ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ধারাবাহিক/পর্ব: ১ 

অ্যান্ড দ্য মাউন্টেইন্স ইকোড | খালেদ হোসেইনি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৬
অ্যান্ড দ্য মাউন্টেইন্স ইকোড | খালেদ হোসেইনি

অ্যান্ড দ্য মাউন্টেইন্স ইকোড
মূল: খালেদ হোসেইনি
ভাষান্তর: ফারাহ্ মাহমুদ

অধ্যায়: এক 
শরৎ, ১৯৫২
 

[‘দ্য কাইট রানার’ এবং ‘অ্যা থাউজেন্ড স্প্লেনডিড সান্স’ — এ দুই সর্বাধিক বিক্রিত ও অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাসের লেখক খালেদ হোসেইনি একজন আফগান বংশদ্ভুত মার্কিন লেখক। ২০০৩ সালে ‘দ্য কাইট রানার’ প্রকাশের পর পরই তা আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নেয়।

২০০৭ সালে বইটি চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হোসেইনির তৃতীয় উপন্যাস ‘অ্যান্ড দ্য মাউন্টেইন্স ইকোড’-ও জায়গা করে নিয়েছে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায়। এই বইটিতে লেখকের গল্প বলার ধরন প্রচলিত ধারার চেয়ে বেশ অন্যরকম, সেই অন্যরকম স্বাদটুকু পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন লেখক ফারাহ্ মাহমুদ। ]  

বে তাই হোক। তোমরা গল্প শুনতে চেয়েছো, তাই আমি তোমাদের একটা গল্প বলছি। শুধু একটি গল্প। আরেকটির জন্য তোমরা আবার অনুরোধ করতে পারবে না। অনেক দেরি হয়ে গেছে, সামনে আরও অনেক পথ যেতে হবে আমাদের। পরী, তোমার ঘুমানো দরকার। আর আবদুল্লাহ তোমারও। তোমার উপর আমি অনেক ভরসা করে আছি, যখন তোমার বোন আর আমি থাকবো না। এমনকি তোমার মাও থাকবে না। এখন গল্পটি বলছি। একটি গল্পই। দু’জনই শোনো ভালো করে। মাঝখানে বাধা দিও না।  

অনেক অনেক বছর আগের কথা, যখন জ্বিন, পরী আর দৈত্যরা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াতো, তখন বাবা আইয়ুব নামে এক চাষি বাস করতো। ‘শ্যামলিমা’ নামে ছোট্ট একটি গ্রামে সে তার পরিবারের সঙ্গে বাস করতো। অনেক বড়ো পরিবার বাবা আইয়ুবের দায়িত্বে ছিলো বলে তাকে অনেক কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে সে তার জমিতে হালচাষ করতো— কঠিন অনুর্বর মাটিকে পেস্তা গাছ ফলবার মতো কোমল করে তুলতো। যেকোনো সময়ে তার খোঁজ করলেই তুমি তাকে পাবে ক্ষেতে— হাঁটু মুড়ে কাজ করছে, হাতের কাস্তের মতোই বেঁকে রয়েছে তার পিঠ, মনোযোগ দিয়ে সে নিড়ানি দিচ্ছে ক্ষেতে। তার হাতে কড়া পড়ে গেছে, মাঝে মধ্যে আঙুল কেটে রক্ত পড়ে, আর প্রতিরাতে বালিশে শুতে না শুতেই তার চোখে ঘুম এসে তাকে চুরি করে নিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে।  

আমি এটুকু বলতে পারি, সে মোটেও একলা ছিলো না। শ্যামলিমায় সবার জীবনই বড়ো কঠিন। তবে শ্যামলিমার উত্তরে বেশ কিছু গ্রামের ভাগ্য আরও সুপ্রসন্ন, উপত্যকার উপরের গ্রামগুলোয় ফলের গাছ ও ফুল রয়েছে, রয়েছে মনোরম বাতাস, পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঠাণ্ডা পানির ছোট্ট নদী। কিন্তু শ্যামলিমা বেশ অনুর্বর, নিজের নামের সঙ্গে তার কানাকড়ি মিল নেই। নাম শুনেই যেমন মনে হয় যতোদূর চোখ যায় সবুজ শ্যামল, এরকম কিছু নয় সেটা। বন্ধুর কিছু পর্বতমালার মাঝে একটু সমতল একটি ধুলিমলিন জায়গায় ছোট্ট এই গ্রাম। সেখানে চোখে ধুলা ওড়ানো গরম বাতাস বয়ে যায়। প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্যে পানি খুঁজে পাওয়াই সেখানে মুশকিল, এমনকি গ্রামের সবচেয়ে গভীর কুয়াগুলোও প্রায়ই পানিশূন্য থাকতো। অবশ্য নদী একটা ছিলো, কিন্তু গ্রামবাসীদের সেখানে যেতেই লাগতো আধবেলা, এতো কষ্টের পরও দেখা যেতো, নদীতে পানির চেয়ে কাদাই বেশি। এখন, দশ বছরের খরা কাটার পর, নদীটির অবস্থা আরও করুণ। শ্যামলিমার অধিবাসীদের অন্য মানুষের চেয়ে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হতো। তারপরও বাবা আইয়ুব নিজেকে ভাগ্যবানদের একজন বলে মনে করতো কারণ, তার রয়েছে সুখী পরিবার, পরিবারই বাবা আইয়ুবের সবকিছু। সে তার বউকে ভালোবাসতো, কখনও তার সঙ্গে চেঁচিয়ে কথা বলেনি, আর গায়ে হাত তোলা তো অনেক দূরের কথা। বউয়ের কথার মূল্য সে দিতো, আর বউয়ের সঙ্গে কাটানো সবটুকু সময় ভীষণ উপভোগ করতো। বাচ্চা-কাচ্চার কথা বলতে গেলে বলতে হয়, এইদিক দিয়ে বাবা আইয়ুবের জীবনে কোনো কমতি ছিলো না— তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সবাইকে সে অনেক ভালোবাসতো। তার মেয়েরা বেশ দায়িত্বশীল, নরম হৃদয় আর ভালো চরিত্রের। ছেলেদের সে শিখিয়েছিল সততা, সাহস, বন্ধুত্ব আর কঠোর পরিশ্রমের মূল্য কতো বেশি। ছেলেরা তাকে শ্রদ্ধা করতো যেমনটা সব ভালো ছেলেরা করে, আর শস্যক্ষেতের কাজে তাকে তারা সাহায্য করতো।  

সব সন্তানকে ভালবাসলেও, ছোটোছেলে তিন বছর বয়সী কায়েসের প্রতি বাবা আইয়ুবের আলাদা অনুরাগ ছিলো। গাঢ়ো নীল চোখের ছোট্ট ছেলে কায়েস দুষ্টু হাসিতে সবার মন জয় করে নিতো। সবসময় প্রাণশক্তিতে ভরপুর থাকতো সে। হাঁটতে শেখার পর, হাঁটতে সে এতোই পছন্দ করতো যে জেগে থাকার পুরোটা সময় সে হাঁটতেই থাকতো, মাঝে মধ্যে এই উত্তেজনায় এমনকি ঘুমের মধ্যেও সে হাঁটতো। ঘুমের ঘোরে সে মাটির ঘরের বাইরে বেরিয়ে চাঁদের আলোয় ঘুরে বেড়াতো। এই নিয়ে ওর বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার অন্ত রইলো না। যদি সে কোনোদিন কুয়ায় পড়ে যায়, বা হারিয়ে যায়, আরও ভয়ঙ্কর হবে যদি রাতের অন্ধকারে ঘুরতে থাকা কোনো জীব ওর কোনো ক্ষতি করে বসে? তারা অনেকভাবে ওর এই ঘুমের ঘোরে হাঁটা রোগের প্রতিকার করতে চাইলো, কিন্তু কিছুতেই কোনো লাভ হলো না। শেষে, বাবা আইয়ুব ছেলের গলায় ছোট্ট একটা ঘণ্টা পরিয়ে দিলো, যেমন পরানো থাকে ঘরে পোষা ছাগলের গলায়। তারপর থেকে, মাঝরাতে কায়েস জেগে উঠে হাঁটতে থাকলেই বেজে ওঠা ঘণ্টা অন্যদের সজাগ করে দিতো।
চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৬
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad