মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এসময় আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
রবীন্দ্র একাডেমির সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল মহলানবীশ।
রবীন্দ্র সম্মাননা, রবীন্দ্রনাথের কর্মভিত্তিক পাঁচটি ভিন্ন বিষয়ে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাজানো হয়েছে এবারের উৎসব। সাথে উদ্বোধনী দিনে ‘রবীন্দ্র সম্মাননা’ দেওয়া হয়েছে দু’জন রবীন্দ্র গুণীজনকে। প্রতি দু’বছর পর পর প্রদত্ত এবারের সম্মাননা পেয়েছেন রবীন্দ্র গবেষণার জন্য ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতে অবদানের জন্য শিল্পী ফাহমিদা খাতুন।
আয়োজনে অতিথিরা ফাহমিদা খাতুনের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। অপরদিকে অসুস্থ থাকায় আহমদ রফিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
নৃত্যালোকের নৃত্যশিল্পীরা ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ ও ‘প্রাণ হরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ গানের সঙ্গে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন। রবীন্দ্র একাডেমির শিল্পীরা উদ্বোধনী সঙ্গীত হিসেবে গেয়ে শোনান ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’।
উৎসব উদ্বোধন করে আনিসুজ্জামান বলেন, রবীন্দ্রনাথের নিজের কাজের প্রতি অতৃপ্তি ছিলো। তবে তিনি বলতেন, বাঙালিকে তার গান গাইতে হবে, ছোটগল্প পড়তে হবে। তার সেই ভবিষ্যতবাণী অনেকটাই সত্য হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ পাঠের চেয়ে শোনা বেশি হয়। যদি পাঠাভ্যাস বাড়ে তাহলে বোঝা যাবে, তার রচনার মধ্যে কত মণিমুক্তা ছড়িয়ে আছে। তার সৃষ্টিশীল জীবন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে, সামনের দিকে চালিত করবে।
সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন নানা সমস্যা পেরিয়ে সঙ্গীতচর্চা করতে হতো। আজকের বাচ্চারা গান শেখার অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় প্রথম পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যনন্দনের শিল্পীরা। একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, স্বপন দত্ত, শামা রহমান, ছায়া কর্মকার, অনিমা রায় ও রুমা চক্রবর্তী। একক আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, সীমা ইসলাম ও মাহমুদা আখতার। একক নৃত্য পরিবেশন করেন অনিন্দিতা সাহা ঐশী ও কৃতিকা সাহা। শিশুকণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গল্প পাঠ করে শোনান অর্ণব, অনুভব, অর্পিতা, আনুশাহ ওয়াসিফ, জেবিন, রিমঝিম ও সারগাম।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় ‘রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনা’ বিষয়ক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। রবীন্দ্র একাডেমির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন অধ্যাপক শফিউল আলম ও অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম। সেমিনার শেষে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন অনামিকা ত্রিপুরা, শাকিল হাশমী ও বিনু মাহবুবা। আবৃত্তি করেন বেলায়েত হোসেন ও রূপা চক্রবর্তী।
সবশেষে ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ নাটকের মঞ্চায়ন। শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের পরিচালনায় নাটকটি মঞ্চস্থ করে বিবেকানন্দ নাট্যগোষ্ঠী।
বুধবার (২৮ নভেম্বর) উৎসবের দ্বিতীয় দিনে রয়েছে চারটি সেমিনার। এগুলো হলো- ‘রবীন্দ্র নাটক’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও ইংরেজি ভাষা: মূল রচনা’, ‘স্বকৃত অনুবাদ ও চিঠিপত্র’, ‘মানবতাবাদী-কর্মযোগী রবীন্দ্রনাথ ও পল্লী উন্নয়ন’ এবং ‘বিশ্বশান্তি ও রবীন্দ্রনাথ’।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৮
এইচএমএস/জেআইএম