ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১১)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১১)

মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ


[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]

পর্ব ১১

চতুর্থ অধ্যায়

হিটলারের পরিবার সম্পর্কে আমি যতোটুকু জানতে পেরেছি তার কিছুটা সম্ভব হয়েছে তাদের পরিবারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণে আর কিছুটা সম্ভব হয়েছে তাদের পরিবার থেকে আমাকে যতোটুকু তথ্য দেওয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী। প্রায়ই একটি কথা কানে আসতো, হিটলারের আদি পুরুষদের বাস ছিলো ওয়ালডভিয়েরটাল (১)। তবে সেটি তার মায়ের দিক থেকে নাকি বাবার দিক থেকে এ তথ্যটি সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। যাইহোক, হিটলারের পরিবারের সঙ্গে ওয়ালডভিয়েরটালের একটা নাড়ির সম্পর্ক ছিলো। পরে আমি জেনেছিলাম, হিটলারের বাবা ও মায়ের দিক থেকে মাত্র দ্বিতীয় বংশধররা এই শহরে এসে বসত গেড়েছিলেন। আমার মনে আছে, হিটলার প্রায় সময়ই ওয়ালডভিয়েরটালে ফেলে আসা তার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যেতো। একবার সে আমাকে ওয়েট্রা নামে একটি জায়গা থেকে একটি পোস্টকার্ড পাঠিয়েছিলো। সেই পোস্টকার্ড থেকে তখন জানতে পেরেছিলাম, ওয়েট্রা জায়গাটি ওয়ালডভিয়েরটালের ঠিক পাশেই। আমি জানি না সেখানে সে কেন গিয়েছিলো, তবে এটা সহজেই অনুমেয় যে, অ্যাডলফের পরিবারের সঙ্গে ওয়ালডভিয়েরটাল এলাকায় ফেলে আসা আত্মীয়দের সঙ্গে বেশ যোগাযোগ ছিলো। অ্যাডলফ আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কখনই খোলামেলা আলোচনায় বসতো না।  সে শুধু মাঝে মধ্যে তার বাবা ও মায়ের পূর্ব পুরুষেদের আদিবাস ও সেখানকার দানিয়ুব নদীর পাড়ের মানুষের সুখ-দুখের কথা বর্ণনা করতো।

ওয়ালডভিয়েরটালের একটি দরিদ্র গ্রামে ক্লারা হিটলার (হিটলারের মা) ১২ আগস্ট, ১৮৬০ জন্ম নেন। তার বাবা জোহান ছিলেন একজন ধর্মযাজক এবং খুব সাধারণ একজন ধার্মিক মানুষ। তার মায়ের নাম ছিলো জোহানা হিয়েডলার। সেই সময় হিটলার বানানটি তারা লিখতেন ‘হিয়েডলার’। তবে হিটলার বানানের যথাযথ অভিষেক হয় অ্যাডলফের বাবার নামের মধ্য দিয়ে।  

নথিপত্রের তথ্য অনুসারে, অ্যাডলফের নানি জোহানা হিয়েডলার ছিলেন  জোহান নেপুমোক হিয়েলডারের কন্যা। ক্লারা হিটলার ছিলেন সরাসরি তার বংশধর। ক্লারা হিটলারের ছেলেবেলা খুব একটা বৈভবের ছিলো না। তিনি ছিলেন পরিবারের বারতম সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সন্তান। আমি প্রায় সময়ই অ্যাডলফের কাছ থেকে তার এক খালার গল্প শুনতাম। অ্যাডলফের মায়ের মৃত্যুর পর সেই খালা তাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আমি এমালিয়া নামে তার আরেকজন খালার সন্ধান পেয়েছিলাম। ১৮৭৫ সালে তার বয়স যখন মাত্র পনের তখন তাকে আলইস স্কিকলগ্রুবার হিয়েডলার নামে একজন কাস্টম কর্মকর্তা তার স্ত্রীকে দেখভালের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। এর পরের বছরই আলইস স্কিকলগ্রুবার তার নাম হিয়েলডার পরিবর্তন করে রাখেন আলইস হিটলার। তার সেই সময়ের স্ত্রীর নাম ছিলো, আনা গ্লাসি হোরের। প্রথম স্ত্রীর থেকে তিনি চৌদ্দ বছরের বড় ছিলেন এবং পরবর্তীতে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ১৮৮৩ সালে আলইস হিটলার ফ্রানজিসকা মেটজেলসবারগার নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন আলইস হিটলারের চেয়ে চব্বিশ বছরের ছোট। এই সংসারে অ্যাডলফের সৎ ভাই আলইস ও অ্যাঞ্জেলার জন্ম হয়। আলইস হিটলারের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হওয়ার কারণে ক্লারা সেই সময় হিটলারের পরিবারে সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন এবং তিনি সবার দেখভাল করতেন। ফ্রানজিসকা তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিয়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৮৮৪ সালের ১০ আগস্ট মারা যান।


আলইস হিটলার দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ক্লারাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। উল্লেখ্য, ক্লারা বিয়ের আগেই সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েছিলেন। তার প্রথম পুত্রসন্তান গুস্তভ বিয়ের পাঁচ মাস পরেই (মে ১৭, ১৮৮৫) সালে জন্ম নিয়ে ০৯ ডিসেম্বর, ১৮৮৭ সালে মারা যায়। মাত্র দুই বছর বয়সী এ সন্তানের অকাল মৃত্যুতে ক্লারা খুব স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েন। তারপর অট্টো নামে তার আরেকটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয় এবং সে মাত্র তিন দিন বেঁচে ছিলো। ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল জন্ম হয় অ্যাডলফের। বুঝতেই পারছেন, কী পরিমাণ দুঃখ সহ্য করার পর ক্লারা অ্যাডলফকে কাছে পেয়েছিলেন! যখন অ্যাডলফের জন্ম হয় তখন তিনি তিন সন্তান হারিয়ে দিশেহারা একজন মা। স্বাভাবিকভাবেই চতুর্থ সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসা কী পরিমান ছিলো তা সহজেই অনুমান করা যায়। তিনি আমাকে একদিন বলেছিলেন, অ্যাডলফ ছোটবেলা থেকেই শারীরিকভাবে খুব দুর্বল ছিলো। সে কারণে অ্যাডলফকেও হারানোর ভয় তাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়েছে।

অ্যাডলফের বাবা ও ক্লারা রক্তসূত্রে আত্মীয় হওয়ার কারণেই হয়তো তাদের প্রথম তিনটি সন্তানের এমন অকালমৃত্যু হয়ে থাকবে। আমি অবশ্য বিষয়টি যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের উপরই ছেড়ে দিচ্ছি। তারাই হয়তো এ বিষয়ে ভালো কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।  

অ্যাডলফের চরিত্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে শক্তিটি ছিলো, তাহল সে একই সময় বিভিন্ন কাজে সমানভাবে মনযোগ দিতে পারতো। এটা ছিলো তার বিশেষ একটি গুণ। সে যা বিশ্বাস করতো সে বিষয়গুলোতে সে সবসময় অনমনীয় ও দৃঢ় থাকতো। এসব ছিলো তার চরিত্রের একটি অংশ। অ্যাডলফ হঠাৎ করেই তার চরিত্র বদলে ফেলতে পারতো না। বন্ধু হিসেবে এমন অনেক অভিজ্ঞতার শিকার আমি হয়েছি। আমার মনে আছে, দীর্ঘ ত্রিশ বছর পর ১৯৩৮ সালে অ্যাডলফের সঙ্গে যখন আমার আবার দেখা হয় তখন সে আমাকে বলেছিলো, ‘তোমার কোনোই পরিবর্তন হয়নি কুবিজেক, শুধু বয়সটা বেড়েছে, এই যা’। অ্যাডলফ সত্যিই বলেছিলো, আমার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে হিটলারের জন্যও বিষয়টা সমানভাবেই প্রযোজ্য। তারও কোনো পরিবর্তন হয়নি। তার এমন অস্বাভাবিক চরিত্রের কারণ অনুসন্ধানের জন্য আমি অনেক সময় ব্যয় করেছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম, এর পেছনে হয়তো পারিবারিক বা বংশানুক্রম কোনো বিষয় যুক্ত থাকতে পারে যে কারণে সে এমন উদ্ভট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছে। সে যা বিশ্বাস করতো এর বাইরে সে এক চুলও নড়তো না। চরিত্রের এই গোয়ার্তুমির কারণে অ্যাডলফ তার মায়ের অনেক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।

তারপরও মায়ের মন। তিনি সবসময়ই সন্তানের জন্য আকুল  থাকেন। অ্যাডলফের জন্মের পাঁচ বছর পর তিনি আরেকটি (পঞ্চম) সন্তানের জন্ম দেন। সেটি ছিলো ২৪ মার্চ, ১৮৯৪। তার নাম রাখা হয় এডমুন্ড। এডমুন্ডও জন্মের ছয় বছরের মাথায় (২৯ জুন, ১৯০০) সালে মৃতুর কোলে ঢলে পড়ে। এডমুন্ডের মৃত্যুর সময় অ্যাডলফের বয়স ছিলো এগার বছর এবং সে প্রায়ই আমার সঙ্গে তার ভাইয়ের অনেক স্মৃতিচারণ করতো। সে একদিন আমাকে বলেছিলো, এডমুন্ড ডিপথেরিয়ায় মারা গিয়েছিলো। ক্লারার সবচেয়ে ছোট মেয়ে পাওলার জন্ম হয় ২১ জানুয়ারি, ১৮৯৬ সালে। পাওলা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।

খুব স্বাভাবিকভাবেই অল্পবয়সী চারটি সন্তান হারিয়ে ক্লারা হিটলার খুব বিষণ্নতায় ভুগতেন। এই নবজাতকদের হারিয়ে সম্ভবত তার অন্তরাত্মা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিলো। পরবর্তী জীবনে তিনি অ্যাডলফ ও পাওলা, এ দুই সন্তানকে বুকে নিয়েই বেঁচেছিলেন। পাওলা ছিলো শান্ত প্রকৃতির আর খুব বাধ্য একটি মেয়ে। তাকে নিয়ে ক্লারার কোনো চিন্তা ছিলো না। কিন্তু তিনি মারা গেলেন তার অবাধ্য ছেলের কথা চিন্তা করতে করতেই।

অ্যাডলফ সত্যিকার অর্থেই তার মাকে ভালোবাসতো। আমি ঈশ্বরের শপথ করে বলছি, আমার মনে আছে- অ্যাডলফ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং সুযোগ পেলেই তার মায়ের কথা অনেক দরদ আর ভালোবাসার সঙ্গে উচ্চারণ করতো। সে সত্যিকার অর্থেই ছিলো ক্লারার একটি যথাযথ ছেলে। তার মায়ের দুর্ভাগ্য, সে তার ছেলের ভালো ভবিষ্যৎ দেখে যেতে পারেনি। মনে আছে, আমরা যখন ভিয়েনায় থাকতাম অ্যাডলফ সবসময় তার মায়ের একটি ছবি তার ব্যক্তিগত বাক্সে যত্ন করে রেখে দিতো। তার আত্মজীবনী ‘মেইন ক্যাম্ফ’-এ অ্যাডলফ লিখেছে, ‘আমি আমার বাবাকে শ্রদ্ধা করি কিন্তু আমার মাকে ভালোবাসি’।  

১. ওয়ালডভিয়েরটাল হলো অস্ট্রিয়ার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত একটি জেলা। এটির দক্ষিণে দানিয়ুব প্রবাহিত ও উত্তরে চেক রিপাবলিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৬
এসএনএস

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৩)

**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৪)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৬)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৭)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৮)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৯)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১০)


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।