বইটি প্রকাশ করেছে বইকণ্ঠ। একমাত্র পরিবেশক নওরোজ কিতাবিস্তান।
বইটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে প্রকাশক সূত্রে জানায়, পূর্ববঙ্গে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন- ১৯৫০ প্রণয়নের পর বহু জমি খাস হিসেবে চিহ্নিত হয়। তৎকালীন যশোহর জেলার চতুর্থ মহকুমা সাতক্ষীরার দেবহাটা ও কালীগঞ্জ অঞ্চলও এর ব্যতিক্রম ছিল না। বাবুরাবাদ, ঢেবুখালি, নোড়ার চারকুনি, কামিনীবসু, কালাবাড়িয়া, কাঠমহল, ভাংগানমারী ও ঝায়ামারী এলাকায় চিহ্নিত হয় ৩ হাজার ১৭৮ একর খাস জমি।
এরপর ১৯৫৫ সালে গঠিত হয় দেবীশহর এগ্রি অ্যান্ড ফিস ফার্মিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড সংক্ষেপে দেবীশহর সমবায় সমিতি। এই সমিতির নামে ওই খাস জমি মূল মালিক অনীল স্বর্ণকার ভোগদখল করতে থাকেন। পরে সরকারের সঙ্গে শুরু হয় মামলা। ইতোমধ্যে অনীল স্বর্ণকার ষড়যন্ত্রমূলক খুনের শিকার হলে সমিতির হাল ধরেন কর্মচারী মণি ঠাকুর। এই মণি ঠাকুর গংরাই ভূমিহীনদের বঞ্চিত করতে চাষযোগ্য কৃষিজমির স্থলে বিশেষ ‘জলমহল’ ঘোষণা করিয়ে ভোগ-দখলের রাজত্ব কায়েমে কখনো সফল কখনো ব্যর্থ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ফলে জেল-জুলুম, অমানুষিক অত্যাচার-নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, পাশবিকতাসহ নানাবিধ বিপর্যয়ই যেন হয়ে পড়ে ভূমিহীনদের জীবনের নিত্য-অনুষঙ্গ।
কালের নিষ্ঠুর চক্রাবর্তে অবশেষে ১৯৯৮ সালে ১২ শ’ ভূমিহীন পরিবারের ওপর নেমে আসে এক মর্মন্তুদ কালরাত্রি। সে সময় প্রতিরোধ সংগ্রামে সম্মুখভাগে চলে আসেন জায়েদা খাতুন নামের এক নারী। ২৭ জুলাই পুলিশের বর্বর বুলেটের সামনে বুক পেতে দেন জায়েদা। সাথে আরও দুই নিষ্পাপ শিশুসহ শহীদ হন তিনি।
ভূমিহীন জায়েদাদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, স্বপ্ন-সংগ্রাম ও আশা-আকাঙ্ক্ষার বিবিধ বয়ান নিয়ে গাজী আজিজুর রহমান সাতক্ষীরার আঞ্চলিক ভাষায় নির্মাণ করেছেন উপন্যাস ‘জায়েদামঙ্গল’। পাঠক এর পরতে পরতে নবরূপে আবিষ্কার করবেন সুবিধাবঞ্চিত ওই জনপদের রোমাঞ্চকর, দুঃসহ, অন্ধকারাছন্ন করুণ কাহিনী।
প্রকাশকের ভাষ্যে, গাজী আজিজুর রহমানের লেখার একটি ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ করে তার মৃত্যু, আত্মহত্যা এবং কবিতাবিষয়ক লেখাগুলো পাঠককে প্রশ্নমুখী করে তোলে। বিশ্বসাহিত্য, ইতিহাস, আধুনিকতা তার প্রিয় লেখালেখির বিষয়।
আজিজুর রহমানের প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে আছে প্রবন্ধ-গবেষণা- বাংলার দ্বিতীয় রেনেসাঁ (২০১৮), স্বদেশ ভাবনা ও বঙ্গবন্ধু (২০১৭), সাহিত্যে সমাজবাস্তবতার ধারা (১৯৯২ ও ২০১৪), স্বেচ্ছামৃত্যুর করতলে কবি (১৯৯৬ ও ২০১৫), কালীগঞ্জের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ (২০১৪), সাহিত্য ও সিংহাসন (১৯৯৯), আধুনিক বাংলা উপন্যাসের বিষয় ও শিল্পরূপ (২০০৯), সাতক্ষীরার ভাষা ও শব্দকোষ (২০০৪), নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের শতবর্ষ (২০০১)। আছে সম্পাদনা গ্রন্থ- মরণরে তুহু মম (২০০৪) ও খান আনসার উদ্দীন আহমেদ রচনাবলী (১৯৯৯)। উপন্যাস- বজ্রের বাঁশি (১৯৮৯), যোদ্ধার জতুগৃহ (১৯৯১) ও শামুক (১৯৯৬)। নাটক: সক্রেটিস (১৯৯৩), চন্দ্রাবতী (১৯৯৬), কালো সূর্যের নিচে (১৯৯১) ও অভাজন (১৯৯৯)।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গাজী আজিজুর পেয়েছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (১৯৯৫), শিমুল-পলাশ সাহিত্য পুরস্কার (কলকাতা ২০০৪), বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র পুরস্কার (২০০৭), সিকানদার আবু জাফর পদক (২০১২), কবি সুকান্ত পুরস্কার (কলকাতা ২০১৫)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নদী নামের একটি সাহিত্যপত্র সম্পাদনা করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০
এইচজে