স্বীকারোক্তি
রক্তচাপ আর কলেস্টরেল আতঙ্কই বলে দেয়
যৌবন আমাকে ছেড়ে গেছে। দিনগুলো
এখন আগের চেয়ে ক্লান্ত
রাতগুলো খুব একঘেয়ে।
তারুণ্যে কি প্রাতঃভ্রমণ অভ্যাসে ছিল,
কখনো কি জানালার গ্রিল
ধরে দেখেছি শহরের শোভা? নাকি
আবহাওয়াবিদের পূর্বাভাসে
শুনেছি কখনো আগামীকালের দুর্যোগের কথা?
এইসব বারবার বলে দেয়
যৌবন আমাকে ছেড়ে গেছে।
আর তুমিও আমার সাথে
চমৎকার মানিয়ে নিয়েছো। তোমার চিরোল হাসি
অগ্রহায়ণের সন্ধ্যার মতোই শান্ত চিরকাল।
বাইশে ভেবেছি আমাদের প্রেম
জলপ্রপাতের মতো, কিন্তু
সুবর্ণ জয়ন্তী পরে আজ কখনো জানতে ইচ্ছা করে
সময়ের জালে আমরা কতটা বাঁধা? সকালের
এক কাপ চা আর বাটার ফ্রি টোস্ট বলে দেয়
যৌবন আমাকে ছেড়ে গেছে।
আজকাল আমি জেনেশুনেই তোমাকে ছুঁই,
এও বুঝি, আমরা চিরযৌবনা নই।
এবং কোনও না কোনভাবে
একে অপরকে বাঁচতে সাহায্য করি;
আর এও জানি, কোনও না
কোনভাবে সাহায্য করবো... মরতেও।
বসতভিটা
আজ আর ঘুম আসে না।
সারা দেহে ক্লান্তি ভরা
কিন্তু ঘুম আসে না।
সারারাত কথা বলি আমি,
আমার নিজের সাথে
সেই ছোটবেলাকার সাথে
চিরকাল যারা পালিয়েছে ভয়ে... সেইসব
ঝিঁঝিঁ পোকা, হাওয়ায় ওড়া ফড়িঙের সাথে
আমার সম্মুখে যার মাথা চিরকাল নত ছিল
তারও সাথে।
সেই পিঁপড়েটা যে বহুবার ভেসে গেছে এক ফোঁটা
শিশিরের ভারে
সেই জ্যোৎস্নাটুকু যে ফিরে গেছে অভিমানে,
কথা বলি তার সাথে...
সারা দেহে ক্লান্তি ভরা...
কিন্তু ঘুম আসে না;
আর একটা দস্তখত
একটা মাত্র সই
একটি স্বাক্ষরে সাত পুরুষের রক্ত, ঘাম
পর হয়ে যাবে; ওই আম গাছ,
গোয়ালের গরু আমাকে আর চিনবে না
লাউ ফুল, কাঁঠালের ছায়া আমাকে চিনবে না, উঠানে
ঘুমানো কুকুর ওর মায়াবী চোখ তুলে
তাকাবে না কোনোদিন।
ফের যদি ফিরে আসি রোদ পোহা কোনো গোধূলিতে
ভীরু বুকে কড়া নাড়ি দরোজায়,
খুব কৌতূহলে
চোখের পলক ফেলে
জানতে চাইবে কেউ, ‘কাকে চাই’?
আমি কি সেদিন বলতে পারব... ‘এই ঘর আমার ছিল,
ছিল মাথার উপরে মা’র ছবি,
পাশে রবীন্দ্রনাথ;
আমি কি সেদিন বলতে পারব,
বাড়ির পেছনে
বকুল তলায়
বুবুর সাথে বসে লুডু খেলবার কথা;
পাড়ার ভাবিরা এসে
কতবার জেনে গেছে ‘কেমন আছিস তুই। শোন...
তুইও আবার বিদেশ-টিদেশ চলে যাস নে যেন’।
আমি জানি, ফিরতে না ফিরতেই মা জিগ্যেস করবে,
লাউ গাছটায় কি আগের মতোই লাউ ধরেছে রে?
মতিকে বলেছিস, শসাগাছে একটু কম পানি দিতে;
কবুতরগুলো ঠিকঠাক আছে তো, নতুন কোনো ডিম এসেছে?
তোর বাবার কবরটা...
তুই দেখ বাবা, আর একটু ভেবে দেখ;
এবার আমরা প্যারিস না গিয়ে না হয় দেশের বাড়িতে যাই...
দেখিস, ভালোই লাগবে তোর
ভোরবেলা ঝরা বকুলের অমন স্নিগ্ধ ঘ্রাণ
রালফ লরেন, কেলভিন ক্লাইন
পেরেছে দিতে?
বাড়িটার কথা ভেবে ভেবে কথা বলি নিজের সাথে।
সারা দেহে ক্লান্তি ভরা
কিন্তু ঘুম আসে না।
চাঁদটাও হেলে গেছে প্রায় দূরের পশ্চিমে...
সকলে উঠবার আগে ঘুম থেকে উঠি,
শীতের শিশির পায়ে মেখে
খুব একরোখা
হন হন করে সারা মাঠ হেঁটে দরোজায়
কড়া নাড়ি, বলি,
‘এ বাড়ি বিক্রি হবে না তারাপদ’...
আমরা কিছুক্ষণ মুখোমুখি,
চোখাচোখি,
নির্বাক...
আমার ভেতরে আস্তে আস্তে জেগে উঠি আমি,
তার পিঠে হাত রাখি, বলি, ‘তারাপদ...
জন্মভূমিকে
কোন দামে বেচা যায়’?
বুকটা হঠাৎ হালকা হালকা লাগে, বাতাবি লেবুর
পাতাগুলো বহুদিনের অভিমান ভেঙে ফের
খুশবু ছড়ায়। আমি
মুহূর্তেই ফিরে যাই আমার শৈশবে, উঠান পেরিয়ে
এ ঘর ও ঘর ছুটি, আর
মা আমার পেছন পেছন কী গভীর সংশয়ে
চিৎকার করে ডাকছে, খোকা,
তুই ওদিকে যাসনে...
গরিবের ঘরবাড়ি
গরিবের ঘরবাড়ি নগরের স্নিগ্ধ
শোভা কেড়ে নেয় কারণ ওদের
বিছানা বালিশ নাই
চেয়ার টেবিল বাসন কোসন এমনকি
নিজেদের দেখবার আয়নাও নাই
গরিবেরা শুয়ে থাকে হাতের উপর মাথা রেখে
ঘাস ও কংক্রিটে পিঠ রেখে
মাঝে মাঝে নিজেদের মুখ দেখে থেমে থাকা জলে
প্রকৃতির ডাকে গরিবেরা প্রকৃতি দূষণ করে
নষ্ট করে জলের স্বচ্ছতা
গরিবের ঘরবাড়ি গরিবের মতো
বৃষ্টি এলে ভিজে যায়
ঝড় এলে উড়ে যায়
ঘুমহীন...
মহলে মহলে ধনীদের কী ভীষণ মাথাব্যথা, কিন্তু
চোখ বুঁজলেই গরিবের ঘুম আসে আর যখন ঘুমায়
মাথার উপরে
দোয়েল কোকিল সারাক্ষণ সুমধুর গান গায়...
লি শেন
সেপ্টেম্বর। সবার পেছনে বসা বারো বছরের
লি শেন রাতের পাড়াগাঁর মতো শান্ত।
মুঠি বাঁধা দু’হাতে বানায় নিখুঁত ত্রিভুজ। পাখির ছানার
মতো আধফোটা চোখ, ধানি রং চুল
যেন ঝড়ের তা-বে নুয়ে গেছে; তবু কেউ শির
দাঁড়া, প্রতিবাদী।
লি হোমওয়ার্ক করে,
যত্নে রাখে খাতা বই,
সে রচনা লেখে ভালো, প্রায়
শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি বলে; ইঁদুরের মতো
চুপচাপ রোজ ক্লাসে ঢোকে,
আটটা চল্লিশে।
এপ্রিলের শেষে নতুন পাতার দোল। সকালের
রোদ বাড়ে তার রংধনু গালে।
বৈশাখী হাওয়ায় এলোমেলো
নিজেকে হারায়। গতকাল লাঞ্চরুমে নিয়ম ভাঙায় তার
শাস্তি হয়। অংকের শিক্ষক মিস উরুতিয়া তার
প্রতি ক্ষুব্ধ। আমার ইংরেজি ক্লাসে,
ক্লাস-পালানো মেরির সাথে ফিসফাস করে।
আমি পাহাড়ের মতো তার সামনে দাঁড়াই, বলি,
পড়ায় তোমার মন নেই। আজ তোমার আব্বাকে
কল করা হবে। ওয়ান্টন
স্যুপের মতোই তাকে বিষণ্ন দেখায়।
আমি বলি, তিনি কি অফিসে?
তিনি নেই।
তবে তোমার মা?
সে আমার রক্তচোখে চোখ রেখে নরম শিশুর মতো বলে,
ভিয়েতনামে।
আয়লান কুর্দি
চরমপন্থি সংগঠন ইসলামিক স্টেট গত বছর সিরিয়ার কোবানি শহর দখল নেয়। সহিংসতা থেকে বাঁচতে পরিবারসহ তুরস্কে পালিয়ে আসেন আবদুল্লাহ। এবং তুরস্ক থেকে গ্রিসের কোস দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন। পথে নৌকা ডুবে গেলে তার ছেলে আয়লানসহ পরিবারের সবাই মারা যান। সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৫, তুরস্কের বোদরাম উপকূলে ভেসে আসা আয়লানের মৃতদেহের ছবি খবরের কাগজে দেখে এই কবিতা...
আয়লান রাষ্ট্রনীতি পড়ে নাই
দেশে দেশে কূট-নীতি,
কাঁটাতার
সীমান্তের সীমারেখা জানা নাই তার।
আয়লান জানে না কার্ল মার্কস কী বলেছেন
লাকাঁর না বোঝা তত্ত্বগুলো বুঝবার
বৃথা কসরৎ করে, সাধ্যে নেই তাও।
আয়লান জানে না দামেস্কে আসাদের কী কাজ।
তিন বছরের অবুঝ বালক আয়লান।
ওর ভালোলাগে জন্মভূমি কোবানি শহর,
খেজুর পাতার ভাঙা ভাঙা ছায়া
খোলামেলা খেলবার মাঠ
শুকনো ডালে বসে থাকা মুগ্ধ পাখির চাহনি,
ওর ভালোলাগে মা’র বুকে মাথা রেখে সবকিছু ভুলে যাওয়া...
মাঝে মাঝে বিধিও ভালোবাসে নিষ্ঠুর...
ভাঙচুর,
আর বুঝি তাই
উথাল পাথাল ঢেউয়ের কাছে হেরে গেলো আয়লান।
ওর লাল জামা
নীল প্যান্ট
ওয়শিংটনে, মস্কোতে, প্যারিসে আর্কাইভ হয়ে গেলো।
ঢেউয়ের পরে ঢেউ,
মাইল মাইল অন্ধকার, কোন
দুঃখ-ভয়
ঘুম ভাঙাতে পারেনি তার...
ভূমধ্যসাগর তীরে, একা
শুয়ে আছে আয়লান;
ছোট ছোট ঢেউ
জ্যোৎস্না ভরা রাত
খেলা করে তার সাথে।
সাগর দেবতা নেপচুন, পসিডন... শোকে দুঃখে
চোখ মোছে,
ঈশ্বরও কাঁদলেন কিছুক্ষণ।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে এভাবেই মরে প্রজা সব
এভাবেই উবু হয়ে থাকে মানুষের মুখ।
আজও, কোন কোন ভোরে,
একা শুয়ে থাকে আয়লান...
ছোট ছোট ঢেউ
জ্যোৎস্না ভরা রাত
আর শোকের হাওয়ায় ভিজে যায় তার
লাল জামা
নীল প্যান্ট
কালো চুল।
বিকেল হাওয়ায় যদি ফের আসে কেউ,
কড়া নাড়ে দরোজায়
কতো দুঃখে বলবেন পিতা তার,
আয়লান
খেলবে না আর...
কোনদিন
কারও সাথে...
আমেরিকা
যেদিন প্রথম একজন শেতাঙ্গ আমার দিকে
অনেকক্ষণ তাকিয়ে
ভ্রূ-কুচকে জানতে চাইলো,
ইংরেজি লিটারেচার ক্লাসে সবাইকে পেছনে ফেলে কী করে আমি
প্রথম হলাম, আমি তাকে
কবিতার প্রতি আমার আজম্ম ভালোবাসার কথা বলেছিলাম।
দূর অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে হয়তো আমার কথাই ভাবছিল সে,
ভাবছিল
আমার কালো হাত
বারান্দার টবে ঝুলে থাকা ফুল থেকে
কটন ফিল্ড কিম্বা তামাক ক্ষেতে আমার ঘর্মাক্ত কালো পিঠ বেয়ে গড়িয়ে পড়া
ফোটা ফোটা ঘাম থেকে
কিম্বা
খাবার টেবিল গোছাতে গোছাতে গুন গুন করে ওঠা ঈশ্বর বন্দনা
ছড়িয়ে দিচ্ছে।
আমেরিকা, দাস-দাসী কিনে-বেচে তোমার মুনাফা একেবারে কম হয়নি,
তোমার গা ঘেঁষে, কাছে কাছে থেকে বুঝেছি, এখনো
আমি তোমাদের কাছে সম্পূর্ণ মানুষ নই, কারণ
ইচ্ছা করলেই তুমি আমাকে গাছে ঝুলিয়ে মারতে পারো,
প্রকাশ্যে
শহরের প্রধান সড়কে
হত্যাও করতে পারো।
জে-ওয়াকের জন্য হাতকড়া পরিয়ে জেলহাজতে আটকে রাখতে পারো,
এমনকি ওদের চোখে চোখে তাকালেও… কেউ
তোমাকে কিচ্ছুটি বলবে না। কিন্তু...
আমি তোমার চরনে ঝরা বকুলের গন্ধ ছড়াতে আসিনি
তোমার গুদাম খালি করা মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্যও চাইতে আসিনি;
আজ আমি
কবিতার সমস্ত সৌন্দর্য উপেক্ষা করে
একদম
সরাসরি বলছি…
আমেরিকা, জর্জ ফ্লয়েডকে তুমি হত্যা করেছো।
যেভাবে পলাশীর প্রান্তরে সিরাজের সৈন্যরা নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল
ঠিক সেরকম বৃষ্টিভেজা দোয়েলের মতো চুপচাপ ওরা দাঁড়িয়ে ছিল;
আমরা দেখেছি।
তোমার গোয়েন্দা বিভাগ দেখেছে
সাকিরা, বিয়োন্সে গা ঝমঝম করা নাচ থামিয়ে দেখেছে এই দৃশ্য,
আটলান্টিকের ওপারে ষাটোর্ধ্ব রমনী প্রিয় নাতনিকে বেবি সিটিং
করতে করতে দেখেছে এই দৃশ্য
আফ্রিকার কালো মানুষেরা পূর্বপুরুষের কথা মনে করে আরও একবার কেঁদে উঠেছিল।
দক্ষিণ এশিয়ায় আঠারো কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ তার
আটষট্টি হাজার গ্রামও দেখেছে এই দৃশ্য
এর আগেও তুমি হত্যা করেছ
আমদু দিয়ালোকে
এরিক গার্নারকে;
তোমার বুলেটে করাতে কাটা গাছের মতো নেতিয়ে পড়েছে
ম্যালকম এক্স;
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।
জর্জ ফ্লয়েড যিশু খ্রিস্টের হৃদয় নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল কি-না
জানা নেই; কিন্তু
আমার সীমানা পার হয়ে যে পাখি উড়ে গেছে তার বিরুদ্ধে কি
মামলা করবো আমি?
আমার ঘরের পেছনে এক জোড়া গাঁদা ফুল ফুটে আছে, আমি
কি ওদের উকিল নোটিশ পাঠাবো?
আমেরিকা, চোখ মেলে দ্যাখো, শহরে শহরে কার্ফু আজ
লন্ডন প্যারিসে, বেলজিয়াম আর ব্রাজিলে … চাপা উত্তেজনা
ঘাটের কুলি, ছাত্র শিক্ষক, ফুল বিক্রেতা
শাদা-কালো,
এশিয়ান
ও
লাতিনো
অলবেনী, আটলান্টা আর মিনিয়াপোলিসের মেইন স্ট্রিটে, দেয়ালে দেয়ালে লেখে দিয়েছে ওরা
ব্লাক লাইভস ম্যাটার।
পথে পথে, বুলহর্নে
কলেজছাত্রীর মচমচা আওয়াজ,
ইস্ট রিভারের কালো জলগুলো তার গভীর তলদেশে জটলা পাকায়,
ব্লাক লাইভস ম্যাটার।
তুমি যাকে গ্র্যাফিটি বলো ওগুলো আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়।
আমেরিকা, সেমিনার সিম্পোজিয়ামে মানবিক প্রশ্নে প্রায়শ লজ্জিত তুমি;
আবার বাইবেল হাতে চার্চের সামনে দাঁড়িয়েও তুমি!
কী এক অদ্ভূত খেলা খেলে যাও তুমি!
নিউইয়র্ক টাইমস এর একজন জবরদস্ত সমালোচক
টনি মরিসনকে জিগ্যেস করেছিলেন,
তুমি কেন শাদাদের নিয়ে কিছু লেখো না? আমি জানি তুমি জানো,
টনি মরিসন কী বলেছিলেন।
মুষ্টিযোদ্ধা আলী ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাননি কেন?
এও তুমি জানো।
আজকাল মাকে স্বপ্নে দেখি,
বাবাকেও।
একটা কাক প্রায়শ আমার জানালায় উঁকি দেয়।
আমার গায়ের রং আমাকে ভয় দেখায়; কী এক
সংশয়ে শঙ্কিত থাকি আমি;
আমার সন্তানও কী কারো বুটের তলায় পিস্ট হতে হতে চিৎকার
করে ডাকবে আমাকে
আই ক্যানট্ ব্রিদ ড্যাডি,
প্লিজ
হেল্প মি…
তুই আয়
চায়া দ্যাখ, বস্তা বস্তা চাল
রোপা ধান যেন সারি সারি
দ্যাখ, ঐ কুশার সইর্ষা কালাই ক্ষেত
যদি পারোস চক্ষের সীমানা ছাড়ায়া
যা, আরো দুই গাঁ। আকাশের
রইদ, পাখির উড়াল, বাতাশ শন্শন্ নোয়াইয়া যায়
মাথা আমার জমিন দিয়া। তুই কি-না
উপাস পারোস। বেঁকা আঙ্গুলের লাহান ঘুমাস
ইস্টিশনে। পিন্দনে জালি কাপড়, বেআব্রু
তুই, জনে জনে মধু খায় চক্ষু দিয়া।
জমানা খারাপ। বিষ্টি যেইদিক ছাতা
ধরা চাই হেইদিক; জঙলার পশুপক্ষী জানে এই রীতি।
শত হোক তুই পড়শি আমাগো,
তর অমাবশ্যা মুখে চাই শরমের হাসি।
আমি কই, এট্টু নরম হ্
তোর ভিতরের পাথর গলায়া তুই আয়। বাতাসের মিহি
সুখ, বাঁশঝাড়ের আন্ধার ফাঁকি দিয়া দলছুট
তারার লাহান তুই আয়। রাইতের
পেঁচা, নদীর বৈতাল স্রোত, হরিণ শিকারি চক্ষু,
রাতজাগা মায়ে পোলার মুখের দিক
চাইয়া যখন স্বপ্ন দ্যাখে, সেইক্ষণে, তুই আয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২০
টিএ