ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

শওকত ওসমান জীবনে কখনও সততার বাইরে যাননি

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
শওকত ওসমান জীবনে কখনও সততার বাইরে যাননি ‘শওকত ওসমানের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস’ বিষয়ক সেমিনারে ছেলে ইয়াফেস ওসমান বক্তব্য রাখছেন

ঢাকা: বাংলাদেশের ঔপন্যাসিকদের মধ্যে প্রথম পথিকৃতের দাবিদার শওকত ওসমান। তিনি জীবনকে যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন, উপলব্ধি করেছেন, তারই বাস্তব রূপায়ণ তার কথাসাহিত্য। অমর এ কথাসাহিত্যিকে নিয়েই বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হলো ‘শওকত ওসমানের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস’ বিষয়ক সেমিনার।

বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনা করেন কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক।

মূল প্রবন্ধে ড. আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, শওকত ওসমানের স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতা-উত্তর উপন্যাসগুলোকে যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখা যায় যে, তিনি তার উপন্যাসগুলোতে বাংলাদেশের নিরন্ন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া, সমকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার ঘটনা, সমাজের বাস্তব করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন সর্বাগ্রে।  

প্রাবন্ধিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শওকত ওসমান চারটি উপন্যাস রচনা করেন। জাহান্নাম হইতে বিদায় (১৯৭১) শওকত ওসমানের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক উপন্যাস। এ উপন্যাসের পটভূমিতে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন একটা অস্বস্তিকর ভীতিকর পরিবেশ তুলে ধরা হয়। আমার মনে হয় এটি এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী রয়ে গেছে প্রথম রচনা হিসেবে। দুই সৈনিক (১৯৭৩) শওকত ওসমানের আরেকটি উপন্যাস। একটি গ্রামের পটভূমিতে লেখা, যা দ্বন্দ্বাত্মক জীবনের ছায়াচিত্র উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দেয় গ্রামে। জলাঙ্গী'র (১৯৭৪) পটভূমি, বাঁকাজোল গ্রামের বর্বরতা। নেকড়ে অরণ্য (১৯৭৪) উপন্যাসে পাকিস্তানি নেকড়েদের নির্যাতনের একটি অংশের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয় উপন্যাস।

আলোচক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় শওকত ওসমান গোলাবারুদ বা রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করেননি, কিন্তু যুদ্ধের পক্ষে তার পূর্ণ সমর্থন ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি নিয়মিত কবিতা ও কথিকা পাঠ করতেন। এগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে তেমনি তাদের মনোবল করেছে নিবিষ্ট। তিনি তার উপন্যাসগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা আমাদের স্থবির করে দেয়। শওকত ওসমানের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসের মতো এতো সমৃদ্ধ উপন্যাস এখন আর পাওয়া যায় না।

অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, শওকত ওসমান ছিলেন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন বাস্তববাদী লেখক। সেজন্যই তিনি চিত্রায়িত করতে পেরেছেন মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসগুলোকে সফল ও সুচারুভাবে। শওকত ওসমান শুধু সাহিত্যের জন্য সাহিত্যচর্চা করেননি, দেশের প্রতি দায়বোধ থেকেই তিনি কলম ধরেছিলেন মানুষের জন্য। তার কলমে যেমন জর্জরিত হয়েছে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী, তেমনি শোষিতরা দেখেছে নিজের অধিকার পাওয়ার পথ।

প্রধান অতিথি স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, শওকত ওসমান পারিবারিক জীবনে কখনও সততার বাইরে যাননি। আর সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে তার মূল বিষয় ছিল সাধারণ মানুষ। এর কারণ, তিনি নিজেও জন্মেছিলেন দরিদ্র পরিবারে। তাই সাহিত্যের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের সেই জীবন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। তার রাজনৈতিক বোধ ও চেতনা অনেক বেশি ছিল। সংসার জীবনের বন্ধনের কারণেই হয়তো তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হননি।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad