বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজু আলাউদ্দিনকে নিয়ে ‘কবির কবিতা পাঠ’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠান হয়ে গেলো রাজধানীর কাঁটাবনের বইঘর দীপনপুরে। এতে এককভাবে নিজের কবিতা পাঠ করেন রাজু আলাউদ্দিন।
অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন গালুমগিরি সংঘের সমন্বয়ক কবি শিমুল সালাহ্উদ্দিন। অনুষ্ঠানের প্রচার সহযোগী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ আয়োজনটি সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল সিটি ব্যাংক।
এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই এক আলাপনে রাজু আলাউদ্দিন বলেন, আমি লেখক হিসেবে উপেক্ষিত। তবে এ নিয়ে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। লেখালেখির বিষয়টি নিভৃতযাপন। তার মানে এ নয় যে, পাঠকের কাছে যেতে চাই না।
নিজের লেখার সূত্রপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লেখার জন্য আমাকে কেউ দিব্যি দেয়নি। অন্য যে কোনো বিষয়ের চেয়ে লেখালেখির বিষয়টি ভালো বুঝি বলেই এটা করছি। মূলত লিখে আমি নির্ভার থাকি। মনের মধ্যে যে অনুভূতি আছে, তা লিখে নির্ভার হই। এটা স্বার্থজনিত বিষয়। মূলত পাঠ্যাভাসের কারণেই এক পর্যায়ে আমি লেখালেখি শুরু করি। এর মধ্যে কোনো নাটকীয়তা নেই।
অনুষ্ঠানে কবির কবিতা প্রসঙ্গে আফসান চৌধুরী বলেন, রাজু আলাউদ্দিন আমার সহকর্মী। এভাবেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। এরপর তার কবিতার সঙ্গে পরিচয়। তার কবিতা পড়ে আমার মনে হয়েছে, সে খুব প্রেমিক মানুষ। সেই প্রেম তার কবিতায় থাকে। আমার মতে, প্রেম তার কবিতা ‘খেয়ে’ ফেলেছে।
অধ্যাপক আবদুল সেলিম বলেন, আমার মতে, রাজু আলাউদ্দিন কবিতার প্রেমে পড়েছেন। আর তা যে কোনো নারীর প্রেমে পড়ার চেয়েও আর্কষণীয়। রাজু তার কবিতায় রাজনীতি আনতে চায় কিনা জানি না। প্রেম ছাড়া কবিতা লেখা সম্ভব নয়। এমনকি সাহিত্য সৃষ্টি করাও অসম্ভব। এর উদাহরণ হলো রাজুর লেখা ‘নিখিল মঞ্জুরি’ কবিতাটি।
‘এছাড়া ন্যানো কবিতা রাজু ছাড়া আর কেউ লিখেছে কিনা আমার জানা নেই। আমি প্রথম রাজুর লেখা ন্যানো কবিতাই পড়েছি। এটা দারুণ। আমি জানি না, সে এখনও লেখে কিনা । তবে আমি আশা করবো, সে ন্যানো কবিতা লেখা চালিয়ে যাবে। ’
রাজু আলাউদ্দিনের সামগ্রিক সাহিত্যকীর্তি নিয়ে রিফাত মুনিম বলেন, আবেগের চেয়ে তার লেখায় বেশি আছে সাহস। তার কবিতা পড়ে এমনটাই মনে হয়েছে। তার কবিতার ভাষার ব্যবহারে বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া রয়েছে।
এরপর অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় রাজু আলাউদ্দিন প্রসঙ্গে কবি তুষার দাশ বলেন, তার কবিতায় নিজস্ব মহাদেশ আবিষ্কার করে যাচ্ছে। তিনি উপেক্ষিত হলেও কিছু আসে-যায় না। বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্যে অনেকেই উপেক্ষা পেয়ে এসেছেন। এটা নিয়ে বেদনাহত হলে হবে না। গদ্যের পাশাপাশি তাকে আরও কবিতা লিখতে হবে। তবে প্রেমের কবিতা আরও কম লিখলে ভালো হয়।
কবি মাজুল হাসান বলেন, রাজু আলাউদ্দিনের একটি জিনিস অন্য সবার চেয়ে আলাদা, তিনি ব্যাপকভাবে দর্শনদ্বারা তাড়িত। তা কবিতার কাব্যময়তার মাধ্যমে এগিয়ে যায়। এটি তাকে সফল করে ও বিপন্ন করে। এবং তিনি সেটা সচেতনভাবেই বয়ে নিয়ে যান।
এর আগে সূচনা বক্তব্যে শিমুল সালাহ্উদ্দিন বলেন, ২০০৫ সালে প্রথম গালুমগিরি সংঘের আয়োজনে ‘কবির কবিতা পাঠ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে তিনজন কবি এতে অংশ নেন। এর পর ২০১২ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের আয়োজনে দশ জন কবি অংশ নেন। তৃতীয় পর্যায়েও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে দশ জন কবিকে উপস্থাপন করা।
অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন- রাজু আলাউদ্দিনের স্ত্রী মারিসল রোজা গনজালেজ, দুই সন্তান নিজার আলাউদ্দিন ও মায়া আলাউদ্দিন, পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক দীপেন ভট্টাচার্য, কবি শোয়াইব জিবরান, চলচ্চিত্রকার রেজা ঘটক. অনুবাদক আনিসুজ্জামান, পেন্ডুলাম প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার রুম্মান প্রমুখ।
এর আগে ‘কবির কবিতা পাঠ’র প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে কবিতা পড়েছেন যথাক্রমে কবি শুভাশিস সিনহা, রায়হান রাইন, মাসুদ খান, জুয়েল মাজহার, আলফ্রেড খোকন, চঞ্চল আশরাফ, কাজল শাহনেওয়াজ, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, শামীম আজাদ, শামসেত তাবরেজী ও ফরিদ কবির।
কবিদের কবিতা নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেছেন নওশাদ জামিল, পিয়াস মজিদ, সুমন সাজ্জাদ, শোয়াইব জিবরান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাখাওয়াত টিপু, আজফার হোসেন, সোহেল হাসান গালিব, আব্দুন নূর তুষার, বিবি রাসেল, সলিমুল্লাহ খান, খালেদ হামিদী, খান রুহুল রুবেল প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০
ডিএন/এইচজে