ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-১)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৬
ইউরোপের প্রাচীনতম হ্রদে (পর্ব-১)

অখ্রিদ শহরে যে বাড়িতে দিন কয়েকের জন্য আস্তানা গেঁড়েছি, সেটিকে ঠিক হোটেল না বলে পান্থশালা বলাই বোধহয় শ্রেয়। হোটেল শব্দটির সঙ্গে কেমন যেন এক হৈ হট্টগোল আর বাণিজ্যিকীকরণের আবহ মিশে থাকে।

সে তুলনায় পান্থশালা স্থানটিকে অপেক্ষাকৃত বেশি মায়াময় মনে হয়।

ট্যাক্সি থেকে নেমে এ পান্থশালায় পা দেওয়া মাত্রই বাড়ির মালিক ছুটে এসে ব্যাগ নিয়ে তেতলয়া দিলেন এক ছুট। আমার বাবার বয়সী এ লোকটিকে আরে করছেন কি বলে বাধা দেওয়ার আগেই গট গট করে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে তিনি আমাকে নিয়ে ফেললেন বরাদ্দ ঘরটির সামনে। কোনো প্রয়োজন হলে জলদি নিচে নেমে আমাকে জানিও- এই বলে মুহূর্তেই আবার হাওয়া হয়ে গেলেন।

আমি কিছুটা সামলে নিয়ে ঘরের মসৃণ গালিচায় পা ফেলে বাঁ পাশের এক কোণে ছোট্ট এক কাঠের টেবিল আর তার সংলগ্ন গদিমোড়া একটি চেয়ার দেখতে পাই। ওক কাঠের সেই টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা ওভাল শেপের এক সিরামিকের থালার উপর পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা কয়েকটি আপেল আর পিচ ফল আবিষ্কার করে সেই মালিক ভদ্রলোকটিকে মনে মনে ধন্যবাদ না দিয়ে পারি না।

আপেলের পেটে কয়েকটি কামড় দেওয়ার পর বুঝতে পারি খিদের যে আগুন পাকস্থলীতে লেগেছে, শুধু এই আপেল দিয়ে তা নির্বাপণ করা দুঃসাধ্য। আর তা হবেই বা না কেন? স্কপিয়ে শহর থেকে এই অখ্রিদে আসতে সময় লেগেছে পাক্কা পাঁচ ঘণ্টার মতো। স্কপিয়ে শহর ছাড়াবার পরেই প্রতি বিশ কি ত্রিশ মাইল অন্তর আমাদের বাসটিকে থামতে হচ্ছিলো মাশুল ঘরের সামনে।

এ দেশে আজকাল চৈনিক মহাজনদের অর্থে বেশ কিছু পিচঢালা পথ তৈরি হয়েছে, কিন্তু সেসব ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্যে পর্যাপ্ত অর্থ সরকার বাহাদুরের আছে বলে মনে হয় না। তাই তো স্থানে স্থানে মাশুল ঘর বানিয়ে কিছুমিছু উপার্জনের ব্যবস্থা।

ওদিকে আবার এ পথেই আছে বেশ কিছু পাহাড়ি পথ, দু’লেনের সে পথে চাইলেও পাকা চালকের পক্ষে এক্সিলেটরে পা দাবানো সম্ভব নয়। আর তাই হেলেদুলে বেশ সময় নিয়েই বাসটিকে পাড়ি দিতে হয়েছে এই পুরোটা পথ। যদিও আমি তাতে যে বড় বেশি বিরক্ত তেমন নয়। ড্রাইভারের ঠিক পেছনেই আসন পাওয়ায় আমি বরং বেশ উপভোগ করছিলাম চারপাশটা। ও হ্যাঁ আরও একটি ব্যাপারের জন্য বোধহয় কিছুটা সময় অতিরিক্ত ব্যয় হলো পথে। ড্রাইভারের ঠিক পেছনের এক সারি আসনে দেখলাম বেশ কিছু পোটলা, প্রথমে মনে মনে ভাবছিলাম এতোসব পোটলা নিয়ে তিনি অখ্রিদ যাচ্ছেন কেন? তবে কি সে শহরেই তার নিবাস?

হয়তো স্কপিয়ে শহর থেকে সদাই পাতি করে এখন বাড়ি বয়ে নিয়ে চলেছেন সেসব। পরে বুঝলাম, না ঘটনা তেমন নয়। এ পথে শহর আর তেমন নেই, আর কাছেপিঠের বড় শহর বলতে ওই কেবল স্কপিয়ে। আর তাই মাঝপথের অনেক গ্রাম কি ছোট শহরের বাসিন্দারা স্কপিয়েবাসী তাদের আত্মীয়-পরিজনদের জানিয়ে রাখে হয়তো কিছু জিনিস কিনে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য এই ড্রাইভার মারফত, আর আমাদের এই বাস ড্রাইভার সেক্ষেত্রে কাজ করেন একজন ডাকহরকরার মতো।

পার্থক্য হয়তো একটাই, বাড়ি বয়ে জিনিস পৌঁছে না দিয়ে তিনি বিরান কোনো ফসলের মাঠের প্রান্তে কিংবা জনবিরল কোনো বাসস্ট্যান্ডে টুক করে বাসটি থামিয়ে পোটলাগুলো তুলে দেন প্রাপকের হাতে।

চলবে...
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।