ বিষয়ে একটি ঘটনা মনে পড়ছে, লেন্ডস্ট্রেসের রাস্তায় আমরা দুই বন্ধু মিলে হাঁটছিলাম। আমাদের বয়সী এক ছোকরা আমাদের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো এবং সে তার পুরনো সহপাঠী অ্যাডলফকে চিনতে পারলো। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত আড়চোখে দেখে নিয়ে হাঁক দিলো, ‘হ্যালো হিটলার!’ সে খুব আন্তরিকতার সঙ্গেই হিটলারের কাঁধে হাত রাখলো এবং তার কুশল জিজ্ঞেস করলো। আমার ধারণা ছিলো, হিটলার ঠিক একইভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে তার পুরনোর বন্ধুটির কথার উত্তর দেবে। কিন্তু দেখতে পেলাম, আমার বন্ধুটি রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে। আমি আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছিলাম, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ‘ওই, তোমার সমস্যা কী?’ এই বলে হিটলার তার সেই পুরনো বন্ধুকে ধাক্কা মেরে ছুড়ে ফেলে দিলো। তারপর সে আমার হাতে হাত রেখে রাস্তা দিয়ে এমনভাবে চলতে লাগলো, যেনো ওই তরুণ ছোকরাটির সঙ্গে কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমি এখনও সেই হতভাগা বন্ধুটির ভয় ও স্তব্ধতা মাখা মুখটার কথা ভুলতে পারবো না। ‘সব কটার ভবিষ্যত সিভিল সার্ভেন্ট’ বিরক্তির সঙ্গে হিটলার বললো। ‘এবং ভাবো এই গাড়লদের সঙ্গে আমাকেও একই ক্লাসে বসতে হতো’। সেদিন রাগ কমাতে হিটলার অনেক সময় নিয়েছিলো।

আরেকটা অভিজ্ঞতার কথা আমার স্মৃতিতে এখনও আটকে রয়েছে। আমার ভায়োলিন শিক্ষক হেইনরিখ ডিসোওয়ার মারা গিয়েছেন। হিটলার আমার সঙ্গে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে অংশ নিতে গিয়েছিলো। বিষয়টা আমাকে অবাক করেছিলো এই ভেবে, হিটলার অধ্যাপক ডিসওয়ারকে কখনও ব্যাক্তিগতভাবে চিনতো না। আমি আমার বিস্ময় তাকে প্রকাশ করতেই সে বললো, আমি এটা কখনও মেনে নিতে পারতাম না যে, তুমি সেখানে গিয়ে অন্যকোনো বন্ধুর সঙ্গে মিশবে ও কথা বলবে।

এমন কোনো বিষয় ছিলো না, তা যতো তুচ্ছই হোক সে বিরক্ত হতো না। কিন্তু তার মেজাজ খারাপ হতো যখন কেউ তাকে ভবিষ্যত সিভিল সার্ভেন্ট হওয়ার জ্ঞান দিতে আসতো। যখনই তার কানে ‘সিভিল সার্ভেন্ট’ শব্দটি আসতো সঙ্গে সঙ্গেই সে রেগেমেগে আগুন হয়ে যেতো। আমি লক্ষ্য করতাম, যে বিষয়টার সঙ্গে তার স্বর্গীয় পিতার অদম্য বাসনাও হয়তো জড়িত ছিলো, যিনি চাইতেন- বড় হয়ে তার ছেলে একজন সিভিল সার্ভেন্ট হোক। বলা যেতে পারে, ‘বাবার মৃত্যুর পরও তার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলার নীতি’ সে অবলম্বন করতো।

সেই সময়ে আমাদের বন্ধুত্ব ও আমার জন্য খুব জরুরি ছিলো যে, ‘সিভিল সার্ভেন্ট’ বিষয়টা নিয়ে খুব কম কথা বলা। আমি এখন বিষয়টাকে এভাবে দেখি ও প্রশংসা করি, হিটলার বন্ধুত্বের জন্যে আমাদের সাধারণ জীবনের ভালোবাসকেই বরং বেশি প্রাধান্য দিতো, বাইরের জগতের চাকচিক্যভরা জীবনকে নয়। হিটলার ছিলো ঠিক বিপরীত মেরুর এক মানুষ। তার সবকিছুই ছিলো অনিশ্চিত। তবে আরেকটা বিষয় আমি আমার বন্ধুটির চোখের দিকে তাকিয়ে আবিষ্কার করতাম যে, চিত্রকলা হলো তার জীবনের এক পরম পাওয়া। অবশ্যই এই যুগে আমাদের সেই ভালোবাসাময় আবেগকে কোনো শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে বাস্তব জীবনে আমিও তার মতোই শিল্পের প্রতি নত ছিলাম। কারণ, আমিও আমার জীবনের অাষ্টেপৃষ্ঠে সঙ্গীতকে জড়িয়ে রেখেছিলাম। বেঁচে থাকার জন্য বাবার ওয়ার্কশপে কাজ করেছি কিন্তু আমার আত্মায় ছিলো সঙ্গীত। আমার বন্ধুটির জীবনে শিল্পের মূল্য ছিলো আরও অনেক বেশি। তার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, বিশেষ করে তার জীবনের সবকিছুতেই ধারণ করা, অনুধাবন করা, প্রত্যাখান করা এবং তার বিষয়ভিত্তিক গভীর ভাবনায় চিত্রকলাই ছিলো তার একমাত্র সঙ্গী।
 
তার যোগ্য বন্ধু হওয়ার জন্য যা যা লাগে আমি তার সবটাই পূরণ করেছিলাম। তার পুরনো সহপাঠীদের সঙ্গে আমার কোনো মিল ছিলো না, আর যাইহোক ‘সিভিল সার্ভিস’ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা ছিলো না। আমার জীবনও ছিলো শিল্প-সংস্কৃতিকে ঘিরেই। সঙ্গীত বিষয়ে আমার জ্ঞান ছিলো গভীর। আমাদের মানসিকতার এই অসম্ভব মিল থাকার কারণেই হয়তো আমাদের দু’জনের আত্মাকে একই সুতায় বাঁধতে পেরেছিলো।

হিটলারকে আপনারা কে কীভাবে দেখবেন এবং বিচার করবেন তার ভার আপনাদের উপর ছেড়ে দিয়ে আমি শুধু এ কথাই বলবো, সেই যে একত্রে থিয়েটার দেখার মাধ্যমে তার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছিলো, সেই সময় থেকে ভিয়েনার কঠিন সময়গুলো পর্যন্ত আমি ছিলাম হিটলারের এক অনন্য বন্ধু।
চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
এসএনএস

** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৩)

**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৪)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।